মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ প্রসঙ্গ ; জাপায় আবার অস্বস্তি ছড়ালেন এরশাদ
দলের সাংসদদের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের বিষয়ে দলের চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত এইচ এম এরশাদের বক্তব্য নিয়ে জাতীয় পার্টিতে (জাপা) আবারও ‘অস্বস্তি’ ও ‘বিতর্কের’ সৃষ্টি হয়েছে। জাপার তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং দলের নেতাদের একটি অংশ এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তবে তারা এখনই প্রকাশ্যে কথা বলতে চাইছে না।
দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ গত বুধবার রংপুরে তাঁর বাসভবনে সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় পার্টির সাংসদদের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের বিষয়ে দলে আলোচনা চলছে।
দলের তিনজন সাংসদ মন্ত্রিপরিষদে আছেন। এর মধ্যে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ পানিসম্পদমন্ত্রী, মুজিবুল হক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ও মসিউর রহমান স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী।
মন্ত্রীদের পদত্যাগের বিষয়ে আরও পরিষ্কার করে জানতে যোগাযোগ করলে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এরশাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী নিশা দেশাইকে (আমেরিকার সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী) বলেছেন, জাপার সাংসদেরা মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের চিন্তা করছেন। আমিও বলেছি, এ বিষয়ে দলে আলোচনা চলছে। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
যদিও জাপার মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ এরশাদের এ বক্তব্য সম্পর্কে গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘আমি স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি রংপুরে এ ধরনের কথা বলেননি।’
গত ২৮ নভেম্বর বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে ঢাকায় সফরে আসা মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বৈঠক করেন। সেখানে জাপার সাংসদদের সরকারে থাকা না-থাকা নিয়ে কথা ওঠে।
দলীয় সূত্রগুলো জানায়, ওই দিন নিশা দেশাই জাপার তিন সাংসদের সরকারে থাকার পাশাপাশি সংসদে বিরোধী দলে ভূমিকা রাখার বিষয়টি জানতে চান। তখন রওশন বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে তাঁরাও চিন্তাভাবনা করছেন। দলের নীতি-নির্ধারণী পরিষদে আলোচনা করে এ বিষয়ে যথাসময়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান রওশনের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ্।
জাপার দলীয় সূত্রগুলো জানায়, এরশাদ ও রওশন দুজনেই জাতীয় পার্টিকে সংসদেÔ‘সত্যিকারের’ বিরোধী দল হিসেবে দেখতে আগ্রহী। সে জন্য মন্ত্রিসভায় থাকা দলের তিন সাংসদের পদত্যাগ করা উচিত বলে মনে করেন তাঁরা। তবে রওশন এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও এরশাদ এর আগে আরও অন্তত তিনবার দলের সাংসদদের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের কথা বলেছিলেন। এ নিয়ে একবার মন্ত্রিসভার দুই সদস্য মুজিবুল হক ও মসিউর রহমান এবং দলের আরেক নেতা তাজুল ইসলাম চৌধুরী এরশাদ সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন। এরশাদকে মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদ থেকে আগে পদত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন তাজুল ইসলাম।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য গতকাল জাপার তিনজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাঁরা ধরেননি।
দলের দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা জানান, মন্ত্রিসভায় থাকা জাপার তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এরশাদের ইচ্ছামতো পদত্যাগ করতে চান না। তাঁদের অনুসারী এবং দলের সাংসদ ও নেতাদের একটি অংশেরও একই মনোভাব। তারা সরকারে থাকতেই আগ্রহী। এ অবস্থায় দলের এই অংশটি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্তের বিষয়টি জাপার সংসদীয় দল ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সভার ওপর ছাড়ার কৌশল নিয়েছে। কারণ, দলের এই দুই স্তরেই এই অংশটির সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।
তবে, বিষয়টি নিয়ে এর আগে তিন মন্ত্রী ও কয়েকজন সাংসদ এরশাদের সঙ্গে বিতর্কে জড়ালে তিক্ততার সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় এখন বিষয়টি নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাইছেন না।
রওশনের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাংসদ ফখরুল ইমাম বলেন, ‘এরশাদ ও ম্যাডাম দুজনেই বিশ্বাস করেন, মন্ত্রপরিষদ থেকে দলের সাংসদেরা বেরিয়ে গেলে জাপা আরও সুচারুরূপে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে পারে।’
যদিও জাপার মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ গতকালই রাজধানীর বিজয়নগরে দলের এক যৌথসভায় বলেছেন, ‘আমরা কার্যত বিরোধী দল। কৌশলগত কারণে সরকারে আছি। তবে পার্টনার নই।’
সভায় জাপার মহাসচিব টিআইবির প্রতিবেদনে দেশের দুর্নীতি বেড়ে যাওয়া দুঃখজনক মন্তব্য করে বলেন, এ সরকার দেশে সুশাসন দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে তিনি এ-ও বলেন, ‘সরকারকে পাঁচ বছরই ক্ষমতায় দেখতে চাই। আমরা এখন বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল। তাই ২০১৯ সালের নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা শোনা যাচ্ছে। আমরা চাই ২০১৯ সালেই নির্বাচন হোক। জনগণ ভোট দিয়েছে পাঁচ বছরের জন্য।’
সভায় জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এস এম ফয়শল চিশতী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক সৈয়দ আবু হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।