কোন নীতিমালা না মেনে শেরপুরের ইটভাটাগুলোতে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ
সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা সত্বেও শেরপুর জেলার ইটভাটাগুলোতে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। আর এই কাঠের যোগান দিতে গিয়ে বিপুল পরিমান গাছ কাটা পড়ছে। জেলার অর্ধশতাধিক ইট ভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের আদেশ লংঘন করে কয়লার বদলে ইট পোড়ানোর কাজে দীর্ঘদিন যাবত ব্যবহৃত হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ এমন অভিযোগও রয়েছে।
শেরপুর জেলা সদরের বেশ কয়েকটি ইট ভাটায় গিয়ে দেখা গেছে গাছের স্তুপ।এসব ইটভাটাগুলোতে কয়লার পাশাপাশি বিপুল পরিমান কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কয়লার চেয়ে কাঠের খরচ কম হওয়ায় তারা কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর কাজ চালাচ্ছেন। এছাড়াও কয়লার আমদামী কম বলেও জানিয়েছেন তারা।
ইট পোড়নো নিয়ন্ত্রন সংশোধন অধ্যাদেশ ১৯৯২ অনুযায়ী বাশেঁর শুকনো মোথা এবং কয়লা ছাড়া অন্য কোন উদ্ভিদ জাতীয় বস্তু ইট ভাটায় জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা । কিন্তু শেরপুরের বেশীরভাগ ইটভাটার মালিকগন সরকারী এই নীতিমালা মানছেন না।
এ ব্যাপারে শেরপুর ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আশরাফুল আলম সেলিম জানান, মূলত কয়লার দাম বেশী এবং কয়লা না পাওয়ার দরূণ কোন কোন ইটভাটায় কাঠ ব্যবহার করা হতে পারে। তিনি জানান, কয়লার দুষ্প্রাপ্যতা ও অধিক মূল্যের জন্য এবার ইটভাটা ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হবে। আর ইটের দামও বৃদ্ধি পাবে।
তবে শেরপুরের জেলা প্রশাসক জাকীর হোসেন এ ব্যাপারে পরিষ্কার ভাবে জানান, আইন অনুযায়ী ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো যাবে না। কেউ পোড়ালে তা হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অন্যদিকে ইট ভাটা স্থাপনের ব্যাপারেও রয়েছে সরকারী বিশেষ বিধিমালা। এই বিধিমালা অনুযায়ী উর্বর জমির উপর , গ্রাম কিংবা বসতি স্থা্পনার পাশে ইটের ভাটা নির্মান কে অবৈধ ঘোষনা করা হয়েছে । কেবল অকৃষিজ পতিত জমি , নদীর তীরবতী এলাকা বা কোন বিশেষ এলাকায় ইট ভাটা তৈরী করতে বলা হয়েছে এবং দেড় একরের বেশী জমি ব্যবহার করা যাবে না এমন কথাও রয়েছে বিধিমালায়।
পরবর্তীতে এই আইন আরো সুবিন্যস্ত করে ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রন সংশোধন আইন ২০০১ এর ৩ (চ) ধারায় বিধান মোতাবেক সংরক্ষিত, হুকুম দখল বা অধিগ্রহনকৃত বা সরকারের নিকট ন্যস্ত, বনাঞ্চল আবাসিক এলাকায় ও ফলের বাগান হতে ৩ কিলোমিটারের মধ্যে কোন ইটভাটা নির্মান বে আইনি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।আর এ অপরাধে আইন অমান্য কারীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ৬ মাস জেল অথবা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে ।
এতসব নীতিমালা ও আইন থাকা সত্বেও শেরপুরের ইট ভাটাগুলো সকল আইন কানুনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলেছে। শুধু তাই নয় ইট পোড়ানোতে ব্যবহৃত হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বৃক্ষ সমূহ।
সরকারী সব নিয়ম নীতিমালা লংঘন করে ফসলি জমিতে ইটভাটা থেকে শুরু করে মাটি খনন করা সহ ইটভাটা নির্মানের জন্যে ভূমি ব্যবহার শীর্ষক সার্কুলার মোতাবেক উর্বর জমির উপর , গ্রাম কিংবা বসতি স্থা্পনার পাশে ইটের ভাটা নির্মান কে অবৈধ ঘোষনা করা হয়েছে । কেবল অকৃষিজ পতিত জমি , নদীর তীরবতী এলাকা বা কোন বিশেষ এলাকায় ইট ভাটা তৈরী করতে বলা হয়েছে এবং দেড় একরের বেশী জমি ব্যবহার করা যাবে না ।
যেখানে ইট পোড়নোর নিয়ন্ত্রন সংশোধন অধ্যাদেশ ১৯৯২ অনুযায়ী বাশেঁর শুকনো মোথা এবং কয়লা ছাড়া অন্য কোন উদ্ভিদ জাতীয় বস্তু ইট ভাটায় জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা । অভিযোগ উঠেছে বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজশে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কাঠ পৌছে যাচ্ছে ইটভাটাগুলোতে।
অন্যদিকে জমির উর্বরতা ও পরিবেশ দুটিই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে অপরিকল্পিত ইটভাটা স্থাপনের দরুণ। এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগ থেকে জানা গেছে মাটির উপর থেকে ৮ ইঞ্চি নিচ পর্য়স্ত জৈব উপাদান বিদ্যমান। মাটির এই অংশেই থাকে উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় খাদ্য। আর ইটভাটা স্থাপনের ক্ষেত্রে এবং ইট বানানোর মাটি সংগ্রহের জন্য মাটির উপরিভাগের ৬ থেকে ৮ ফুট পর্য়ন্ত কেটে নেয়া হচ্ছে। ফলে এসব জমি ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে বন্ধ্যা জমিতে পরিণত হচ্ছে। এর ফলে পরিবেশ ও ফসল উৎপাদনের উপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়বে বলেও কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়।
সব মিলিয়ে সরকারী আইন না মেনে ইট পোড়ানোর ক্ষেত্রে গাছ ব্যবহার ও বৃক্ষ নিধন এবং পরিবেশ আইন না মেনে ইটভাটা স্থাপনের ফলে ক্ষতি হচ্ছে দুদিক থেকেই। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরিবেশ বিপর্য়য়ের সম্ভাবনা দেখা দেবে।