কলঙ্ক পিছু ছাড়ছে না ছাত্রলীগের
কলঙ্ক যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না ছাত্রলীগের। কলঙ্ক মোচনে ঝাড়ু হাতে নামা ছাত্রলীগের ‘ক্লিন ক্যাম্পাস এ্যান্ড সেফ ক্যাম্পাস’ কর্মসূচি পালনের পর আবার নতুন করে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে সংগঠনটির কর্মীরা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে রবিবার সংগঠনের এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। এর পরই গণমাধ্যমসহ সারা দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
ক্লিন ক্যাম্পাস কর্মসূচির মাধ্যমে সংগঠনটি শিক্ষার্থীদের মাঝে যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল তাও বেশি দিন ধরে রাখতে পারলো না।
চবির সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ দ্য রিপোর্টকে বলেন, যারা আজকে চবিতে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে তাদের গ্রেফতার করার জন্য আমি প্রশাসনকে আহ্বান জানাচ্ছি। এদের কারণে আমাদের সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, আজকে যারা এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে আমরা আগেই তাদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছি। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাদের বিরুদ্ধে আগেই প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে আজকে এ ঘটনা ঘটতো না।
প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের পরও সংঘর্ষ : এর আগে চবি ছাত্রলীগের কোন্দল থামাতে প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। গত ১২ নভেম্বর চট্টগ্রাম সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দ্বন্দ্ব নিয়ে ‘ক্ষোভ ও বিরক্তি’ প্রকাশ করেন। ছাত্রলীগের এই দ্বন্দ্ব নিরসন তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনকে দায়িত্ব দেন। পরে ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের’ ঘোষণা দেয় চবি ছাত্রলীগের কর্মীরা। কিন্তু এর পরও সংঘর্ষ বাধালো চবি ছাত্রলীগ।
এর আগে সর্বশেষ গত ২০ নভেম্বর সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ওই ঘটনার পরও ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয় ছাত্রলীগ। সারা দেশে সংগঠনটি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। নিজ ছাত্র সংগঠনকে নিয়ে বিব্রত অবস্থায় পড়ে অভিভাবক সংগঠন আওয়ামী লীগও।
এ দিকে ক্লিন ক্যাম্পাস কর্মসূচি শেষ হতে না হতেই গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হল শাখা ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় ইয়াবা চোরাচালানের অভিযোগ ওঠে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লিন ক্যাম্পাসের মত কর্মসূচিতে জনপ্রিয়তার পর উজ্জীবিত সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ যখন আরো ভাল কোনো কর্মসূচির কথা ভাবছিলেন তখনই এমন অভিযোগ উঠল।
বর্তমান সরকারের মেয়াদে বিভিন্ন সময়ে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সমালোচিত হয়েছে ছাত্রলীগ। এ সময়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রায় চার শতাধিকবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে জানা যায়। যার বেশিরভাগই ঘটেছে নিজেদের মধ্যে। পরিস্থিতি সামাল দিতে অনেক জায়গায় এ সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা হয়। ছাত্রলীগের এমন সংঘর্ষের ঘটনায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও অচল হয়ে পড়ে।
ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, গত ১৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। সে সময় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ছাত্রলীগকে ভাল কাজ করার পরামর্শ দেন। জয় বলেন, ছাত্রলীগের বদনাম হয়, নেতাকর্মীদের সেই ধরনের কোনো কাজ করা ঠিক হবে না। যারা সন্ত্রাস করবে তাদের সহ্য করা হবে না বলে জানিয়ে দেন তিনি।
এরপর জয়ের পরামর্শেই ছাত্রলীগ গত ১ ডিসেম্বর থেকে ‘ক্লিন ক্যাম্পাস, সেফ ক্যাম্পাস’ কর্মসূচি ঘোষণা করে। নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিষ্কার রাখার এই কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। ওই সাড়ায় উদ্দীপ্ত হয়ে আগামীতে আরও ভাল কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা সিদ্ধান্ত নেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।
নতুন কর্মসূচি প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ জানান, কিছু খারাপ লোকের কারণে আমাদের সব অর্জন নষ্ট হয়। বিভিন্ন ভাল কাজের কর্মসূচি আগামীতে অব্যাহত থাকবে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও বিজয় দিবস শেষে আবার আমরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবো।