জাতীয়ভাবে বিজয় দিবস উদযাপন কমিটিতে সরকার নেই
এবার সরকারের পাশপাশি জাতীয়ভাবে মহান বিজয় দিবস উদযাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত। এ জন্য ‘বিজয় দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটি’ নামে একটি সংগঠন করেছেন।
গত শনিবার দুপুরে শাহবাগে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই তথ্য জানায় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত। ওই সংবাদ সম্মেলনে গণজাগরণ মঞ্চের (একাংশ) মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার, নারী নেত্রী খুশি কবির, ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিনীসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইমরান এইচ সরকার দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘এই কমিটির ২০০১ সদস্য বিশিষ্ট একটি উপদেষ্টা পরিষদ রয়েছে। ৫০০১ সদস্যের এই জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাফর ইকবাল, প্রধান উপদেষ্টা বিশিষ্ট সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন এমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
সরকারের পাশাপাশি অন্য কেউ বিজয় দিবস জাতীয়ভাবে উদযাপন করতে পারে কি না? কিংবা এতে সরকারের অনুমতি নেওয়া হয়েছে কি জানতে চাইলে আবুল বারকাত দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘একশবার পারে। না পারার কিছু নাই। কোথায় লেখা আছে কাগজে কলমে যে অন্য কেউ এটি উদযাপন করতে পারবে না। বিজয় দিবস কি কারও পৈতৃক সম্পত্তি?’
তিনি বলেন, ‘কেউ যদি জাতীয়ভাবে বিজয় দিবস পালন করে তার কারও অনমতি নেওয়ার প্রয়োজন নাই। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, আপনি যদি বিশটা স্কুল নিয়ে বিজয় দিবস উদযাপন করেন তাহলে কারও অনুমতি নেওয়া লাগবে?’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি একজন নাগরিক আমি কার অনুমতি নিবো। সংবিধানের ৭/ক এ লেখা আছে, জনগণই প্রজাতন্ত্রের মালিক। জনগণের বিপক্ষে যে রায় বা আইন যতটুকু যাবে ততটুকু অকার্যকর হবে। আমরা জনগণের বৃহৎ একটা অংশ। ২০০১ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটির একটি উপদেষ্টা পরিষদ আছে। ৫০০১ সদস্য বিশিষ্ট একটি জাতীয় কমিটি আছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের যত বিশ্ববিদ্যালয়, যত কলেজ আছে সবগুলোর উপাচার্য, অধ্যক্ষ সকলেই এ কমিটির সঙ্গে আছে। ইউনিয়ন, উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ের সকল প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের প্রধানশিক্ষকরাও লিখিতভাবে এর সদস্য।’
অন্য সংগঠনগুলো তো নিজ নিজ সংগঠনের নামে বিজয় দিবস উদযাপন করে থাকে আপনারা কেন জাতীয়ভাবে উদযাপন করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিজয় দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটি এটাই একটি সংগঠন। শুধু বিজয় দিবস উদযাপনই হবে না, এই কমিটি স্বাধীনতা দিবসসহ যতগুলো জাতীয় দিবস আছে সবগুলো দিবসই উদযাপন করবে।’
আবুল বারকাত বলেন, ‘যদি এটা বিএনপি জামায়াতের সরকার হত, সেখানে মতিউর রহমান নিজামী মন্ত্রী হত তবে আমরা কি সেই সরকারের কাছে অনুমতি নিতে যেতাম?’
তিনি আরও বলেন, ‘জামায়াত শিবির, হেফাযত ইসলামসহ ধর্মভিত্তিক কোনো রাজনৈতিক দল ও সাম্প্রদায়িক নাম নিয়ে যদি কেউ এখানে আসে তাকে ঢুকতে দেওয়া হবে না।’
এ ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ফ ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘নিজ সংগঠনের নামে যে কোনো সংগঠন বিজয় দিবস উদযাপন করতে পারে। জাতীয়ভাবে উদযাপনের এখতিয়ার অন্য কারও নেই। সমগ্র জাতির পক্ষে কেউ এটি জাতীয়ভাবে উদযাপন করতে পারে না। তারা তো কোনো নির্বাচিত সংগঠনও নয়। এ নৈতিক অধিকার তো তাদের নেই। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তখন তারা এটি রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপন করবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি অনুরোধ করব তারা যেন বিজয় দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটি এই নাম ব্যবহার না করে অন্য কোনো ব্যানারে বিজয় দিবস উদযাপন করুক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছড়িয়ে দিক। যেহেতু এটি সরকার কর্তৃক রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হয়, সেহেতু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরের কারও জাতীয়ভাবে এটি উদযাপন করা বাঞ্ছনীয় নয়।’
উল্লেখ্য, গত বছরও একই নামে এই কমিটি বিজয় দিবস উদযাপন করেছিল।