‘শুধু আমার কলিজারে ফেরত দেন’
ছেলের কথা বলতে বলতেই মূর্ছা গেলেন দুই মা। স্বজনেরা একে একে এলেন। জানালেন তাঁদের বাবা, ছেলে কিংবা সন্তানের দুর্দশার কথা। এক সন্তান তাঁর বাবার জন্য কাঁদছেন, আরেক বাবা তাঁর সন্তানের জন্য।
এটি এক সংবাদ সম্মেলনের চিত্র। ইরাকে শ্রম পাচারের শিকার ১৮০ বাংলাদেশির প্রত্যাবাসন ও ক্ষতিপূরণ বিষয়ে স্বজনেরা আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। তাঁদের সহযোগিতা করে রাইটস যশোর, শিক্ষা স্বাস্থ্য উন্নয়ন কার্যক্রম ও বাংলাদেশ মানবাধিকার পরিষদ নামের তিনটি বেসরকারি সংগঠন।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে রাইটস যশোরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। ওই বক্তব্য থেকে জানা যায়, ক্যারিয়ার ওভারসিজ কনসালট্যান্ট লিমিটেড নামের একটি রিক্রুটিং এজেন্সি কাতারে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে গত মে মাসে ১৮০ জনকে ইরাকে পাঠায়। ইরাকে যাওয়ার পর থেকে তাঁদের একটি কক্ষে বন্দী রাখা হয়। সেখান থেকে তাঁরা মুঠোফোনে স্বজনদের জানান, নিয়মিত খাবার দেওয়া হয় না। এক কক্ষে সবাইকে বন্দী রাখা হয়েছে। কোনো কাজ নেই। বাড়ি ফিরতে চাইলে মারধর করা হয়।
লিখিত বক্তব্যের পর স্বজনেরা বক্তব্য দেন। বক্তৃতার মঞ্চে দাঁড়িয়ে কুষ্টিয়া থেকে আসা মা বানোয়ারা খাতুনের আকুতি, ‘আমার ছেলের জীবন ভিক্ষা চাই। আমি গরিব মানুষ বাবা, তাও টাকা-পয়সা চাই না। শুধু আমার কলিজারে ফেরত দেন।’
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, সব নিয়মকানুন মেনে বৈধ পথে যাওয়ার পরও তাঁরা বিপদে আছেন। এটি কখনোই হতে পারে না। তাঁদের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। যাঁরা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, তাঁদের জবাবদিহি করতে হবে।
বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, থানার ওসি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রদূত পর্যন্ত সবার কাছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো ধরনা দিয়েছে। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সব ভুক্তভোগী পরিবারের কথা শুনে মনে হচ্ছে, দেশ থেকে ইনসাফ চলে যাচ্ছে। গত ছয় মাসে সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান এসব মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি। তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং ১৬ ডিসেম্বরের আগেই তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনার সুস্পষ্ট পদক্ষেপ আশা করেন।