ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নতুন বছরের শুরুতে নির্বাচন চান প্রধানমন্ত্রী

Dhaka-Cityঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনে প্রশাসকদের মেয়াদ আর বাড়ছে না। ২০১৫ সালের শুরুতে দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সোমবার অনুষ্ঠিত ৩৮তম মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এই কথা বলেছেন। বৈঠকে উপস্থিত দুই মন্ত্রিপরিষদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে। বৈঠকে ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০১৪’ এর খসড়া অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হলে তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
আলাপকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মন্ত্রী বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশনের অধ্যাদেশ সংশোধনের বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ প্রশাসকদের মেয়াদ বাড়ালে জনগণের কাছে ভুল বার্তা যাবে বলে অভিমত প্রকাশ করেন। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উল্লিখিত দুই মন্ত্রীর মতকে সমর্থন করেন। এসময় অন্য আরেকজন মন্ত্রী নির্বাচনে জয়-পরাজয় নিয়ে প্রশ্ন তুললে প্র্রধানমন্ত্রী তার মন্তব্যে হার-জিত যারই হোক দুই সিটি করপোরেশনে নির্বাচন দেওয়ার তাগিদ দেন বলে জানা গেছে।
ছয় মাসের মেয়াদ থাকা প্রশাসকদের এক বছর বা সময় উল্লেখ না করে (অনির্দিষ্টকাল) আইন সংশোধনের বিষয়ে গণমাধ্যমে আলোচনা হচ্ছিল। তবে মন্ত্রিপরিষদ বৈঠক থেকে প্রস্তাব ফেরত যাওয়ায় তা আর বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০০২ সালের ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে (ডিসিসি) সাদেক হোসেন খোকা মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার মেয়াদ শেষ হয় ২০০৭ সালে। তখন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় থাকায় মেয়াদ শেষ হলেও ডিসিসি নির্বাচন হয়নি। তৎকালীন সিটি করপোরেশন আইন অনুযায়ী নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত পূর্ববর্তী মেয়রের দায়িত্ব পালনের বিধান ছিল। সে অনুযায়ী দায়িত্বপালন করেছিলেন সাদেক হোসেন খোকা।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ডিসিসি নির্বাচন না দিয়ে ঢাকা দক্ষিণ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নামে ডিসিসিকে কার্যত দুই ভাগ করে ২০১১ সালের ২৯ ডিসেম্বের। একই সঙ্গে আইন পরিবর্তন করে ছয়মাস মেয়াদে প্রশাসক নিয়োগের ব্যবস্থা করে। ২০০৩ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রথমদফায় প্রশাসক নিযোগ হয়। এরপর থেকে বিভক্ত ডিসিসিতে চার দফা প্রশাসক বদল হয়ে পঞ্চম দফার প্রশাসকবৃন্দও মেয়াদ পূরণ করতে চলেছেন প্রায়।
নির্বাচন অনুষ্ঠান না হওয়ায় ছয় মাস পর বার বার প্রশাসক পরিবর্তনের জায়গায় এক বছর করার জন্য ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০১৪’ উপস্থাপন হয়েছিল বলে জানা গেছে।
তবে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশেনের নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এমন তাগিদের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব মনজুর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সিটি করপোরেশন আইনটি সংশোধনের জন্য ক্যাবিনেটে উপস্থাপন হয়েছিল। তা ফেরত এসেছে। এখন আমরা সেটা মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা-পর্যালোচনা করে আবার সিদ্ধান্ত নেব।
প্রসঙ্গত, সীমানা জটিলতার দোহাই দিয়ে গত আট বছর ঢাকার সিটি করপোরেশন নির্বাচন হচ্ছে না। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন বরাবরই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে সীমানা নির্ধারণ করে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির কথা বলে আসছে। অন্যদিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে নির্বাচন বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারকেই প্রাধান্য দিচ্ছে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে সীমানা জটিলতা নিরসনের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, এই দুই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগের চেয়ে বড় বিষয় সরকারের নির্বাচন অনুষ্ঠানের ইচ্ছা। সরকার না চাইলে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। সরকার চাইলে যে কোনো সমস্যাকে পায়ে ঠেলেও নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। সরকার নির্বাচন চায় কিনা সেটাই বড় বিষয়।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend