ঘষিয়াখালি খালের চিংড়িঘের বন্ধের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
সুন্দরবন এলাকায় ঘষিয়াখালি খালের প্রবাহ অব্যাহত রাখতে খালের মুখ বন্ধ করে গড়ে ওঠা চিংড়িঘের বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে এ নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
সুন্দরবনে তেলের জাহাজ ডুবির ঘটনার বিষয়ে খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুস সামাদকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুন্দরবনের বিষয়টি আরও ভালোভাবে মনিটরিং করতে হবে। তেলটা সরানো ও এতে যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, তেলটা ছড়িয়ে পড়েছে, স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে তেলটা সরানো হচ্ছে। এটা বেশ কার্যকর পদ্ধতি, মানুষ উৎসাহ ভরে কাজটা করছে। আমি আশা করি এটা কার্যকর হবে। ভবিষ্যতে এ বিষয়টা দেখতে হবে।
বিভাগীয় কমিশনারকে উদ্দেশ করে আরও বলেন, ‘মংলা বন্দরে আসতে সুন্দরবন এলাকায় ঘষিয়াখালি খাল ছিল। এটা দিয়ে যান চলাচল করতো, এটাই ছিল নৌপথ। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে মংলা বন্দর বন্ধ করে দেওয়ায় ধীরে ধীরে সিল্ট (পলি জমে বন্ধ) হয়ে যায়। অনেকদিন ড্রেজিং করা হয়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, ঘষিয়াখালি খালের পানি প্রবাহের জন্য ছোট ছোট শাখা খাল রয়েছে। প্রায় জায়গায়ই শাখা খালগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ ওখানে চিংড়ির ঘের করা হয়েছে। একটা উদ্যোগ আপনাকে নিতে হবে। সার্ভে করে দেখতে হবে, কোন কোন এলাকায় এভাবে চিংড়িঘের করার কারণে খালে পানি আসা বন্ধ হয়ে গেছে। যেখানে যেখানে পানি প্রবাহের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে, খালের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সেখানে সেখানে ঘের বন্ধ করে দিতে হবে। যারাই ঘের করুক এটা সরিয়ে দিতে হবে।’
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে ইতোমধ্যে ঘষিয়াখালি খাল ড্রেজিং (খনন) করার জন্য বলা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন যে পথ দিয়ে জাহাজ চলাচল করছে তাতে সাত-আট মাইল ঘুরে আসতে হচ্ছে। এ খাল খুলে দেওয়া হলে সাত-আট মাইল পথ কম হবে। কথাটা আমি দীর্ঘদিন থেকে বলে আসছি। যেহেতু সিল্ট বেশি পড়ে গেছে তাই বড় একটা উদ্যোগ নেওয়া দরকার। ক্যাবিনেট সেক্রেটারি আরও যারা আছেন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।’
কপোতাক্ষ নদ খনন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
খুলনা বিভাগীয় কমিশনার প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, সুন্দরবনের শ্যালা নদী থেকে তেল সংগ্রহ কার্যক্রম জোরদার করে আরও নৌকা ও লোকজন নামানো হয়েছে। পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক আছে। গতকাল (রবিবার) পরীক্ষা করে দেখা গেছে পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা পাঁচ দশমিক সাত।
ঘোষিয়াখালি খাল খনন কার্যক্রম তদারকিতে কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, তবে ধীর গতিতে কাজ এগোচ্ছে। কাজের গতি বাড়াতে আপনাদের দিক থেকেও বলা দরকার।
গত ৯ ডিসেম্বর বাগেরহাটের সুন্দরবনের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালা নদীতে অপর একটি জাহাজের ধাক্কায় ‘সাউদার্ন স্টার-৭’ ডুবে যায়। সাউদার্ন তিন লাখ ৫৭ হাজার লিটার ফার্নেস ওয়েল বহন করছিল। ডুবে যাওয়া জাহাজের তেল নদীতে ছড়িয়ে পড়ায় সুন্দরবনের পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এ ছাড়া গোপালগঞ্জ ও যশোর জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সঙ্গেও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলেন।
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) খলিলুর রহমান ও যশোরের জেলা প্রশাসক মো. হুমায়ুন কবীর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলে দরে কথা বলেন দুই জেলার পুলিশ সুপাররাও (এসপি)।
গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ করে বলেন, চিংড়ির খাবার হিসেবে ব্যাপকভাবে শামুক ব্যবহৃত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে খাল-বিল শামুক শূন্য হয়ে যাবে। ইকো ব্যালেন্স নষ্ট হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নজর দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
যশোর জেলা প্রশাসক সম্প্রতি ভারতের স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যৌথ সভার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আশা করি মাদকসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে এ সভা কার্যকর হবে। সীমান্ত দিয়ে যাতে ভেজাল সার দেশে আসতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ধনী-দারিদ্র্যের বৈষম্য কমাতে চাই। এ জন্য আমরা নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। আমাদের পদক্ষেপের কারণে ইতোমধ্যে আমরা দারিদ্র্যের হার কমাতে সক্ষম হয়েছি। এখন দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক চার শতাংশ। আমাদের এ মেয়াদে আরও অন্তত ১০ ভাগ দারিদ্র্যের হার কমাতে চাই। মাঠ পর্যায়ে আপনারা যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমাদের মানসিক অবস্থা বুঝে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবেন।