বেসরকারি হাসপাতাল- ‘জরুরি সেবা’ নীতিমালা আছে, আইন নেই
দেশের বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোতে জরুরি সেবা দেওয়ার নীতিমালা থাকলেও আইন নেই। ফলে রাজধানীতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোর অধিকাংশতেই নেই জরুরি সেবার ব্যবস্থা ও সর্বক্ষণিক চিকিৎসক।
আর এই সুযোগে শুধু ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদন নিয়েই কার্যক্রম চালাচ্ছে অনেকে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের লোকবল সঙ্কটে তদারকি করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের দাবি— শুধু নীতিমালা থাকায় অনেকেই মানতে চায় না। আইন থাকলে আমরা অনেককেই ধরতে পারি।
বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও রোগ নির্ণয় প্রতিষ্ঠান (ডায়াগনস্টিক সেন্টার)-এর অনুমোদন পাওয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে দেওয়া আবেদনপত্রের কোথাও জরুরি সেবা প্রদানের কথা উল্লেখ নেই। তা ছাড়া দুই ধরনের প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের জন্য আবেদনপত্রে প্রায় একই ধরনের শর্ত থাকে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকের অনুমোদন পেতে আবেদনপত্রে চাওয়া তথ্যের মধ্যে রয়েছে— ১. হাসপাতাল, ক্লিনিকের নাম ২. ঠিকানা ও ফোন নম্বর ৩. মোট শয্যা সংখ্যা ৪. হাসপাতাল, ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার তারিখ ৫. প্রতিষ্ঠানের ধরন ৬. মালিক/মালিকদের ছবি-নাম ও পূর্ণ ঠিকানা এবং টেলিফোন নম্বর ৭. মালিক/মালিকরা সরকারি চাকরি করলে তার বিবরণ, না করলে অঙ্গীকারনামা ৮. যৌথ মালিকানার ক্ষেত্রে চুক্তিপত্রের সত্যায়িত কপি, আমমোক্তারনামার সত্যায়িত কপি ৯. বাড়িভাড়া চুক্তিপত্রের সত্যায়িত কপি, নিজ বাড়ি হলে দলিলের সত্যায়িত কপি ১০. ট্রেড লাইসেন্স এর সত্যায়িত কপি ১১. রোগীদের জন্য বিভাগভিত্তিক সেবা প্রদানের তালিকা (বিবরণ আলাদাভাবে সংযুক্ত করতে হবে) ১২. প্রতিষ্ঠানে যে সমস্ত অস্ত্রপচার করা হবে তার তালিকা (বিবরণ আলাদাভাবে সংযুক্ত করতে হবে) ১৩. প্রতিষ্ঠানে মোট মেঝের (ফ্লোর) পরিমাণ ১৪. শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একক কেবিন সংখ্যা ১৫. শীতাতপবিহীন একক কেবিন সংখ্যা ১৬. শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ডবল কেবিন সংখ্যা ১৭. শীতাতপবিহীন ডবল কেবিন সংখ্যা ১৮. সাধারণ ওয়ার্ডের শয্যা সংখ্যা ১৯. রোগীদের জন্য প্রদত্ত মেঝের পরিমাণ ২০. কেবিন ও ওয়ার্ডের প্রকৃত মেঝের পরিমাণ ২১. অস্ত্রপচার কক্ষ : (ক) অস্ত্রপচার কক্ষের একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা (বিবরণ আলাদাভাবে সংযুক্ত করতে হবে), (খ) শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কী না ২২. প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় ওষুধের তালিকা (বিবরণ আলাদাভাবে সংযুক্ত করতে হবে) ২৩. প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির তালিকা (বিবরণ আলাদাভাবে সংযুক্ত করতে হবে) ২৪. বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নাম, ঠিকানা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্রের সত্যায়িত কপি ও সম্মতিপত্র ২৫. সর্বক্ষণিক চিকিৎসকদের ছবি, নাম, ঠিকানা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্রের সত্যায়িত কপি এবং নিয়োগপত্র, যোগদানপত্র ও সরকারি চাকরি না করার অঙ্গীকারনামা ২৬. সর্বক্ষণিক নার্সদের ছবি, নাম, ঠিকানা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্রের সত্যায়িত কপি এবং নিয়োগপত্র, যোগদানপত্র ও সরকারি চাকরি না করার অঙ্গীকারনামা ২৭. সর্বক্ষণিক ঝাড়ুদার, ওয়ার্ড বয়, আয়ার ছবি, নাম, ঠিকানা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সত্যায়িত কপি এবং নিয়োগপত্র, যোগদানপত্রের কপি ২৮. সর্বক্ষণিক অন্য কর্মচারীদের ছবি, নাম, ঠিকানা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সত্যায়িত কপি এবং নিয়োগপত্র, যোগদানপত্রের কপি ২৯. প্রতিষ্ঠানে প্রদত্ত অন্যান্য সুবিধাদি (বিবরণ আলাদাভাবে সংযুক্ত করতে হবে), ৩০. পানি সরবরাহ, পয়ঃপ্রণালী, জরুরি বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ( জেনারেটর), আলো-বাতাস ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় আছে কী না? ৩১. প্যাথলজি পরীক্ষার সুযোগ আছে কী না?
প্রদত্ত আবেদনপত্রের ৩১টি তথ্যের কোথাও জরুরি সেবা কিংবা সেবার মান সম্পর্কিত বিষয়ে উল্লেখ করতে হয় না। ফলে ‘যাচ্ছেতাই’ ভাবে চলছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে বেসরকারি প্যাথলজি, ল্যাবরেটরি, ডেন্টাল ক্লিনিক ইত্যাদি রোগ নির্ণয় প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স-এর জন্য আবেদনপত্রে চাওয়া তথ্যের মধ্যে রয়েছে— ১. প্রতিষ্ঠানের নাম ২. প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা ও ফোন নম্বর ৩. প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার তারিখ ৪. মালিক/মালিকদের ছবি-নাম ও পূর্ণ ঠিকানা এবং টেলিফোন নম্বর ৫. মালিক/মালিকরা সরকারি চাকরি করলে তার বিবরণ, না করলে অঙ্গীকারনামা ৬. যৌথ মালিকানার ক্ষেত্রে চুক্তিপত্রের সত্যায়িত কপি, আমমোক্তারনামার সত্যায়িত কপি ৭. বাড়িভাড়া চুক্তিপত্রের সত্যায়িত কপি, নিজ বাড়ি হলে দলিলের সত্যায়িত কপি ৮. ট্রেড লাইসেন্স ৯. রোগীদের জন্য যে সমস্ত সেবা (সার্ভিস) প্রদান করা হয় তার তালিকা (বিবরণ আলাদাভাবে সংযুক্ত করতে হবে) ১০. প্রতিষ্ঠানে মোট মেঝের (ফ্লোর) পরিমাণ ১১. প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির তালিকা (বিবরণ আলাদাভাবে সংযুক্ত করতে হবে) ১২. বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, রিপোর্ট প্রদানকারী চিকিৎসকদের নাম, ঠিকানা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতার সত্যায়িত কপি এবং সম্মতিপত্র ১৩. সর্বক্ষণিক টেকনোলজিস্ট এর ছবি, নাম, ঠিকানা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার সত্যায়িত কপি এবং নিয়োগপত্র, যোগদানপত্র, সরকারি চাকরি না করার অঙ্গীকারনামা ১৪. অন্যান্য সর্বক্ষণিক কর্মচারীদের ছবি, নাম, ঠিকানা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতার সত্যায়িত কপি এবং নিয়োগপত্র, যোগদানপত্র, অঙ্গীকারনামা ১৫. প্রতিষ্ঠানে প্রদত্ত অন্যান্য সুবিধাদি (বিবরণ আলাদাভাবে সংযুক্ত করতে হবে) ১৬. পানি সরবরাহ, পয়ঃপ্রণালী, জরুরি বিদ্যুৎ ব্যবস্থা (জেনারেটর), আলো-বাতাস এবং স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় আছে কী না?
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল শাখা) ডা. এবিএম আবদুল হান্নান বলেন, ইন জেনারেল হলেও জরুরি সেবা থাকতে হয়। জরুরি সেবার বাধ্যতামূলক কোনো নীতিমালা নেই। বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্ষেত্রে জরুরি সেবার বাধ্যতামূলক রয়েছে।
তিনি বলেন, যে কোনো বেসরকারি হাসপাতালে জরুরি রোগী নিয়ে গেলে সে চিকিৎসা দিতে বাধ্য থাকবে এই মর্মে আমরা আইন করছি। নীতিমালা সবাই মানতে চায় না, কারণ আমরা শাস্তি দিতে পারি না। এতদিন নীতিমালাতে চলছিল, এখন আমরা আইন করব। নীতিমালা অনুযায়ী জরুরি সেবা থাকা দরকার। তারপরও কেউ কেউ এটা মানতে চায়, কেউ কেউ চায় না।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানায়, দেশে ৮ হাজার ৬২০টি নিবন্ধিত ও বৈধ চিকিৎসা কেন্দ্রের ৬৬০টি রয়েছে রাজধানী ঢাকায়। তবে ধারণা করা হয়, এর সংখ্যা আরও কয়েকগুণ বেশি হবে, যার বেশিরভাগেরই নেই সরকারি অনুমোদন।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার পাশার দেওয়া তথ্যে জানা যায়, গত পাঁচ বছরে রাজধানীতে অন্তত ১২০টি ক্লিনিক নজরদারিতে আনা হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধশত প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা হয়েছে। শতাধিক ভুয়া চিকিৎসকের জেল-জরিমানাসহ এ সংক্রান্ত ১১০টি মামলা করা হয়েছে।