বঙ্গবন্ধুকে ‘রাজাকার’ বললেন তারেক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘রাজাকার, খুনি ও পাকবন্ধু’ বললেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল সোমবার পূর্ব লন্ডনের একটি হলে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত বিজয় দিবসের আলোচনায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে কেউ যদি পাকিস্তানের পক্ষে স্লোগান দেয়, তাহলে সেই লোকটিকে কী নামে আখ্যায়িত করা যেতে পারে? তারেক রহমানের এমন প্রশ্নে হলভর্তি নেতা-কর্মীরা বলে ওঠেন, ‘রাজাকার, রাজাকার।’ তারেক মাথা খানিকটা ঘুরিয়ে কানের কাছে হাত রেখে বললেন, ‘আরেকটু জোরে বলুন, বুঝি না।’ নেতা-কর্মীরা আরও উচ্চ স্বরে বললেন, ‘রাজাকার।’ তারেক তখন নানা কথা বলে বলেন, ‘তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বলছি, শেখ মুজিব রাজাকার, খুনি ও পাকবন্ধু ছিলেন।’
দীর্ঘ পৌনে দুই ঘণ্টার বক্তৃতায় তারেক রহমান দাবি করেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিব পরিবারের কোনো অবদান নেই। তাঁর দাবি, ‘লাখো মানুষ যখন রণাঙ্গনে, শেখ মুজিবের পরিবার তখন খুনি ইয়াহিয়া খানের পয়সায় খানসেনাদের পাহারায় নিরাপদে দিন কাটাচ্ছেন ঢাকায়। আওয়ামী লীগের নেতারা কলকাতায়। আর শখের বন্দী শেখ মুজিবের হাতে এরিনমোর পাইপ।’ আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধকালীন দল হলেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আওয়ামী লীগ ৪০ বছর ধরে মুক্তিযুদ্ধের মিথ্যা ইতিহাস বলে আসছে দাবি করে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান দাবি করেন, ‘শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের জন্য এখন লালসালু। এই লালসালুকে ঘিরে থাকে ভণ্ডরা।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একাধিকবার ‘রং হেডেড ও দখলদার’ বলে উল্লেখ করেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ছেলে তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘আর দখলদার রং হেডেড শেখ হাসিনা যখনই বিপদে পড়ে, জনগণকে ধোঁকা দিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দোহাই দেয়।’ আওয়ামী লীগকে দেখামাত্র ‘রাজাকার’ বলার পরামর্শ দেন তিনি।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় করা মামলাসহ বিভিন্ন মামলার ফেরারি আসামি তারেক দীর্ঘ প্রায় ছয় বছর ধরে লন্ডনে বাস করছেন। তাঁর দাবি, ‘শেখ হাসিনা প্রথম জামালপুরের জেলখাটা রাজাকার মাওলানা নুরুল ইসলামের হাতে বাংলাদেশের পতাকা তুলে দিয়েছিলেন। তাঁর পরিবারেই রাজাকারের বংশবিস্তার হচ্ছে। রাজাকাররা তাঁর মন্ত্রিসভায় রয়েছে।’
‘দৃশ্যপট একাত্তর: একুশ শতকের রাজনীতি ও আওয়ামী লীগ’ শীর্ষক বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘শেখ হাসিনার বেয়াই খন্দকার মোশাররফ হোসেন ফরিদপুরে ’৭১ সালের নামকরা রাজাকার। তাঁর পিতা নুরা রাজাকারের নাম ফরিদপুরে রাজাকারদের তালিকায় ১৮ নম্বরে। শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বেয়াই মুসা বিন শমসের।’
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান প্রমুখ।
বিজয় দিবসে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, তাজউদ্দীন আহমদ, জেনারেল ওসমানীসহ মুক্তিযুদ্ধের সময় যাঁরা ৫৬ হাজার বর্গমাইল এলাকার ভেতরে থেকে সাহসের সঙ্গে লড়াই করেছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘আমি বাকশালের জনক শেখ মুজিবুর রহমানকেও স্মরণ করছি, যিনি পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের জন্য দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। জনগণ স্বায়ত্তশাসন নয়, চেয়েছিল স্বাধীনতা। আর মওলানা ভাসানীই প্রথম ব্যক্তি, যিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার আওয়াজ তুলেছিলেন।’
ইতিহাসবিষয়ক দীর্ঘ বক্তৃতায় তারেক রহমান নিজের বক্তব্যের পক্ষে এ কে খন্দকার, মহিউদ্দিন আহমদ, বদরুদ্দীন উমর, অলি আহাদ, সিরাজুল আলম খান, মঈদুল হাসানসহ বিভিন্ন লেখকের উদ্ধৃতি তুলে ধরেন। এবারও তারেক বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত হাজির করে দাবি করেন, তাঁর পিতা জিয়াউর রহমানই ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক এবং প্রথম রাষ্ট্রপতি। তিনি খালেদা জিয়ার ‘দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’ আন্দোলনে সবাইকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।