‘গ্যাসের দাম বাড়াতে চাপ দিচ্ছে বিদেশী কোম্পানিগুলো’
দেশপ্রেমিক জনগণ মঞ্চের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক বলেছেন, ‘বিদেশী কোম্পানিগুলো তাদের গ্যাস উত্তোলনের প্রাথমিক ব্যয় তুলে নেওয়ার লক্ষ্যে সরকারকে গ্যাসের দাম বাড়ানোর চাপ দিচ্ছে।’
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে সমসাময়িক বিষয়ের ওপর ২৮৪ নম্বর অবস্থানপত্র তুলে ধরে তিনি এ কথা বলেন।
গ্যাসের দাম বাড়নোর বিষয়টি কতটা দরকার এই প্রশ্ন করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন পেট্রোবাংলার প্রস্তাবের ভিত্তিতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। পেট্রোবাংলা গত ৩০ অক্টোবর দাম বাড়ানোর পুনঃপ্রস্তাব দেয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী ৩০ সেপ্টেম্বর গ্যাসের দাম বাড়নোর প্রস্তাব অনুমোদন করেন।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘ওই প্রস্তাবে প্রতি মাসে গৃহস্থালী সংযোগে একটি চুলার খরচ ৮৫০ টাকা এবং দুই চুলার খরচ ১ হাজার টাকা ধার্য করার কথা আছে। বাংলাদেশে গ্যাসের চাহিদা বর্তমানে ৩০০০ এমএম সিএফ/প্রতিদিন, উত্তোলন হয় ২৪০০ এমএম সিএফ/প্রতিদিন। বর্তমান মজুদের পরিমাণ ১০-১২ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিট, যাতে ১০ বছর চলতে পারে। আমাদের উত্তোলনের শতকরা ৪১ ভাগ রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রে, ১৭ ভাগ ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে, ১৭ ভাগ শিল্পে, ৮ ভাগ সার উৎপাদনে, ৫ ভাগ সিএনজি, ১১ ভাগ গৃহস্থালী ও ১ ভাগ অন্যান্য কাজে খরচ হয়।’
বিভিন্ন সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ম. ইনামুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশে ২০ লাখ গৃহস্থালী পাইপ গ্যাস সংযোগ আছে। এর মাধ্যমে ৭ ভাগ দেশবাসী গ্যাস পায়। বাকি ৯৩ ভাগ মানুষ এলপিজি, কেরোসিন বা জ্বালানি খড়ি ব্যবহার করে।’
তিনি বলেন, ‘একটি পরিবার গড়ে দুটি এলপিজি বোতল (প্রত্যেকটি ১২.৫ কেজি) ব্যবহার করে মাসে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা খরচ করে। কেরোসিন ও খড়িতে আরও বেশি খরচ হয়। সেখানে প্রতি মাসে একটি দুই চুলার পাইপ সংযোগের খরচ ৪৫০ টাকা। একটি দুই চুলা মাসে গড়ে ৮৮ ঘনফুট গ্যাস খরচ করে। যার দাম প্রায় ৪ হাজার টাকা।’
বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘এই গ্যাস বিদেশ থেকে আমদানি করলে খরচ পড়ত ৩ হাজার ৭৫০ টাকা।’ এই যুক্তি দেখিয়ে সরকার গৃহস্থালীসহ সবক্ষেত্রে গ্যাসের দাম বাড়ানোর অনুমোদন দিয়েছে বলে এই প্রকৌশলী জানান।
ম. ইনামুল হক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে গ্যাসের দাম কিছুটা বাড়ালেও বিগত পাঁচ বছরে আর বাড়ায়নি। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ার যুক্তি দেখিয়ে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে চলে।’
তিনি বলেন, ‘পেট্রোবাংলার প্রস্তাবে আওয়ামী লীগ সরকার গ্যাসের দাম বাড়ালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বাড়বে। এতে বিদ্যুতের দাম আরও বাড়বে। গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে জ্বালানি খরচ, যাতায়াতের খরচ, শিল্পপণ্যের দামও বাড়বে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এতে ধনী লোকদের অসুবিধা না হলেও সাধারণ জনগণের উপর জীবনযাত্রার খরচের বোঝা চেপে বসবে।’
ম. ইনামুল হক বলেন, ‘গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এখন আতঙ্কে আছে।’ আওয়ামী লীগ সরকার সাধারণ মানুষের স্বার্থ উপেক্ষা করলে ভুল করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রাজধানীর পরিবাগের সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে এই অবস্থানপত্রটি তুলে ধরা হয়। এ সময় দেশপ্রেমিক জনগণের মঞ্চের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।