পদ্মা সেতু কতদূর?

padma-bridge_0_0শিরোনামের প্রশ্নের এক কথায় উত্তর হলো, পদ্মা সেতু আর বেশিদূর নয়। পদ্মা সেতুকে বাস্তবে রূপদান করতে কাজ এগিয়েছে অনেকদূর। অনেক জল্পনা কল্পনার পরে অবশেষে সত্যি হতে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু। ইতিমধ্যে পদ্মা সেতুর প্রস্তুতিমূলক সব কাজ প্রায় শেষ করেছে সরকার। দুই প্রান্তের সংযোগ সড়ক নির্মাণ, পুনর্বাসন ও সার্ভিস এলাকা নির্মাণের কাজও প্রায় শেষের পথে। পদ্মার দুই পাড়েই চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। নির্মাণ প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি লিমিটেড পদ্মাপাড়ে নির্মাণ করেছে বিশাল ইয়ার্ড। সেখান থেকে সেতুর কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে পদ্মাপাড়ে নিয়ে আসা হয়েছে ভারী সব যন্ত্রপাতি। সিঙ্গাপুর,চায়না ও জার্মানীতে সেতুর আরো কিছু যন্ত্রাংশ তৈরীর কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতুর ১৪ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপেই যেন শিহরিত হচ্ছেন পদ্মার দুই পাড়ের মানুষ।

ঢাকা থেকে মাওয়া ফেরিঘাট যাওয়ার পথে চৌরাস্তায়ই চোখে পড়বে সড়কের সম্প্রসারণের কাজ। এটি পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজের অংশ। বড়বড় ট্রাকে করে মাটি ফেলা হচ্ছে। সেগুলো সমান করছে এক্সকাভেটর।

চৌরাস্তা থেকে সোজা মাওয়া ফেরিঘাট। কিন্তু সেখানে লঞ্চ-স্পিডবোট-বাসে যাত্রী তোলার হাঁকডাক নেই। ঘাট সরিয়ে নেওয়া হয়েছে আরও পুবে, মাওয়া-মুন্সিগঞ্জ সড়কের পাশে শিমুলিয়ায়। কারণ, মূল সেতুর শুরুটা হবে মাওয়া ফেরিঘাট থেকে। মাওয়া আর আড়াই কিলোমিটার দূরের শিমলিয়া ঘাটের মাঝখানে কুমারভোগ গ্রামে নদীর পারে ডেরা গেড়েছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। এটাই পদ্মা সেতুর নির্মাণসামগ্রী রাখার মাঠ (কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড)। তাই এই সড়কটিও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। চায়না মেজর মূল সেতু নির্মাণ করবে।

দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সরাসরি যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণে কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করে যাচ্ছেন। শিগগিরই শুরু হবে পরীক্ষামূলক পাইলিংয়ের (ভিত্তি) কাজ। এই পাইলিংয়ের জন্যই নদীর তিন স্থানে চলছে মাটি পরীক্ষা। মূলত ১২টি ট্রায়াল পাইলিং বা পরীক্ষামূলক মূল ভিত্তির কাজ করা হবে।

একই সঙ্গে চ্যানেলও লাগবে। যেসব স্থানে ট্রায়াল পাইলিং বা মূল ভিত্তি হবে সেগুলোয় পানি থাকতে হবে। এজন্য ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে চ্যানেল করা হচ্ছে। দুটি ট্রায়াল পাইলের মাটি পরীক্ষার কাজ এরই মধ্যে শেষ। ১২টি ট্রায়াল পাইলিং হ্যামারও তৈরি করা হচ্ছে সিঙ্গাপুরে। মাটি পরীক্ষা ও চ্যানেল তৈরীর কাজ শেষ হওয়ার আগেই এসব হ্যামার পদ্মাপাড়ে পৌঁছে যাবে। ট্রায়াল পাইলিং বা পরীক্ষামূলক মূল ভিত্তির কাজ শেষ হওয়ার পর পরই শুরু হবে পদ্মা সেতুর মূল পাইলিং বা মূল ভিত্তির কাজ। স্টিলের তৈরি ১০ ফুট ব্যাসার্ধের এই পাইলিং করা হবে হ্যামারের সাহায্যে। সেতু সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তিন হাজার টন ওজনের এই হ্যামার তৈরী হচ্ছে জার্মানিতে। তৈরিতে সময় লাগে ১০ মাস। গত মে মাসে এর অর্ডার দেওয়া হয়েছে। তাই মাস চারেকের মধ্যেই এই হ্যামার আসবে পদ্মাপাড়ে। তার পরই শুরু হবে মূল ভিত্তি নির্মাণ।

পদ্মা সেতুর দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল ২০১১ সালে। গত ১৭ জুন ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকায় পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে চীনা কোম্পানি চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। চুক্তি মোতাবেক ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু তৈরি করতে চার বছর সময় লাগবে। চুক্তি মোতাবেক ২০১৮ সালের মধ্যে শেষ হবে পদ্মা সেতুর নির্মান কাজ। পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম এবং চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির চেয়ারম্যান লিউ জিমিং নিজ নিজ পক্ষে চুক্তিতে সই করেন।

সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও ২০১৮ সালে পদ্মা সেতুতে সাধারণের চলাচল শুরু ব্যাপারে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যাক্ত করেছেন। তবে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনের কাজেও সম্পৃক্ত মেজর ব্রিজ এবং তাদের বিরুদ্ধে সময়মতো কাজ শেষ না করার অভিযোগ আছে। অাবার, ২০১২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বরেও তখনকার যোগাযোগমন্ত্রী ও বর্তমানে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, ২০১২ সালে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হবে।

এর আগে গত ১০ নভেম্বর ২০১৪ এ পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নদীশাসন কাজের আনুষ্ঠানিক চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। নদীশাসনের কাজ পেয়েছে চীনেরই আরেক প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই ও বেলজিয়ামের জান ডি নাল নামে দুটি প্রতিষ্ঠান অংশ নিলেও আট হাজার ৭০৭ কোটি টাকা দরপ্রস্তাব করে সিনোহাইড্রো কাজটি পায়। তাদের সঙ্গে গত নভেম্বরে পদ্মার দুই প্রান্তে প্রায় ১৩ কিলোমিটার নদীশাসন করার চুক্তি করেছে সেতু বিভাগ।

padma-bridge
পদ্মা সেতু হলে কি হবে?
পদ্মা সেতু হলে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অর্থনীতিতে নজিরবিহীন প্রভাব পড়বে। বর্তমানে এই পথ দিয়ে ১৭ টি ফেরি, ৮৬ টি লঞ্চ ও ২০০ টির বেশি স্পিডবোট চলাচল করে। গড়ে সময় লাগে ২ ঘন্টা। সেতু হয়ে গেলে গাড়িতে করে একই পথ অতিক্রম করতে সময় লাগবে মাত্র ১০ মিনিটেরও কম।

প্রকল্পের সরাসরি সুবিধা পাবে দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯ জেলার মানুষ। এতে এইসব অঞ্চলের জিডিপি বৃদ্ধি পাবে ২.৩ শতাংশ, সারা দেশে ১.২ শতাংশ। সেতু দিয়ে গ্যাস, বিদ্যুত ও অপটিক্যাল ফাইবারের লাইন নেওয়ার ব্যাবস্থা থাকবে।

দুটি টোল প্লাজা, অতিরিক্ত মালবাহী যানবাহন নিয়ন্ত্রনে ওজন মাপার যন্ত্র, পুলিশ স্টেশন, ও জরুরী ব্যবহারের জন্য ভবন নির্মান করা হবে। সেবা এলাকায় অফিস ভবন, ল্যাবরেটরি, মসজিদ, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ডুপ্লেক্স ভবনের মোটেল, পানির ট্যাংক, বিদ্যুতের সাব স্টেশন, অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা থাকবে।

যে কারণে পিছিয়ে যায় পদ্মা সেতু নির্মাণ
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্থিক প্রকল্প হতে যাচ্ছে এই পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিলো, সেটাও অনেক দূর পর্যন্ত গড়িয়েছে। এই প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ২০১২ সালে ২৯০ কোটি ডলারের পদ্মা সেতু প্রকল্পে বাংলাদেশের সাথে ১২০ কোটি ডলার ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল বিশ্বব্যাংক। তবে প্রকল্পের পরামর্শকের কাজ পাইয়ে দিতে এসএনসি লাভালিনের সাথে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ ওঠায় চুক্তি ভেঙে যায়। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন স্থগিত ঘোষণা করে। একইসাথে এডিবি জাইকা ও আইডিবিও চুক্তি স্থগিত করলে পদ্মা সেতু প্রকল্পটি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগে ঘুষ লেনদেনের বা ষড়যন্ত্রের অভিযোগ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের তাগিদে দুদক প্রথমে অনুসন্ধান চালিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ২০১২ সালের ডিসেম্বরে দুদক মামলা করেছিলো। মামলায় সাতজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছিলো। সন্দেহভাজনের তালিকায় রাখা হয়েছিলো সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এবং সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীকে। প্রায় দু’বছর তদন্তের পর দুদকের দেয়া চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি। ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে এ অভিযোগ থেকে অভিযুক্ত সকলকে অব্যাহতি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক।

পরে ১৮ জুনে বিশ্বব্যাংকের ওয়েব সাইটে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক উল্লেখ করেছে, দুদকের তদন্ত স্বচ্ছ ছিল না। সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল হোসেনকে আসামী করা উচিত ছিল। এসএনসি লাভালিনের ঘুষ প্রস্তাব অভিযোগ তদন্তে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সাবেক প্রধান প্রসিকিউটর গাব্রিয়েল মেরিনো ওকাম্পোর নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল দুদফায় বাংলাদেশ সফর করে। কিন্তু দুদক দুর্নীতি তদন্তে তেমন কোন সহযোগিতা না করা এবং সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল হোসেন এবং সৈয়দ আবুল হাসানকে মামলার আসামী করতে রাজি হওয়ায় প্রতিনিধিদলটি ব্যর্থ মনোরথে ফিরে যায়। এরপর বিশ্বব্যাংক চুক্তি বাতিল ঘোষণা করে। বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদনে দুদকের তদন্তকে অস্বচ্ছ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সৈয়দ আবুল হোসেন যোগযোগমন্ত্রী থাকায় তাকেও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে করা মামলায় আসামি করা উচিত ছিল বলে বিশ্বব্যাংক গঠিত বিশেষজ্ঞ প্যানেল অভিমত প্রকাশ করেছে।

তবে প্রথম থেকেই পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোনো ধরনেরর দুর্নীতির কথা অস্বীকার করে আসছে সরকার। পদ্মাসেতুর কাজ দেরিতে শুরু হওয়ার জন্যও সরকার বিশ্বব্যংকের এই অর্থায়ন বাতিলকে দায়ি করে আসছে। গত ৬ আগষ্ট দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন তহবিল বাতিল করা বিশ্বব্যাংকের জন্য ভুল নীতি ছিল বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ায় পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প দুই বছর পিছিয়ে গেছে। ২০১২ সালের বদলে এখন ২০১৪ সাল থেকে কাজ শুরু হচ্ছে। তবে আর্থিকভাবে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হয়নি। আর ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের জন্য অনুরোধ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করে নেয়। এর পরই বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেল এক প্রতিবেদনে বলে যে বাংলাদেশ সরকার প্রতিশ্রুতি অনুসারে দুর্নীতির বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ অনুসন্ধান পরিচালনা করেনি।

অবশেষে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু
পরে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মানের উদ্যোগ নেয়। গত ২২ মে ২০১৪ তারিখে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে পদ্মা সেতুর দরপত্র অনুমোদন করেছে সরকার । এর ফলে মূল সেতু নির্মাণের কাজটি চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডকে দেয়া কাজটি আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি অনুমোদন পায়।

মূল সেতু নির্মাণে এখন আগের বাজেটের চেয়ে তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যয় বাড়বে। কর্তৃপক্ষ বলছে, সময়ের সাথে সাথে নির্মাণ সামগ্রী ও আনুসাঙ্গিক অন্যান্য পণ্যের দাম বৃদ্ধির জন্যই এই ব্যয় বৃদ্ধি হতে যাচ্ছে। অনুমোদিত দরপত্র অনুযায়ী এখন মূল সেতু নির্মাণের ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা৷ এর আগে ২০১১ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে যে সংশোধিত প্রস্তাব (RDPP) অনুমোদন করা হয়েছিল, তাতে মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল আট হাজার ৩৬১ কোটি টাকা।

সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে বলা হয়, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত দরের বিপরীতে সর্বনিম্ন দর প্রস্তাব করায়, আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এবং কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডকে মূল সেতু নির্মাণ কাজের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend