অবৈধভাবে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দেওয়ার হার দিনকে দিন বেড়েই চলেছে
দিন যতো যাচ্ছে, অবৈধভাবে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ড যাওয়ার হার যেন বেড়েই যাচ্ছে। প্রায়ই সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে অবৈধভাবে সাড়র পাড়ি দেওয়ার সময় আটকের খবর। সেই সাথে বেড়ে চলেছে দালালচক্রের স্বক্রিয়তা। এবছর প্রায় ৫৩ হাজার বাংলাদেশী এবং রোহিঙ্গা অবৈধভাবে মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে সমুদ্র পাড়ি দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য। শুক্রবার জেনেভা থেকে প্রকাশ করা হয় এই প্রতিবেদন।
ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, সমুদ্রপথে এধরণের পাচারের সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। এবছর অবৈধভাবে পাড়ি দেওয়া ৫৩ হাজার মানুষের মাঝে প্রায় ২১ হাজার মানুষ গত তিন মাসের মধ্যেই সমুদ্র পাড়ি দেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গতবছরের তুলনায় বঙ্গোপসাগর দিয়ে এমন অবৈধ সমু্দ্রযাত্রার সংখ্যা ৩৭ শতাংশ বেশি।
এদিকে যাত্রাপথে পাচারকারীদের নির্যাতন এবং পর্যাপ্ত খাদ্য বা পানির অভাবের কারণে প্রায় ৫৪০ জন মারা গেছে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, নিহতদের মরদেহ নৌকা থেকে সমুদ্রে ফেলে দেয়া হয়।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, পাচার হওয়া এসব মানুষদের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ নারী এবং ইউএনএইচসিআর থাইল্যান্ডে যাদের সাথে সাক্ষাৎ করেছে তাদের এক-তৃতীয়াংশের বয়সই ১৮ বছরের নীচে। এদের অনেকেই দালালদের স্বেচ্ছায় অর্থপ্রদান করে সমুদ্রপাড়ি দিলেও অনেকেই বলেছেন, তাদের জোরপূর্বক নৌযাত্রায় বাধ্য করা হয়েছে।
থাইল্যান্ডে পৌছানোর পর পাচারকারীরা অনেককে বন্দীশিবিরে আটকে রেখে আত্মীয়-স্বজনের কাছে মুক্তিপণ দাবী করেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। মুক্তিপণ দিতে ব্যর্থ হলে তাদেরকে মারধরসহ নানাধরণের নির্যাতন করা হয়।
এর আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার ৯টি রুটকে চিহ্নিত করেছে, যেগুলোকে অবৈধ মানব পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। গত এক বছরে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় প্রায় দুই হাজার ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ ও একটি বেসরকারি সংস্থার দেওয়া তথ্য মতে, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার যে ৯টি এলাকাকে মানব পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো হলো- কক্সবাজার সদর, টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকোরিয়া, উখিয়া, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডু, বাঁশখালী এবং আনোয়ারা। এ ছাড়া কক্সবাজারের চৌফলদণ্ডী, নাজিরারটেক, উখিয়ার মনখালী, সোনারপাড়া, মাদারবনিয়া, ছোয়াংখালী, টেকনাফের শামলাপুর, শীলখালী, জাহাজপুরা, শাহপরীর দ্বীপ ঘোলাপাড়া, পশ্চিমপাড়া, দক্ষিণপাড়া, জেটিঘাট, কাঁটাবুনিয়া, মিটামনিরছড়া, রাজারছড়া এলাকা দিয়েও মানব পাচার হয়। এসব রুট দিয়ে গত এক বছরে প্রায় ১০ হাজার ব্যক্তি অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করে।
জানা যায়, মালয়েশিয়ায় পাচারকারীদের রয়েছে দেশব্যাপী শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। সাধারণত দালালরা বেকার এবং স্বল্প আয়ের যুবক ও তরুণদের টার্গেট করে কম টাকায় ‘স্বপ্নের দেশ’ মালয়েশিয়া পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে। প্রথমে টার্গেটের দুই কপি ছবি এবং তার পরিবারের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় পৌঁছে দেওয়ার মৌখিক চুক্তি করে। তারপর মালয়েশিয়া নেওয়ার কথা বলে ফিশিং ট্রলারে তোলার আগে নেয় আরও ৫০ হাজার টাকা। বাকি এক থেকে দেড় লাখ টাকা মালয়েশিয়া পৌঁছার পর শোধ করতে হবে আরেকটি লিখিত চুক্তি করে। এভাবেই দালালদের কথায় সরল বিশ্বাসে নিজের শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে কিংবা ধার দেনা করে টাকা তুলে দিচ্ছে পাচারকারীদের হাতে।