রওশন গৃহপালিত বিরোধী দলের নেত্রী বটে!
বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভার স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে গৃহপালিত বিরোধী দলের নেত্রীর ভূমিকাই পালন করলেন বেগম রওশন এরশাদ। তিনি কোথায় দাঁড়াবেন, কখন ফুল দেবেন, সেটার জন্য সরকারি দলের আদেশ-নির্দেশের অপেক্ষা করেন। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে আওয়ামী লীগের সিনিয়র এক নেতার ‘যেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছেন সেখানেই থাকুন’ পরামর্শ পেয়েই তিনি দাঁড়িয়ে থাকেন।
দেশ-বিদেশে বিতর্কিত ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর স্বামীকে ল্যাং মেরে সবাইকে অবাক করে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হয়েছেন বেগম রওশন এরশাদ। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো স্বামী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদকে করেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। অতঃপর দেশের জনগণের বদলে বিদেশিদের ওপর অধিক নির্ভরশীল বিএনপি নেত্রী হঠাৎ আন্দোলন থেকে সরে আসার ঘোষণা দেয়ায় দৃশ্যমান ঝঞ্ঝামুক্ত দেশ চলছে। সরকারের মন্ত্রিসভায় একমন্ত্রী, দুই প্রতিমন্ত্রী নিয়ে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করছে জাতীয় পার্টি। এই এক বছরে ক্ষমতার হালুয়া-রুটি নিয়ে নিজেদের মধ্যে কয়েকবার কোন্দলে জড়িয়ে পড়েছে দলের নেতারা। সে কোন্দল মেটাতে এবং একে অপরের বিরুদ্ধে নালিশ করতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ছুটে গেছেন দলের নেতারা। দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমদ বাবলু অবশ্য অনেক আগেই বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের নেত্রী। মিডিয়াগুলোতে খবর প্রচার হয় জাতীয় পার্টির নিয়ন্ত্রণ প্রধানমন্ত্রীর হাতে। ভোট থেকে বঞ্চিত জনগণকে জাতীয় পার্টি বিরোধী দল বোঝাতে সরকারের নীতিনির্ধারকদের অনুমতি নিয়ে জাতীয় সংসদে বিতর্কের ঝড় তোলে, গরম করে সংসদ। সরকার সমর্থিত মিডিয়াগুলো সে খবর ফলাও করে প্রচার করে জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করে জাতীয় পার্টি সংসদে রিয়াল অপজিশন পার্টি। এভাবেই চলছে এক বছর।
নিন্দুকের ভাষায় সংসদে জাতীয় পার্টি যে গৃহপালিত বিরোধী দল সেটা গতকাল বিজয় দিবসে প্রমাণ করলেন বেগম রওশন এরশাদ। সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে তিনি প্রমাণ করলেন সরকারের ইচ্ছার পুতুল তিনি। স্মৃতিসৌধের চত্বরে তিনি কোথায় দাঁড়াবেন, কখন ফুল দেবেন- এর জন্যও সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করতে হয়। রেওয়াজ অনুযায়ী স্বাধীনতার পর কখনোই জাতীয় স্মৃতিসৌধে একযোগে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানায়নি সরকারি ও বিরোধে দল। বরাবরই প্রথমে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, তার পর বিরোধীদলীয় নেতা শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতেন স্মৃতিসৌধে। এবার মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে স্মৃতিসৌধে পৌঁছে বিপাকে পড়েন গৃহপালিত বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ। সেখানে তো সবাই ভিভিআইপি। তাই, অতিরিক্ত মর্যাদা আর প্রটোকল রক্ষার জন্য কাউকেই ধারে-কাছে পাননি পুতুল নেত্রী রওশন এরশাদ। কোথায় দাঁড়াবেন, কখন ফুল দেবেন, তা বুঝতে না পেরে তিনি জাপা মহাসচিবকে উদ্দেশ করে বলেন, আমরা দাঁড়াব কোথায়? এই বাবলু, তুমি কথা বল ওদের সাথে। আচ্ছা, এখানে আমাদের জায়গাটা কোথায়?
প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী পৌঁছানোর আগেই প্রথা অনুযায়ী জাতীয় স্মৃতিসৗধে পৌঁছে যান প্রধান বিচারপতি, স্পিকার, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, তিন বাহিনী প্রধান, কূটনীতিকসহ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা। সেখানেই পৌঁছেই সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এইচ এম এরশাদ প্রটোকলে স্পিকারের বেশ পাশেই অবস্থান নেন। তাকে স্পিকার ও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তাদের সারির মাঝামাঝিতে দেখা যায়।
গৃহপালিত নেত্রী রওশন এরশাদ কি করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। তিনি এ পরিস্থিতির মধ্যে সামনে থাকা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর কাছেও জানতে চান, কোথায় দাঁড়াবেন। জবাবে আমু বলেন, ঘোরাঘুরি না করে যেখানে আছেন, সেখানেই দাঁড়িয়ে যান। প্রধানমন্ত্রী এসে গেলে পরে এ জায়গাটুকুও পাবেন না। অতঃপর, নির্দিষ্ট বেষ্টনীর বাইরে অবস্থান নেন গৃহপালিত বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। এ সময় আওয়ামী লীগের মতো সড়কে জাতীয় পার্টির তোরণ ও নেতাকর্মীরা না থাকায় দলীয় নেতাদের ওপর তাকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়।