খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেয়া ২২ কর্মকর্তার সম্পদের খোঁজে এনবিআর
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার গুলশান কার্যালয়ে বৈঠকে অংশ নেয়া প্রশাসনের শীর্ষ ২২ জন কর্মকর্তা- কর্মচারীর আয়-ব্যয় সংক্রান্ত হিসাব খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর গুলশানের কার্যালয়ে ‘সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র করতে’ এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী বৈঠক করেছেন বলে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, এনবিআরের তদন্তে এসব ব্যক্তির আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য আছে কি না, তা যাচাই করা হবে। স্থায়ী-অস্থায়ী সম্পদ বৃদ্ধির পরিমাণও দেখা হবে।
প্রাথমিক তদন্তে ২২ জনের কারো আয়-ব্যয় ও সম্পদের হিসাবে গরমিল পাওয়া গেলে ওই ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব তলব করা হবে। তদন্ত শেষে ২২ জনের কারো অবৈধ সম্পদের বা আয়ের তথ্য পাওয়া গেলে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন আকারে জমা দেওয়া হবে। তদন্ত করতে এনবিআরের কর্মকর্তাদের নিয়ে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
চলতি সপ্তাহে ২২ কর্মকর্তা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যাঁদের আয়কর নথি আছে, তা সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা হবে।
আগামী রবিবার থেকে এসব কর্মকর্তা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের আয়-ব্যয় ও সম্পদের পরিমাণ খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করবে এনবিআরের তিন সদস্যের কমিটি। তদন্তে এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বাড়ি, ফ্ল্যাট, গাড়ি ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব নেওয়া হবে।
এসব ব্যক্তির মধ্যে যাঁরা আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন তাঁদের গত পাঁচ করবর্ষে আয়কর রিটার্নে জমা দেওয়া তথ্য খতিয়ে দেখা হবে। রিটার্নে দেওয়া তথ্যের সত্যতা যাচাই করা হবে। বিশেষভাবে রিটার্নে স্ত্রী ও সন্তানদের নামে থাকা কোনো সম্পদ গোপন করা হয়েছে কি না তা দেখবে এনবিআরের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি।
এনবিআরের তদন্তে ওই সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্ত্রী ও সন্তানদের হিসাবও যাচাই করা হবে। স্ত্রী ও সন্তানদের আয় আছে কি না তা দেখা হবে। আয় থাকলে তা কোন কোন খাত থেকে আসছে, তা খতিয়ে দেখা হবে। তাদের নামে স্থায়ী ও অস্থায়ী সম্পদের পরিমাণ কত, তা-ও হিসাব করা হবে।
২২ ব্যক্তি ও তাঁদের স্ত্রী ও সন্তানদের ব্যক্তিগত জীবনযাত্রার মান কেমন তারও খোঁজ নেওয়া হবে। বিশেষভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে বেতন পান তার সঙ্গে জীবনযাত্রার মানের সমন্বয় আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। বেতনের বাইরে কোনো ব্যবসা বা আয়ের বিষয়ে খোঁজ করবেন এনবিআরের কর্মকর্তারা।
ওই সব ব্যক্তির আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সমন্বয় পাওয়া না গেলে ব্যাংক হিসাব তলব করা হবে। এ ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তিদের একক বা যৌথ নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এফডিআর, যেকোনো মেয়াদি আমানতের হিসাব, যেকোনো ধরনের বা মেয়াদের সঞ্চয়ী হিসাব, চলতি হিসাব, ঋণ হিসাব, ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড, ভল্ট, সঞ্চয়পত্র বা যেকোন সেভিংস ইনস্ট্রুমেন্ট হিসাবসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হবে। বর্তমানে বন্ধ আছে বা চলমান সব হিসাবই যাচাই করা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এনবিআরের কাছে সব করদাতাই সমান। এনবিআর বিভিন্ন করদাতার আয়-ব্যয় ও সম্পদের পরিমাণ কত বা কী পরিমাণ বাড়ছে, তা যাচাই করে থাকে।
এসব হিসাব থেকে কর দিচ্ছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখে। তাই ২২ কর্মকর্তা-কর্মচারীর হিসাব দেখা বিশেষ কিছু নয়। এসবই এনবিআরের নিয়মিত কাজের অংশ।
জানা গেছে, এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংঘবদ্ধ করে সরকারবিরোধী বড় ধরনের আন্দোলনের পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিভিন্ন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব গোয়েন্দা প্রতিবেদনের অনুলিপি এনবিআরেও পাঠানো হয়েছে।