এদেশের মানুষ শান্তিকামী ও গণতন্ত্রকামী: রাষ্ট্রপতি
এদেশের মানুষ শান্তিকামী, গণতন্ত্রকামী। তাঁরা গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা চায়, চায় উন্নয়ন। কিন্তু আমাদের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার পথ মসৃণ ছিল না। বিগত চার দশক যাবৎ নানা চড়াই-উতরাই এর মধ্যদিয়ে দেশে আজ গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি এ সব কথা বলেন। এ ছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক-সমর্থকসহ সর্বস্তরের জনগণকে তিনি বিজয়ের এই দিনে শ্রদ্ধা জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা এদিন চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করি। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি দেশবাসী এবং বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। রাষ্ট্রপতি দলমতনির্বিশেষে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও চেতনা বাস্তবায়নে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে অবদান রাখার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, বাঙালির স্বাধীনতার ইতিহাসে মহান বিজয় দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ঐতিহাসিক স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে তা এই দিনে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মধ্যদিয়ে পরিপূর্ণতা পায়। পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। তিনি মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহিদদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে বলেন, তাঁদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। রাষ্ট্রপতি বানীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিনম্রচিত্তে পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু শত জেল-জুলুম উপেক্ষা করে বাঙালিদের বিশ্বদরবারে আপন সত্তায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের বিকাশ, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়ন, নারী শিক্ষার সম্প্রসারণ, স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ, কৃষির উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ সাধন ইত্যাদি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তৈরি পোশাক, নিটওয়্যার, হিমায়িত পণ্য, পাট ও চামড়াজাত পণ্য, চা, ফার্মাসিউটিক্যালস্, সিরামিক, হস্ত ও কুটিরজাত পণ্যের পাশাপাশি জাহাজশিল্প নতুন করে স্থান করে নিয়েছে। আমাদের প্রবাসী ভাইয়েরা তাঁদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশে প্রেরণের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন। মাতৃভূমির কল্যাণে তাঁদের এ অবদানের জন্য তিনি ধন্যবাদ জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, সরকার জনগণের কল্যাণে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করছে। ফলে নানা সাফল্য অর্জিত হচ্ছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে চলেছে। সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়, জাতির পিতা ঘোষিত এ মূলমন্ত্রকে ধারণ করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিবেশী দেশসহ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে। জাতিতে জাতিতে দেশের এ যোগাযোগ উত্তরোত্তর আরও গভীর হবে। বাংলাদেশ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠাসহ বৈশ্বিক জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন কার্যক্রম আজ বিশ্বপরিম-লে প্রশংসিত হচ্ছে।
আবদুল হামিদ বলেন, বর্তমান সরকার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে ভিশন ২০২১ ঘোষণা করেছে। দেশের বিপুল মানবসম্পদ ও তথ্যপ্রযুক্তির সার্থক ব্যবহারের মাধ্যমে সরকার এ ভিশন বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবো।