গণমাধ্যমের স্বাধীনতা মালিকরা ভোগ করেন বেশি: গওহর রিজভী
বর্তমানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা গণমাধ্যমের কর্মীদের চেয়ে বেশি ভোগ করেন গণমাধ্যমের মালিকেরা বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী।
মঙ্গলবার রাজধানীর দৃক গ্যালারিতে ‘বাংলাদেশে সাংবাদিকতার সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট’ শিরোনামে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার প্রদান–২০১৪ অনুষ্ঠানে গওহর রিজভী এসব কথা বলেন।
গওহর রিজভী বলেন, মালিকদের স্বার্থ রক্ষা না করলে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের চাকরি হারাতে হয়। করপোরেট মালিকরা এভাবে সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে সরকারের ওপর অপ্রয়োজনীয় চাপ প্রয়োগ করতে চায়। সরকার এখানে কিছু করতে পারে না। কিছু করতে গেলে গণমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপের অভিযোগ আনা হয়। তাই গণমাধ্যমকেই উদ্যোগ নিতে হবে কিভাবে করপোরেটদের কন্ট্রোল কমানো যায়।
তিনি বলেন, তবে মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে কোন ধর্ম বা সম্প্রদায়কে আঘাত দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করার অধিকারও কারো নেই। ২০১৩ সালে মিডিয়াকে ব্যবহার করে এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টা বলেন, গণমাধ্যম ছাড়া গণতন্ত্র টিকবে না। সরকারের জবাবদিহিতা একমাত্র গণমাধ্যমই নিশ্চিত করতে পারে। তবে কোন ধরনের হুমকি বা ভয়ের কাছে সারেন্ডার না করে সংবাদকর্মীদের কাজ করে যেতে হবে।
তিনি বলেন, সভ্যতার ভিত্তি হচ্ছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা। এতে বাধা দিলে কোনো সমাজ উন্নত হতে পারে না। তাই কারো মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরকার বা অন্য কারো বাধা দেয়ার অধিকার নেই। প্রয়োজনে ওই মতামতের ওপর অন্য কেউ চ্যালেঞ্জ করে দ্বিমত প্রকাশ করতে পারেন, কিন্তু বাধা দেওয়ার অধিকার নেই।
তিনি বলেন, সাংবাদিকদেরও নিজেদের নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রফেশনের এথিকসের বাইরে গিয়ে কোনো সংবাদকর্মীর কাজ করা ঠিক নয়। এর ব্যত্যয় ঘটলেই নিজের উপর আঘাত আসে।
সাংবাদকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি আরো বলেন, সত্য যেদিকে নিয়ে যাবে, তাদের সেদিকে যেতে হবে। ড্রাম্যাটিক নিউজ দিলেই হবে না। তথ্যের ওপর নির্ভর করতে হবে। তথ্য না থাকলে ওই সংবাদ প্রপাগান্ডা হয়ে যাবে।
গণমাধ্যমকে আত্মনিয়ন্ত্রণ শিখতে হবে। নিজেদেরকে নিজেদেরই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তা না হলে অন্যরা নিয়ন্ত্রণ করবে বলে সতর্ক করেন তিনি।
আলোচনা শেষে প্রধান অতিথি গওহর রিজভী সেরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য তিন সংবাদকর্মী ও তিন ক্যামেরা পারসনকে ক্রেস্ট, সনদপত্র ও পুরস্কারের অর্থ তুলে দেন। পুরস্কার পাওয়া সাংবাদিকেরা হলেন খুলনার দৈনিক পূর্বাঞ্চল পত্রিকার প্রতিবেদক এইচ এম আলাউদ্দিন, প্রথম আলোর অরূপ রায় ও এসএ টিভির সাজ্জাদ পারভেজ। পুরস্কার হিসেবে এঁদের প্রত্যেককে ৮০ হাজার টাকার চেক ও সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়। এ ছাড়া পুরস্কৃত হয়েছেন এসএ টিভির তিন ক্যামেরাম্যান কামরুল হাসান সেলিম, আবদুল্লাহ আল মামুন ও সালাউদ্দিন তারেক। এঁদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন টিআইবির প্রধান নির্বাহী ইফতেখারুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস, সুমাইয়া খায়ের প্রমুখ।