রুবেলকে বিয়ে করার প্রশ্নই ওঠে না: হ্যাপি
ক্রিকেটার রুবেল হোসেনকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে চলচ্চিত্র অভিনেত্রী নাজনীন আক্তার হ্যাপি বলেছেন, রুবেলকে বিয়ে করার প্রশ্নই ওঠে না। সিদ্ধান্ত বদলের কারণ হিসেবে রুবেলের সাথে পরিচয়ের সূচনালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত গড়ে উঠা সম্পর্কের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন হ্যাপি।
যদিও হ্যাপি এর আগে বিয়ে করতে আগ্রহ পোষণ করে একমাত্র শর্ত দিয়ে বলেছিলেন, রুবেল বিয়ে করতে রাজী হলে মামলা তুলে নিব।
মঙ্গলবার হ্যাপি আবেগতাড়িত কণ্ঠে তার বলেন, রুবেল গতকাল সোমবার জামিন পাওয়ার পর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে যেভাবে কথা বলেছে, তাতে তাকে বিয়ে করার প্রশ্নই আসে না।
এ সময় তিনি আরো বলেন, রুবেল কীভাবে এত বড় সত্য ঘটনাকে অস্বীকার করতে পারে। যখন সে কথাগুলো বলছিল, তখন আমি অবাক হয়েছিলাম। বোবার মতো নিজেই নিজেকে জিজ্ঞাসা করছিলাম, আমি কার সঙ্গে সম্পর্ক করেছিলাম। কাকে ভালোবাসি আমি, কার কাছে আমি সবকিছু উৎসর্গ করেছিলাম। এ কি সেই রুবেল, নাকি অন্য কেউ। আমি তো ক্রিকেটার রুবেলকে ভালোবাসি। তাকে ঘিরেই তো সব স্বপ্ন বোনা হয়েছিল। আজ মনে হচ্ছে, সেগুলো মারাত্মক ভুল ছিল।
কান্না সামলাতে না পেরে অনেকক্ষণ চুপ করে থাকার পর হ্যাপি পুনরায় বলেন, আমি মামলা করেছি, বিষয়টি সমাধানের জন্য। একটা মীমাংসা হবে, এই আশায়। সে আমাকে বিয়ে করবে। আমি তাকে হেনস্তা করতে চাইনি। কিন্তু সে আমাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। আমার কাছে যেটুকু প্রমাণ আছে তা দিয়ে আমি লড়াই চালিয়ে যাব।
জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটার কীভাবে মিথ্যা কথা বলে। কীভাবে অকপটে সবকিছু অস্বীকার করে, তা মাথায় খেলে না। এই মুহূর্তে আমি একজন নির্যাতিতা নারী। আমার ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে। এটা হয়তো কেউ বুঝতে চাইছেন না। আশা করি, পাঠক আমার ভেতরের অবস্থাটা বুঝতে চেষ্টা করবেন।
হ্যাপি বলেন, ঘটনার সূত্রপাত হয় এ বছরের শুরুর দিকে। জানুয়ারি মাসের কথা। আমি আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেখলাম রুবেল হোসেন নামে একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট। কিন্ত আমি তার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট ওয়েটিং এ রেখে দেই। এরপর দেখি প্রায় সে আমাকে ফেসবুকের ইনবক্সে ম্যাসেজ পাঠায়। তার রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করতে বলে। একটা সময় আমি তাকে আমার বন্ধু লিস্টে নিয়ে নেই। মাঝে মধ্যে টুকটাক চ্যাট হয়। আমার কখনোই ক্রিকেট খেলার প্রতি আগ্রহ ছিল না। আমি খেলাও দেখতাম না। রুবেল আমাকে বলে তুমি আমাকে দেখেছো। আমি বলতাম না। ক্রিকেট নিয়ে নানা কথা হতো। অন্যান্য ক্রিকেটারদের নিয়ে গল্প বলতো ও।
একটা সময় ফোন নম্বর বিনিময় হয় আমাদের। এরপর থেকে শুরু হয় ফোনে কথা। শুরুতে কম কথা হলেও একটা সময় নিয়মিত কথা হতো। ফোনে কথা বলে আর ফেসবুকে চ্যাট করে আমাদের সম্পর্কের একটা বিশ্বাসের জায়গা তৈরি হয়। প্রায় মাস খানের মাথায় আমরা দেখা করি। প্রথম দেখা করি মিরপুরেই। প্রথমে আমি বলেছিলাম চলো রিকশায় ঘুরতে যাই অথবা কোন রেষ্টুরেন্টে বসি। ও আমাকে বলল, পাবলিক প্লেসে গেলে ওর সমস্যা। লোকে চিনে ফেলবে। তাই প্রথম দিন রুবেল আমাকে তার গাড়িতে করেই ঘুরে বেড়ালো। এভাবেই শুরু হয় আমাদের প্রেমের যাত্রা।
আমি এর আগে প্রেম করিনি। আমার কোন প্রেমিক ছিল না। তাই রুবেল আমার ফাস্ট লাভ। ওভাবেই আমি ওকে ভালোবেসে ফেলি। ভালোই যাচ্ছিলো আমাদের সম্পর্ক। ভালোবাসার মধ্যে তো ঝগড়া থাকেই। রুবেলের সঙ্গেও আমার কম ঝগড়া হয়নি। তবে আমি রাগ করলে রুবেলই আমার অভিমান ভাঙাতো। একটা ঘটনা বলি, রুবেল দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার আগে একদিন আমি ওর গাড়িতে ঘুরছিলাম। হঠাৎ খুব রাগ হয় তারপর আমি ওর গাড়ি থেকে নেমে পড়ি। ঘটনাটা ঘটেছিল মিরপুর স্টেডিয়ামের সামনে। আমি দেখলাম ও আমার রিকশার পেছন পেছন গাড়ি নিয়ে আসছে। একটা সময় করলো কি, সে গাড়ি পার্কিং করে দৌড়ে এসে আমার রিকশা থামিয়ে রিকশা চালককে নামিয়ে নিজেই রিকশা চালানো শুরু করলো! কি যে পাগলামি সে করতো। আরেকদিন সে রাগ করে রাস্তায় বসে পড়লো। রাস্তা থেকে সে উঠবেই না। কিছু হলেই কান্না কাটি শুরু করতো। এসব পাগলামির কারণে আমিও ওকে মন থেকেই ভালোবেসে ফেলেছিলাম।
ওর কিছু বদ অভ্যাস ছিল। মদ খাওয়া, মেয়ে মানুষ নিয়ে ফূর্তি করা। আমি একটা সময় এগুলো টের পেলাম। আর তখনই তাকে বললাম আমার সঙ্গে যদি সম্পর্ক রাখতে চাও এসব বাদ দিতে হবে। সে আমাকে বলল সব কিছু ছেড়ে দিয়ে ভালোমানুষ হয়ে যাবে। আমাকেও বলল মিডিয়ায় কাজ করা ছেড়ে দিতে। আমিও ওর কথা রাখলাম। রুবেল থাকতো মিরপুর কমার্স কলেজের পেছনের একটি বাড়িতে আর আমার বাসা ছিলো মিরপুর রুপনগর আবাসিক এলাকায়। তাই প্রায় সে আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হলে নানা কথা বলে তার বাসায় নিয়ে যেত। আমিও যেতাম যেহেতু তাকে আমি মন থেকে ভালোবেসেছি।
কখনো মনে আসেনি রুবেল আমার সঙ্গে প্রতারণা করবে। ওর বাসায় কেউ থাকতো না। সে একাই বাসা নিয়ে থাকতো। আমি আমার বাসায় শ্যুটিংয়ের কথা বলে প্রায় প্রায় ওর বাসায় থাকতাম। রাতের পর রাতও থেকেছি। একদিন ফজরের আজানের সময় ওকে আমি বললাম, তুমি আমাকে বিয়ে করবে তো? সে আমাকে তার বাবা মা এর কছম দিয়ে বলল, সে আমাকে বিয়ে করবে। এরপর ওর বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরলাম। এভাবেই যাচ্ছিলো দিন।
বেশ কয়েক মাস এভাবেই কাটছিলো আমাদের সময়। সুখেই ছিলাম। আর আমি স্বপ্ন দেখছিলাম রুবেল আর আমার সুখের শান্তির একটা সংসার। কিন্তু মানুষ যা চায় তা পায় না। কিন্তু আমার প্রেমে তো অসততা ছিল না। সে একটা সময় আমাকে এড়িয়ে চলা শুরু করলো, ফোন ধরছে না। ঠিক মত যোগাযোগ করছে না। আগের সেই টানটা নেই। আমাকে পাবার জন্য ওর যে পাগলামি ছিল সেটাও নেই। ও মাঝখানে দলে খেলতে পারিনি। এ নিয়ে ওর মানসিক অবস্থা ভালো ছিল না। ঐ সময়টায় আমি ওকে মানসিক সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করেছি। সাহস দিয়েছি। কিন্তু এত ভালোবাসা দিয়েও কোন লাভ হয়নি।
হঠাৎ একদিন দেখি আমার ফোন থেকে ওর ফোনে কোন ফোন যাচ্ছে না। তখন খোঁজ নিয়ে দেখলাম ও আমাকে ব্লক করে দিয়েছে। এটা ভেবে খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন। এ মাসের ৩ কি ৪ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১২টার দিকে আমি ওর বাসায় গেলাম। দাঁড়োয়ান যেহেতু আমাকে চিনতো তাই গেইট খুলে দিল। ওর ফ্ল্যাটে ঢুকে দেখি দুটি মেয়ে। ও আমাকে বলল মেয়ে দুটি ওর বন্ধু। সে রাতে আমার সঙ্গে খুব ঝগড়া হলো রুবেলের। সে আমাকে গালাগালি করে এবং আমার গায়ে হাত তুলে। আমি রাগে আমার হাত কেঁটে ফেলি। একটা সময় জ্ঞানহীন হয়ে পরে যাই। সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠে দেখি আমি এক রুমের ফ্লোরে পরে আছি। আর রুবেল পাশের রুমে তার দুই মেয়ে বন্ধু নিয়ে শুয়ে আছে। এ দৃশ্য দেখার পর ওর সঙ্গে কেউ সম্পর্ক রাখে। তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম হয়তো ওর সঙ্গে সম্পর্কটা চূড়ান্ত ভাবেই রাখবো নইলে সম্পর্ক রাখবো না। ওকে বিয়ের কথা বললাম সে বিয়েতে রাজি হয় না। তখন আমি ৭ ডিসেম্বর মিরপুর থানায় যাই অভিযোগ করতে। তখন মিরপুর থানায় এসেছিলেন মাশরাফি ভাই, নাসির, সফিউল সহ আরো কয়েকজন। তারা আমাকে আর রুবেলকে বুঝালেন এবং রুবেলকে বললেন, তোমার হ্যাপিকে বিয়ে করতে সমস্যা কি? বিয়ে করে ফেল।
রুবেল ওখানে সবার সামনে মেনে নিলো আমাকে বিয়ে করবে। এবং এরপর সে আমার সঙ্গে বেশ ভালো ব্যবহার শুরু করলো। আমিও একটু অবাক হলাম। যাই হোক সে আমাকে তার বাসায় নিয়ে গেলো। আমি থাকলাম তার বাসায়। নানা মিষ্টি কথা বলে সে আমার মোবাইল ফোনটা নেয়। এবং মোবাইলে যা কিছু ছিল রুবেল আর আমার সব ডিলেট করে দেয়। এরপর ওর চেহারা পাল্টে যায়। সে আমাকে বলে, যাও সব প্রমাণ মুছে দিলাম এবার গিয়ে মামলা করো। আর তুমি আমার নামে মামলা করে কি করবে? আমার হাত অনেক বড় তুমি জানো না। আন্দালিব রহমান পার্থ, শেখ হেলাল এরা সব আমার কাছের লোক। আমি প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর ছেলেকে দিয়ে তোমার মামলা তুলে নেবো। এরপর আমি তোমার নামে এক কোটি টাকার মানহানীর মামলা করেবা। এসব বলে সে আমাকে ভয় দেখালো। কিন্তু সে জানে না সব ধরণের প্রমান আমার হাতে আছে। ও যা যা করেছে এবং বলেছে।
তারপর আমি নিজে ভাবলাম। কি করা যায়। এই পুরো বিষয়টা আমার পরিবার জানে না। আমি তাদেরকে বলতেও পারছি না। একটা মানসিক যাতনায় পরে গেলাম। অনেক ভেবে দেখলাম, না। আমি শুধু একা না, আমার মত এমন অনেক মেয়েকে সে ঠকাচ্ছে। এবং সবাই চুপ করে থেকেছে। শুধু রুবেল না রুবেলের মত আরো অনেকেই আছে সমাজে যারা এভাবে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মেয়েদের ভোগ করছে। এভাবে চুপ থাকলে এদের কুকর্ম বেড়েয়েই যাবে কমবে না। কাউকে না কাউকে তো প্রতিবাদ করতেই হবে। তাই ১১ ডিসেম্বর আমি মিরপুর থানায় গিয়ে মামলা করি। মামলা করার পরে অনেকেই আমাকে খারাপ বলছেন। এটা আমি জানতাম। কারণ আমি জানি বাংলাদেশে এ ধরণের ঘটনায় সবাই শেষ পর্যন্ত মেয়েটাকেই গালি দেয়। তাকেই কলঙ্ক লাগায়। পুরুষ কি শুধু সাধু? আমি আগে বলেছিলাম ও বিয়ে করলে আমি মামলা তুলে নেবো। কিন্তু এখন আমাকে ভাবতে হচ্ছে। ওর মত একটা পুরুষের সঙ্গে তো আর সারাজীবন কাটানো সম্ভব না। আমার এখন একটাই চাওয়া। আমি ওর শাস্তি চাই। আর মেয়েদেরকে বলতে চাই, চুপ থাকার সময় আর নেই।
উল্লেখ্য, গত ১৩ ডিসেম্বর বিকেলে নায়িকা নাজনীন আক্তার হ্যাপি জাতীয় ক্রিকেট দলের পেসার রুবেল হোসেনের বিরুদ্ধে মিরপুর থানায় একটি ধর্ষণ মামলা করেন। এরপর হ্যাপিকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নিয়ে তার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়। ফরেনসিক পরীক্ষা শেষে মিরপুর থানায় নিয়ে তাকে মামলাসংক্রান্ত জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বাসায় পাঠানো হয়। এর মধ্যে লোকচক্ষুর অগোচরে চলে যাওয়া রুবেল হোসেন হাইকোর্টে জামিন নিতে আসেন। চার সপ্তাহের আগাম জামিন পান। সবার দৃষ্টি এখন ফরেনসিক প্রতিবেদনের দিকে।
২০১৩ সালে মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের কিছু আশা কিছু ভালোবাসা ছবির মাধ্যমে হ্যাপির চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়। তিনি বর্তমানে কাজ করছেন বদরুল আমিনের ‘রিয়েলম্যান’, মুশফিকুর রহমান গুলজারের ‘লাল সবুজের সুর’, মেজবাহ শিকদারের ‘অন্যরকম’, জামশেদুর রহমানের ‘ছন্দপতন’ ছবিগুলোতে। এ ছাড়া কয়েকটি বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন তিনি। হ্যাপির গ্রামের বাড়ি খুলনার খালিশপুরে বাবার নাম মোহাম্মদ ইউসুফ আলী।