তথ্য গোপনের দায়ে আদালতে মামলা দায়ের – বিধি বর্হিভূত ভাবে বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন ও সহশিক্ষার অনুমোদন লাভ
শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের আলহাজ ময়জান বিবি নিন্ম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের তথ্য গোপন রেখে, বিধি বর্হিভূত ভাবে সহ-শিক্ষা ও বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন অনুমোদন এনেছে ওই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আনুমানিক ৫০গজ দূরে অবস্থিত আয়নাপুর উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঝিনাইগাতীর সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় এক চাঞ্চল্যকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে পরিদর্শনে ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৯৫ সালে আয়নাপুর বাজার সংলগ্ন ১০০ গজ সীমানার মধ্যে একটি দাখিল মাদ্রাসা ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থাকার সত্বেও আশ-পাশ এলাকার মেয়েদের লেখা পড়ার সুবিধার্থে এলাকাবাসী, তৎসময়ে আয়নাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কমিটির লিখিত অনুমতি নিয়ে এবং শিক্ষা বোর্ডের নির্ধাারিত শর্ত শীথিল করে উক্ত বিদ্যালয়ের প্রায় ৫০ গজ দূরত্বে গড়ে তোলা হয় আলহাজ ময়জান বিবি নিন্ম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়। উক্ত বিদ্যালয়টি গড়ে তোলার পর থেকেই যথাযথ ভাবে পরিচালিত হয়ে আসলেও উক্ত বিদ্যালয়ের সুচতুর প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহাদৎ হোসেন জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসের কোনরুপ পরিদর্শন অথবা প্রতিবেদন ছাড়াই প্রকৃত তথ্য গোপন রেখে সরাসরি মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কতিপয় কর্মকর্তাদের সাথে যোগশাজসে সঠিক তথ্যাদি ছাড়াই প্রতিবেদন তৈরী করে উক্ত বিদ্যালয়কে কম্বাইন্ড স্কুল রুপে অনুমোদনের জন্য ফাইল প্রস্তুত করে ।
উক্ত প্রতিবেদনের আলোকে গত ১১/১২/২০১৩ইং তারিখের ১৬৮/নতুন/শের-০৬৫৭ নং স্মারক মূলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের আদেশ ক্রমে বিদ্যালয়ের পরিদর্শক শাহেদুল খবির চৌধুরীর স্বাক্ষরিত পত্রে উক্ত বিদ্যালয়ে ০১/০১/২০১৪ইং তারিখ থেকে সহশিক্ষা চালু ও নাম পরিবর্তনের অনুমোদন প্রদান করেন। তবে একই পত্রে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়, “ভবিষ্যতে সহশিক্ষা চালু করণ বিষয়ে কোন প্রকার অভিযোগ/আপত্তি উত্থাপিত হলে এ আদেশ বাতিল করা হবে।” কিন্তু অত্র বিদ্যালয় সহশিক্ষার অনুমোদন বিগত প্রায় ১ বছর পূর্বে পেলেও অদ্যবধি পর্যন্ত ওই বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ,৭ম ও ৮ম শ্রেনীতে কোন ছেলে শিক্ষার্থী বাস্তবে নেই। এ যেন “কাজীর গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই” এমন অবস্থা। এর সত্যতা মেলে গত ২ ডিসেম্বর/১৪ মঙ্গলবার সকালে ওই বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা দিতে আসা মেয়ে শিক্ষার্থীদের দেখে এবং তারা অকপটে স্বীকারও করে যে, আমাদের বিদ্যালয়ে এখনও কোন সহশিক্ষা চালু হয়নি। তবে সদ্য সমাপ্ত হওয়া জেএসসি পরীক্ষায় যে ৭জন ছেলে পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহন করেছে, তাদের সবাইকে অন্য বিদ্যালয় থেকে সংগ্রহ করে আনা।
ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মচারী সহ খোদ প্রধান শিক্ষক শাহাদৎ হোসেন উপরোক্ত বিষয় গুলো স্বীকার করেন এবং বলেন,“ নাম পরিবর্তন ও সহশিক্ষা অনুমতি পত্রটি ১১/১২/২০১৩তারিখের স্বাক্ষরিত হলেও পত্রটি দেরিতে পাওয়ায় এ বছর কোন ছেলে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারিনি। তবে আগামী শিক্ষা বছরে ভর্তি করানো হবে। ৫০ গজ দুরত্বে আরেকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থাকতে আপনার বিদ্যালয়টি কিভাবে অনুমতি পেলো ? জিজ্ঞাসা করলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তার পরেও অত্র বিদ্যালয়টি সুষ্ট ভাবে পরিচালিত হওয়া সত্বেও পাশ্ববর্তী আয়নাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সুনাম ও খ্যাতি দেখে হিংসার বশবর্তি হয়ে আয়নাপুর উচ্চ বিদ্যালয়কে ধ্বংশ করার লক্ষ্যে আলহাজ ময়জান বিবি নিন্ম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তন ও সহশিক্ষা চালুর আনুমোদন আনা হয়। এ ব্যাপারে আয়নাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, শিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাবর একটি অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। কিন্ত উক্ত অভিযোগ পত্রের প্রেক্ষিতে কোন আশানুরুপ ফল না পাওয়ার কারণে আয়নাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ওই বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে সহশিক্ষা ও নাম পরিবর্তনের বিষয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলা দায়েরের প্রেক্ষিতে গত ২৪/১১/২০১৪ইং তারিখে আলহাজ ময়জান বিবি নিন্ম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতিকে ৫ কার্য্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে এবং আগামী ২৮/১/২০১৫ইং তারিখের মধ্যে সহশিক্ষা ও নাম পরিবর্তনের অনুমোদন প্রাপ্তির সকল যোগ্যতার পূর্নাঙ্গ প্রতিবেদন উপস্থিত করার জন্য বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক নোটিশ জারী করেছেন। শিক্ষা বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী এক স্কুল থেকে আরেক স্কুলের দুরত্ব হতে হবে কমপক্ষে ৩-৪ কিলোমিটার। এ ক্ষেত্রে ৫০ গজ সীমানার মধ্যে পূর্ব থেকে একটি কম্বাইন্ড স্কুল থাকতে আরেকটি বালিকা বিদ্যালয়কে শিক্ষা বোর্ড কিভাবে কম্বাইন্ড বিদ্যালয় হিসেবে অনুমতি প্রদান করলেন, এটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাড়িয়েছে এলাকাবাসীর কাছে। কাজেই অনাকাংখিত বিষয়টির সুষ্ট সমাধানের জন্য এলাকাবাসী শিক্ষা বোর্ডের উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।