মুক্তিযোদ্ধার ভাতা আত্মসাৎ, পান রাজাকার
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : হরিণাকুন্ডু মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মহিউদ্দীন মাস্টার ও ডেপুটি কমান্ডার ছামসুল ইসলামের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বিতরণে দুর্নীতি এবং অর্থের বিনিময়ে রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে ভাতা দেওয়াসহ নানা অভিযোগ উঠেছে।
হরিণাকুন্ডু এলাকার সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারা রবিবার দুপুরে ঝিনাইদহ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাবেক জেলা ডেপুটি কমান্ডার রেজাউল ইসলাম।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, হরিণাকুন্ডু মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মহিউদ্দীন মাস্টার ও ডেপুটি কমান্ডার ছামসুল ইসলাম মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দ হাট-ইজারার চার পার্সেন্ট হিসেবে ৮০ হাজার টাকা দুস্থদের না দিয়ে সচ্ছল ও ধনাঢ্যদের মাঝে বণ্টন করেন। শরিফুল ইসলাম নামে এক মুক্তিযোদ্ধা রংপুর থেকে নিয়মিত সরকারি ভাতা উত্তোলন করলেও হরিণাকুন্ডু মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মহিউদ্দীন মাস্টার শরিফুল ইসলামের ভাতার ৯৩ নম্বর বই বাতিল না করে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়মিত টাকা তুলে আত্মসাৎ করছেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, রইচ উদ্দীন খলিফা নামে এক ব্যক্তি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পিচ কমিটির সদস্য হিসেবে রাজাকারদের সহায়তা করেন। সেই রাজাকার অর্থের বিনিময়ে নিয়মিত ভাতা তুলে যাচ্ছেন। এ ছাড়া অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার নাম সরকারি গেজেট, অতিরিক্ত গেজেট, বিশেষ গেজেট ও লাল মুক্তি বার্তায় না থাকলেও টাকার বিনিময়ে ভাতা উত্তোলন করে যাচ্ছেন।
লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, মহিউদ্দীন মাস্টার সাংগঠনিক কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ভুয়া কমান্ডার শহিদুরের নেতৃত্বে ৬২ জনকে মুক্তিযোদ্ধা করেন। এর মধ্যে রাজাকার ও পিচ কমিটির সদস্যও রয়েছেন। এ ছাড়া কোনো মুক্তিযোদ্ধার পঞ্চাশ শতক জমির বেশি থাকলে সরকারি বাড়ি নির্মাণের সুবিধা পাবেন না বলে সরকারি নিয়ম থাকলেও মহিউদ্দীন মাস্টার ঘুষের বিনিময়ে হরিণাকুন্ডু উপজেলার বেড় বিন্নি গ্রামের তাহাজ উদ্দীন মুন্সির নাম বাড়ি নির্মাণের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন। তাহাজ উদ্দীনের নামে তিন বিঘা জমি আছে বলে মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ।
এ ছাড়া মহিউদ্দীন মাস্টারের বিরুদ্ধে গেজেটে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নাম উঠানো নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে। তিনি জীবিত আট (যুদ্ধকালীন) কমান্ডারের নাম বাদ দিয়ে দু’জন ভুয়া কমান্ডারসহ চারজনের নাম উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটিতে অর্ন্তভুক্ত করেছেন বলেও অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে। এসব অপকর্মের দায়ে ২০১১ সালের ৩ আগস্ট জেলা ও কেন্দ্র থেকে মহিউদ্দীন মাস্টারকে বহিষ্কার করা হয়।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ২০১৪ সালের ১৭ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরে দুস্থ মুক্তিযোদ্ধারে মাঝে পঞ্চাশ হাজার টাকা বণ্টনের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে প্রকৃত দুস্থদের বাদ দিয়ে ধনাঢ্য ব্যক্তি ইবাদত হোসেন, মোয়াজ্জেম, আবু তৈয়ব, মহিউদ্দীন, মোহাম্মদ আলী, মোশাররফ হোসেন, আব্দুস সাত্তার মন্টু, আয়ুব হোসেন, তারিক ইমাম, মিজানুর রহমান মন্টু, জহুরুল ইসলাম, তাজুল ইসলাম, ডেপুটি কমান্ডার ছামসুল ও কমান্ডার মহিউদ্দীন নিজে ওই টাকা ভাগ করে নেন।
সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল গণি, হাফিজ উদ্দীন, আফজাল হোসেন ও মতিয়ার রহমানসহ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগপত্রে হরিণাকুন্ডু উপজেলার ৩৭ মুক্তিযোদ্ধা স্বাক্ষর করেন।
অভিযোগের বিষয়ে হরিণাকুন্ডু উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মহিউদ্দীন মাস্টারের মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি রিসিভ কেরেননি। পরিবারের এক সদস্য রিসিভ করে বলেন, ‘তিনি ঘুমিয়ে আছেন। কথা বলতে পারবেন না।’