খাগড়াছড়িতে মঙ্গলবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি : ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের অব্যাহত খুন, গুম, অপহরণ ও চাঁদাবাজির প্রতিবাদে মঙ্গলবার জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকা হয়েছে।
জেলা সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ প্রতিরোধ কমিটি সোমবার বিকেলে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। সমাবেশ থেকে সংগঠনের আহ্বায়ক খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র মো. রফিকুল আলম এ হরতাল কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
এদিকে, মানিকছড়ি কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক চিংসামং চৌধুরীর হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে নাগরিক কমিটির ডাকে মানিকছড়িতে সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার হরতাল চলছে। অন্যদিকে, পানছড়িতে দুই বাঙালী দম্পতি গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় বাঙালী ছাত্র পরিষদের সোমবারের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধও পালিত হয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা সন্ত্রাস ও প্রতিরোধ কমিটির ব্যানারে সোমবার বিকেলে শহরের মুক্তমঞ্চ থেকে একটি বিশাল মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক ঘুরে পুনরায় শাপলা চত্বরের মুক্তমঞ্চে সমাবেশে মিলিত হয়। বিক্ষোভ মিছিলে জেলা সদরের ব্যবসায়ী ও জনপ্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।
সমাবেশে পৌরসভার মেয়র মো. রফিকুল আলম বলেন, বহু প্রত্যাশা নিয়ে এবং ছাড় দিয়ে শান্তিচুক্তি হয়েছে। কিন্তু শান্তি ফিরে আসেনি। চুক্তির আগে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি সীমিত পর্যায়ে ছিল। কিন্তু চুক্তির পর বহু গোষ্ঠী ও সংগঠনকে চাঁদা দিতে হচ্ছে। চাঁদা না দিলে অপহরণ, গুম ও খুন করা হচ্ছে।
তিনি সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজি বন্ধে প্রশাসনের ব্যর্থতাকে দায়ী করে বলেন, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আর নয়, এখন থেকে কোনো চাঁদা দেওয়া হবে না। যেখানে চাঁদাবাজি সেখানেই প্রতিরোধ করা হবে।
সমাবেশে খাগড়াছড়ি জেলা সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব এস এম শফি বক্তব্য রাখেন।
এদিকে, শিক্ষক চিংসামং চৌধুরীর হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে মানিকছড়িতে সোমবার ভোর ৬টা থেকে টানা ২৪ ঘণ্টার হরতাল চলছে। হরতালের সমর্থনে পিকেটাররা সকাল থেকে মানিকছড়িতে রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ, মিছিল ও পিকেটিং করেন।
মানিকছড়ির স্কুল ও কলেজসহ সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট ও যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। হরতালের কারণে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সড়কে যানবাহন চলাচলও বন্ধ রয়েছে।
শিক্ষক চিংসামং চৌধুরীর হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে জেলার মাধ্যমিক বেসরকারি শিক্ষক সমিতির ডাকে খাগড়াছড়ি জেলার সকল বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন, কালো ব্যাজ ধারণ, শোক র্যালি ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
মানববন্ধন উত্তর সমাবেশে বক্তব্য রাখেন খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র মো. রফিকুল আলম, বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ওমর ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক অংপ্রু মারমা। সমাবেশে সন্ত্রাসীদের আগামী সাত দিনের মধ্যে গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। অন্যথায় ক্লাস বর্জনসহ আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়।
অপরদিকে, সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাঙালী শ্রমিক আহত হওয়ার ঘটনায় এবং দায়ীদের গ্রেফতারের দাবিতে জেলার পানছড়িতে বাঙালী ছাত্র পরিষদের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ পালিত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, শনিবার রাত পৌনে ৮টার দিকে সন্ত্রাসীদের ব্রাশ ফায়ারে মানিকছড়ি কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি চিংসামং চৌধুরী (৪৫) নিহত হন। ওই ঘটনায় জেএসএস (সন্তু) গ্রুপের উপজেলা শাখার সভাপতি মংসাজাই মারমা ওরফে জাপান বাবু আহত হন। একই সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে মাটিরাঙ্গায় জেএসএস নেতা আশুতোষ ওরফে মিলন ত্রিপুরা (৪০) এবং পানছড়িতে রমজান আলী (৫৫) ও তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৪৫) আহত হন।