সুন্দরবনের কাঁকড়া বিশ্ব বাজারে
সুন্দরবনের কাঁকড়া আহরণকারীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, আধুনিক পদ্ধতি ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারলে প্রতিবছর এ খাত থেকে কয়েক শত কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতি বছর আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁকড়ার চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি দামও বাড়ছে। আষাঢ় মাস থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত কাঁকড়া আহরণ মৌসুমে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার সহস্রাধিক জেলে বন বিভাগ থেকে নির্দিষ্ট রাজস্বের বিনিময়ে পারমিট সংগ্রহ করে সুন্দরবনে প্রবেশ করে। গহীন সুন্দরবনসহ সাগর মোহনা থেকে জেলেরা কাঁকড়া আহরণ করে। এছাড়া উপকূলীয় জেলা খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার দেড় লক্ষাধিক হেক্টর চিংড়ি ঘেরে প্রাকৃতিকভাবেই কাঁকড়া উৎপন্ন হয়।
বন বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় ১১ প্রজাতির কাঁকড়া পাওয়া যায়। এরমধ্যে মাইলা, হাব্বা, সিলা ও সেটরা কাঁকড়ার প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকে বলে জানা যায়। মংলার ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী ইলিয়াচ হোসেন জানান, রপ্তানিতে চীন, মিয়ানমার, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, হংকংসহ বিভিন্ন দেশে সুন্দরবনের কাঁকড়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৭-৭৮ অর্থবছরে বিদেশে প্রথম কাঁকড়া রপ্তানি শুরু হয়। এরপর প্রায় তিন বছর বন্ধ থাকার পর ১৯৮২-৮৩ অর্থবছরে আবারো বিদেশে কাঁকড়া রপ্তানি শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বিশ্ববাজারে এর চাহিদা বাড়তে থাকে। পাশাপাশি বাড়তে থাকে এ খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রার আয়।
১৯৯০-৯১ সালে কাঁকড়া রপ্তানি করে আয় হয় ২৭ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। ১৯৯৫-৯৬ অর্থ বছরে রপ্তানি আয় কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ওই অর্থবছরে ২৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকার কাঁকড়া রপ্তানি করা হয় বিদেশে। ১৯৯৮-৯৯ অর্থ বছরে কাঁকড়া রপ্তানি হয় ১২৫ কোটি ২২ লাখ ৩৯ হাজার টাকার। ১৯৯৯-২০০০ অর্থ বছরে রপ্তানি করা হয় ১৪১ কোটি ৬৬ লাখ ৬ হাজার টাকার। ২০০১-০২ অর্থ বছরে এ খাত থেকে আয় হয় ৫৩০ কোটি টাকা। ২০০২-০৩ অর্থ বছরে কাঁকড়া রপ্তানি হয়েছে ২ দশমিক ৫২ মিলিয়ন ডলারের ৬৩০ মেট্রিক টন, ২০০৩-০৪ অর্থ বছরে এ খাতে আয় গিয়ে দাঁড়ায় ১৪৬ মিলিয়ন টাকায়।
মংলার জয়মনি এলাকার কাঁকড়া চাষি ও ব্যবসায়ী মুজিবর, রায়হান, মালেকসহ আরো অনেকের সাথে কথা হয় তারা জানান, সুন্দরবনসংলগ্ন সাগর ও নদীগুলোতে যে পরিমাণ কাঁকড়া ধরা পড়ে তা প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া রেণু পোনা থেকে অনেক বেশি। এ অঞ্চলে ১২ মাস কাঁকড়ার চাহিদা রয়েছে। তাছাড়া চিংড়ি চাষের জন্য প্রচুর জমি ও অর্থের প্রয়োজন হলেও কাঁকড়া চাষের জন্য জমি ও অর্থ দুটোই কম লাগে। ফলে সকলে কাঁকড়া চাষে ঝুঁকছেন। মংলা উপজেলার কাঁকড়া চাষী মো. সোহরাফ আকন (৫৫) ও খুলনার ব্যবসায়ী মো. বিপ্লব হোসেন পরিবর্তন’কে বলেন, “সুন্দরবনে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত প্রচুর পরিমাণে যে কাঁকড়া ধরা পড়ে তা সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানি এবং কাঁকড়া চাষীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও সরকারিভাবে ব্যাংক ঋণের সুবিধা দেয়া হলে কাঁকড়া চাষের উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে।”