বাড়ছে পুরুষের বন্ধ্যত্ব
সঠিকভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার না করায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বাড়ছে পুরুষের বন্ধ্যত্ব। বিশেষ করে প্যান্টের পকেটে মোবাইল ফোন রাখাতেই সৃষ্টি হয়েছে এমন অবস্থার। এ ব্যাপারে জরুরিভিত্তিতে সচেতনতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যথায় ভবিষ্যতে দেশের জন্মহার আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাবে বলে মন্তব্য করেছেন তারা।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুরুষের শুক্রাণুর ওপর মোবাইল ফোনের প্রভাব নিয়ে যুক্তরাজ্যের এক্সাট্রার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ম্যাথিওর নেতৃত্বে সম্প্রতি ১০টি গবেষণা কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এসব গবেষণার সারমর্ম বিশ্লেষণ করে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন, যারা প্যান্টের পকেটে মোবাইল ফোন রাখেন, তাদের ওপর মোবাইল ফোন থেকে নির্গত ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। শুক্রাণুর নির্ধারিত সংখ্যা, কার্যক্ষমতা, সঠিক গঠন, স্ত্রীর জরায়ুর ভেতরে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকার ওপর নির্ভর করে পুরুষের সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা। অধ্যাপক ড. ম্যাথিও তার বিশ্লেষণে বলেন, প্যান্টের পকেটের অবস্থান পুরুষের শুক্রাশয়ের খুব কাছাকছি। এই পকেটে মোবাইল ফোন রাখলে সেখান থেকে নির্গত হওয়া ইলেকট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গের বিরূপ প্রভাব পড়ে শুক্রাশয়ের ওপর। এতে ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করার ক্ষমতা হারায় শুক্রাণু। ফলে সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পায় পুরুষের।
এছাড়া এনভায়রনমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত ইফেক্ট অব মোবাইল টেলিফোন অন স্পার্ম কোয়ালিটি; এ সিসটেমেটিক রিভিউ অ্যান্ড মেটাএনালাইসেস- শিরোনামের প্রবন্ধে বলা হয়, মোবাইল ব্যবহারকারী ১৪৯২ জনের স্পার্মের ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে, মোবাইল ব্যবহারকারীদের শতকরা ৮ দশমিক ১ শতাংশ স্পার্ম মারা যায় এবং ৯ দশমিক ১ শতাংশ স্পার্মই অনুর্বর বা সন্তান উৎপাদনে অক্ষম হয়ে পড়ে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম কাজল যুগান্তরকে বলেন, সম্প্রতি দেশে পুরুষ বন্ধ্যত্বের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সন্তান হচ্ছে না- এমন সমস্যা নিয়ে তার কাছে আসা ১০ জন দম্পতির মধ্যে গড়ে ৬ থেকে ৭ জনের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে সমস্যাটি পুরুষের। তাদের বেশিরভাগই প্যান্টের পকেটে মোবাইল ফোন রাখেন।
ডা. কাজল আরও বলেন, বাংলাদেশে এ ব্যাপারে দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার সুযোগ না থাকায় তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রমাণ করা সম্ভব হচ্ছেন না। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী পুরুষ বন্ধ্যত্বের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে মোবাইল ফোনের উচ্চমাত্রার তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গকেই দায়ী করা হয়। যে হারে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পুরুষের বন্ধ্যত্বের হার বাড়ছে, তাতে আগামীতে জন্মহার আশংকাজনক হারে হ্রাস পেতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।
এ ধরনের বন্ধ্যত্ব প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে ডা. রেজাউল করিম কাজল বলেন, যেহেতু মোবাইল ফোন থেকে উচ্চমাত্রার ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন নির্গত হয়, তাই এটি প্যান্টের পকেটে বা বুক পকেটে না রেখে হাতে বা ব্যাগে রাখাই উত্তম। এছাড়া দীর্ঘসময় মোটরসাইকেল চালানো এবং কোলে রেখে ল্যাপটপ ব্যবহার না করারও পরামর্শ দেন তিনি।
দেশের অন্যতম ইনফারটিলিটি বিশেষজ্ঞ ও বারডেম হাসপাতালের গাইনি বিভাগের চিকিৎিসক ডা. নুসরাত মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পুরুষের বন্ধ্যত্বের হার আশংকাজনক হারে বাড়ছে। তবে এর জন্য মোবাইল ফোন একমাত্র দায়ী সেটা বলা যাবে না। বিভিন্ন গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যায়, পুরুষের বন্ধ্যত্বের কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মোবাইল ফোন থেকে নির্গত ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন, বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস, ল্যাপটপ, বিশাক্ত খাবার, যে কোনো ধরনের ধোঁয়া, তামাক ও তামাকজাত পণ্য, দীর্ঘ সময় মোটরসাইকেল চালানো।
ডা. নুসরাত জানান, বাংলাদেশে তিনিই প্রথম এ বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা করেছেন। সেখানে মোবাইল রেডিয়েশনের ক্ষতিকর প্রভাব ও পুরুষের বন্ধ্যত্ব বৃদ্ধির প্রমাণ পাওয়া গেছে। তার গবেষণা প্রতিবেদনটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদনের পরেই এটি প্রকাশ করা হবে।