মেয়র পদে মনোনয়ন পেতে তৎপর বড় দুদলের প্রার্থীরা
মনোনয়ন পেলে পদত্যাগ করতে হবে। তাই জমে থাকা কাজ দ্রুত শেষ করছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। বিশেষ করে দলীয় নেতাকর্মী-শুভাকাঙ্ক্ষীদের ভবনের প্ল্যান পাস, নকশা অনুমোদন, বড় বড় ঠিকাদারের কাজের বিল পাস, মন্ত্রী-এমপিদের বরাদ্দ দেয়া প্লট হস্তান্তর ফাইলসহ সংশ্লিষ্ট ফাইলে স্বাক্ষর করছেন তিনি। এদিকে নির্বাচনের প্রায় ৮ মাস বাকি থাকলেও আগেভাগেই মেয়র নির্বাচন করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিসিবির সহসভাপতি আ জ ম নাছির উদ্দিন। আর সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী অপেক্ষা করছেন গত নির্বাচনে মনজুর আলমের কাছে পরাজয়ের মধুর প্রতিশোধ নিতে। অপরদিকে কোতোয়ালি আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুরুল ইসলাম বিএসসিও মেয়র পদে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী। দল মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচন করতে প্রস্তুত। বিএনপি থেকে নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন ছাড়াও গোলাম আকবর খোন্দকার, আবু সুফিয়ান, কাজী আকবরসহ একাধিক নেতা মেয়র পদে প্রার্থী হতে তৎপর রয়েছেন। এতে করে আগামী নির্বাচনে বর্তমান মেয়র মনজুর আলম বিএনপির মনোনয়ন পাবেন কিনা তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তিনি নিজেও। যদিও বিএনপির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রামের সুপার থ্রি বিএনপি নেতার সমর্থন যার প্রতি থাকবে তিনিই পাবেন বিএনপির মনোনয়ন। সে ক্ষেত্রে মনজুর আলমের পাল্লাই ভারি। আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়টি বড়ই অনিশ্চিত। আগামী নির্বাচন আওয়ামী লীগ-বিএনপির নবীনে নবীনে না প্রবীণে প্রবীণে লড়াই হবে সেটা নির্ভর করছে দলীয় সমর্থন বা মনোনয়ন প্রাপ্তির ওপর।
২০১০ সালের ১৭ মে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের প্রায় একমাস পর মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এক লাখ ভোটের বেশি ব্যবধানে বিজয়ী এম মনজুর আলম। আগামী বছরের ২৫ জুলাই বর্তমান মেয়রের মেয়াদ শেষ হবে। মেয়াদ শেষের ১৮০ দিন আগে যেকোনো সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান আছে। সে হিসাবে নির্বাচনের আর বাকি আছে ৮ মাস। তাই মনোনয়ন প্রাপ্তি ও মাঠ তৈরিতে এখন থেকেই তৎপরতা শুরু করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী শেষবারের মতো মেয়র নির্বাচন করতে চান। তার চেয়েও বেশি তার অনুসারীরা এ প্রত্যাশা করছেন। শিষ্য মনজুর আলমের কাছে ২০১০ সালের নির্বাচনে বড় ব্যবধানে হারার পর কিছুটা বিস্মিত ও হতভম্ব থাকলেও আবার ঘুরে দাঁড়ানোর কাজ শুরু করেন তিনি। দলীয় কর্মকাণ্ড ও সরকারবিরোধী আন্দোলন তথা বিরোধী দল মোকাবিলায় মাঠে অতিমাত্রায় সক্রিয় রয়েছেন তিনি। এসব ভূমিকার কারণে ১৭ বছরের মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী পুনরায় দলীয় সমর্থন প্রত্যাশা করছেন।
নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিসিবির সহসভাপতি আ জ ম নাছির উদ্দিন শুক্রবার পটিয়ার জিরি মাদ্রাসায় আয়োজিত এক সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচন করার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। তার নামেও মেয়র পদে দেখতে চাই স্লোগানসংবলিত ব্যানার-পোস্টার উঠেছে নগরীতে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামও জোরেশোরে তৎপরতা চালাচ্ছেন। চউকের চেয়ারম্যান থাকার কারণে রাস্তাঘাট, ফ্লাইওভার নির্মাণসহ শত শত কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করে তিনি নগরবাসীর সমর্থন আদায়ে সচেষ্ট রয়েছেন। কেন্দ্রেও তার লবিং রয়েছে শক্ত। সূত্র জানায়, মেয়র পদে দলীয় সমর্থন বা মনোনয়ন পেলে চউকের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেই নির্বাচন করতে হতে পারে। এ কারণে তিনি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পেন্ডিং বা জমানো কাজগুলো দ্রুত শেষ করে ফেলছেন। বিশেষ করে দলীয় নেতাকর্মী ও শুভাকাক্সক্ষীদের বিভিন্ন কাজের ফাইল দ্রুত সই করে ছেড়ে দিচ্ছেন।
নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কাছে যুগান্তরের প্রশ্ন ছিল, আসন্ন নির্বাচন নিয়ে তিনি কী ভাবছেন? দলের মনোনয়ন পাবেন কিনা? উত্তরে তিনি বলেন, আমি মেয়র থাকাকালে চট্টগ্রামের জন্য কী করেছি তা নগরবাসীর জানা আছে। নগরবাসী হয়তো এখন তা অনুভব করছে। আমি শেষবারের মতো মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন আশা করছি। মনোনয়ন পেলে নির্বাচন করব। নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও কোতোয়ালি আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম বিএসসি বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়ায় হতাশ ছিলেন। এবার মেয়র পদে মনোনয়ন দিলে সেই হতাশা কিছুটা কাটবে বলে দলীয় সূত্রের অভিমত। তিনিও বিগত সময়ে নগর ও নগরীর শিক্ষার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। তবে বর্তমানে দেশের বাইরে থাকায় মেয়র পদে প্রার্থিতা নিয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বর্তমান মেয়র ও খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এম মনজুর আলম, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন, উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি গোলাম আকবর খোন্দকার, নগর বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ান, কাজী আকবর মেয়র পদে নির্বাচন করতে আগ্রহী। এ বিষয়ে তারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে তৎপরতা চালাচ্ছেন। মেয়র পদে দেখতে চাই স্লোগানসংবলিত ব্যানার-পোস্টার তুলেছেন তাদের অনুসারীরা। বিএনপির সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র বলছে, চট্টগ্রাম বিএনপির রাজনীতির কাণ্ডারি হিসেবে পরিচিত তিন নেতা বা সুপার থ্রি দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, এম মোরশেদ খান ও নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর যৌথ সমর্থন যার প্রতি থাকবে তিনিই আগামী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন।
আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি কাকে মনোনয়ন দিচ্ছে এ প্রশ্নের জবাবে সুপার থ্রির একজন আবদুল্লাহ আল নোমান যুগান্তরকে বলেন, দল এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। যেহেতু বিএনপির একজন মেয়র রানিং আছেন তার বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনা করা হবে। তা ছাড়া কর্পোরেশনকে দলীয়করণ না করার যে নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি ছিল বিএনপির সেই প্রতিশ্র“তি রক্ষা করেছেন মনজুর আলম। সততার সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করেছেন বলে আমি মনে করি। দলীয় কর্মকাণ্ডে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর মতো সক্রিয়ভাবে অংশ না নিলেও মনজুর আলমের দাবি যখন তাকে দল ডেকেছে তখনই পেয়েছে। নোমান আরও বলেন, গোলাম আকবর খোন্দকার, ডা. শাহাদাত, আবু সুফিয়ান, কাজী আকবরসহ আরও একাধিক নেতা মেয়র পদে প্রার্থী হতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করছেন। সবার অধিকার আছে মনোনয়ন চাওয়ার। সময় এলে নিশ্চয় দল যোগ্য প্রার্থী দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।