১৭ কবির পদাবলি
উল্কাকাহিনী
নান্নু মাহবুব
সকলেই জানে সেই ক্রমউত্থিত ডালপালার নিচে কিভাবে নেতিয়ে
আসে চাঁদ (তখন জাগে না কেউ চরাচরে, শুধু কিছু রাতজাগা, আর
কিছু সন্তাপের বিষণ্ণ নুড়ি), ক্রমশ পাল্টে যায় কিভাবে দখিনা
বাতাস থেকে নিরন্তর জলমগ্ন হাওয়া, কার আহ্বানে দোদুল বরষায়
একা-দোলনা দোল খায় তেঁতুলের বুড়ো হাড়ে, কার আচানক বর্ধিত
জিভ মাটি থেকে টেনে নেয় লহমায় বিদ্যুৎ
সকলেই জানে কোন্ আসন্ন রাত্রিতে গোলাপবাগের মন দুমড়ে চলে
যায় শ্মশানযাত্রীর দল, কোন্ আতসবাজির ঈর্ষায় পুড়ে খাক হয়
সোনালি তরল, তার দুগ্ধফেনামাখা জোয়ারের ওপর বাদামের
খোসার মতো টালমাটাল জাহাজের ভেঁপু দূরবর্তী সংকেতে কেন
বার বার কাঁপিয়ে তোলে এই প্রাকারের হলুদ জানালা
কেউই জানে না কেন নিভন্ত মশাল হাতে নগ্ন আমি একা একা
ছুটে যাই ভাঙা অট্টালিকার পাশ দিয়ে ভুজঙ্গ আর কেয়াপাতার
ধারাল সবুজ থেকে লক্ষবর্ষী চতুরতায় নিজেকে বাঁচিয়ে, কোন্ দুরূহ
অভিসন্ধিক্ষণে অনির্দেশ্য গন্তব্যে এক সমান্তরাল উল্কাখণ্ডের মতো…
তুমি ও শহরটা
আবুল হাসান মুহাম্মদ বাশার
এ শহরের উজ্জ্বল কোন ভবিষ্যৎ আমি আর দেখি না-
দেখি না যে তার সবচাইতে বড় কারণ
এ শহর তোমাকে তোমার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
এবং শুধু সে কারণেই আজ এখানে
কফিশপ ও দৌড়খাবারের দোকানে দোকানে
কোণার টেবিলগুলো পুড়ছে,
সুদর্শন লেকটাতে বাহারী নৌকোগুলো আজ
কিছু ভুলভাল যাত্রী নিয়ে ভাসমান;
টগবগে এমন দুপুরেও পার্কের ঘাসগুলো
ঠিকঠাক আলো না পেয়ে অনশনে,
এবং এখানে বিকেলের নরম আলোর কণাগুলো যে আজ
তোমার অবারিত গ্রীবাদেশ খুঁজে না পেয়ে অনাশ্রিত-
সে তো সেই অনিবার্য ধ্বংসেরই পূর্বাভাস।
অতএব এ কথা নিশ্চিত করেই বলা যায় যে-
এ শহরে বৃষ্টি ও জ্যোৎস্নার আজ আর কোন গ্রহণযোগ্য অর্থ নেই।
আমি নিশ্চিত জানি এ শহরটাকে অচিরেই
তার ভুলের জন্য চরম মূল্য দিতে হবে।
যদি না সে ক্ষমা চায় এবং যদি না সে তোমাকে
ফিরিয়ে দেয় তোমার হারানো আকাশ।
শরতের ঘুম
বদরুল হায়দার
রহস্য ফিততায় বন্দি হচ্ছে প্রেমিক হৃদয়।
মনের সীমানা পুনর্বিন্যাসে পাল্টে যাচ্ছে
বেদনার শোডাউন। সময় বাড়ছে
মেয়াদি অভিমানের।
আবেগের রোধে নোটিশ গ্রেপ্তারী পরোয়ানা
বিচ্ছেদ বহাল রেখে অব্যাহত প্রেমের বিরতি।
শরৎ প্রেমিক মনে ভাবাবেগে নিন্দুকের ডাকে
সাড়া ফেলেছে বিরীন পূর্বাভাস।
তোলপাড় ইস্যুর বিরহী চোখে অজানা দুঃখে
নোয়াখাল। প্রতিরোধ সুখের নীলাকাশে
ধলেশ্বরীর ঢেউয়ে গড়ে স্বঘোষিত পরবাস।
যানজটের আটোকে হিসেবের ফাঁকে বেহিসেবি
মানদণ্ডে শুরু হয় প্রেমের সুরতহাল। কাঁশবনে
শরতের আনন্দ জীবনে চলে বিরোধের হরতাল।
যোগাযোগ ভেগে উপভোগে সন্ধি করে মন।
হৃদয়ের না বলা আগুন শুধু দাহ করে
দ্বিগুণ বাহবা টানে শরতের ঘুম।
ধুধু
মাসুদ পথিক
ফলে একটি মাঠ আঁকার পর থামলাম, পথে এতো যে কাঁটাগুল্ম
প্রান্তর রাঙানো অথর প্রহর
এইখানে অশ্বত্থের ছায়া পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে বিপন্ন হরিয়ালদুপুর যায়
———বেঁকে
হাড়ের ডালপালা হতে যে পাখি ফেলে গেছে ছিন্ন পালক কিছু
সে যায় দিনান্তে উড়ে একা, ঠোঁটে র’ ইতিহাস শস্যের বাসনা
শুধু প্রান্তরের শেষে অরণ্যের থমকে যাওয়ার মধ্যে বেঁকে যায়
সকল মহৎ ঘটনা
বেঁকে যায় প্রেম, প্রষণ্ন কলরব তথা ধুধু মুহূর্তচিত্র মৌসুমী দানা
একজোড়া চোখ থাকে চাঁদ ছোঁয়া ছাদে
একজোড়া মন কবে ভেসে যাবে সাধে?
আশায় আশায় খুব উপবাস করে
দুই জোড়া চোখ জ্বেলে কী সালুন রাধে?
জোছনা বিলাস জল টাপুর টুপুর
আকাশ বাজায় বাঁশি বিস্সি নূপুর
ভিজে ভিজে জেগে ওঠে একজোড়া মন
তবু কেনো ঘরভরা উদাশ দুপুর?
ঘরের মানুষ কেনো পর হয়ে যায়?
পরের ফানুস ওড়ে ভুল ঠিকানায়
নিয়ম প্রীতির ফাঁদে একজোড়া চাঁদ
হাহাকারে পুড়ে পুড়ে জল হয়ে যায়…
একজোড়া চোখ আজ নীল ছোঁয়া রাত
একজোড়া চোখ আজ বেদনার তাঁত
একজোড়া মন ভরা স্মৃতির উনুন
পুড়ে পুড়ে পুড়ে খায় মিলের বরাত।
শীতল চাদরের অপেক্ষায়
প্রতীক মাহমুদ
শীতল চাদরের অপেক্ষায় চরম তেতে আছি
চোখ উপুর হয়ে আছে ভাসানের গর্তে
না ঘুম না বিষণ্নতা- কিছুতেই অন্ধকার নামানোর কোন উপলক্ষ পাচ্ছি না
দিনের আলোয় বহুমূত্রীয় রোগের বাহুল্যে দেশের ভেতর ঢুকে পড়ছে পাশ্চাত্য ইনসুলিন
ঢুকে পড়ছে সাম্রাজ্যবাদ ও আততায়ী বিস্ফোরক
আর এ জন্যই অন্ধকার নামানো খুব প্রয়োজন
অন্ধকার নামলেই কেবল গোপন আলোয় ধুয়ে নিতে পারি পরাজিত চোখ
এর পরইতো যুদ্ধাবস্থা।
আজকাল সময়ের পাটাতন ছিঁড়ে নেমে আসা মৃত্যু
নাক থেকে ঠিক নিঃশ্বাসের দূরত্বে গিয়ে জীবনের মুখোশ আঁকছে
অথচ অনেকে সেই একাত্তর থেকেই চেতনার মুখোশ পড়ে বসে আছে
বসে আছে জীবনের অপেক্ষায়…।
এইতো সেদিন জীবনের খোঁজে নদীর কাছে যেতে সেও শুকিয়ে গেল
ঘাটলায় পড়ে রইল পাললিক বয়ান, শোক ও মৃত্যুর গল্প;
অথচ নদীই শিখিয়েছিল, কিভাবে রক্তের স্রোত বেয়ে স্বাধীনতা আসে।
যুদ্ধের জমিনে পড়ে থাকা দগ্ধ পূর্ণিমা আর সূর্য-কঙ্কাল আজকাল সময়কে গর্ভ ভাড়া দিচ্ছে না
এমনকী প্রশিক্ষত মুক্তি কারিগরের নেই কোনো অস্ত্রসংগম
তাহলে কিভাবে ঘটবে চেতনার বিস্ফোরণ?
নাকি রাজনীতির বেশ্যারা এভাবেই আগুনের ভ্রূণ নিয়ে নিরোর মতো বাঁশি বাজাবে?
নাকি পলিমাটির মাটির প্রাচুর্য নিয়ে আমার মতো অনেকেই দাঁড়িয়ে থাকবে মানবিক বক?
শোক ও মৃত্যুর গল্প নিয়ে ফেরিওয়ালা ছুটছে জীবনের দেশে
সে আমার বুকে রেখে যাচ্ছে প্রস্থানের দাগ
ভেতরের ক্ষতগুলোও যেন সেই দাগেরই সহোদর
যে দাগ একদিন আঁতুর ঘরে প্রাণের চিহ্ণ এঁকেছিল।
আঁতুর ঘরে মা আমাকে যেভাবে নরম ওমে জড়িয়ে নিয়েছিল
সেভাবে কেউ আজ আমাকে জড়িয়ে নিচ্ছে না
কেউ নিঃশ্বাসের শর্তগুলো ভেঙে দেখছে না আমি প্রাণে আছি কি না
এখন বাংলার কোল ভরে যাচ্ছে হায়নায়
এখন বিভেদের চূড়ান্ত আগুনে ঝলসে যাচ্ছে দেশ
এখন মুক্তি কারিগরের অস্ত্র অদৃশ্য হয়ে আছে
গোপন অস্ত্র উঠে যাচ্ছে পিশাচের হাতে
এখন আমাদের মুক্ত দেশে যুদ্ধ চর্চা হচ্ছে…
এগুলো দেখতে দেখতে আমি চেতনা লুকানোর মতো জীবন লুকিয়ে ফেলছি
আর অপেক্ষা করছি একটি শীতল চাদরের জন্য
না হলে এই শীতে দারুণ খরায় দিন কাটাতে হবে
আর দুঃখী ঘামে বর্ষা নামবে চরের বুকে।
পণ্যের সোয়ারীঘাট
সৈয়দ আহসান কবীর
তোমাকে সাজিয়ে পাস্তুরিত পণ্যের সোয়ারীঘাটে
রঙিন ফড়িঙেরা উড়ে আসছে আসুক!
কাঁটাতারে বিঁধে থাকা যুবক মন ছিঁড়ছে ছিঁড়ুক
বহুকালে চাপে পড়া ভাঁজ থেকে ভাঁজে।
স্রোতের প্রবল বেগ ছুঁয়ে চুয়ে পড়া মাটি
বিলীন হচ্ছে হোক বাদিয়ার ঘাটে,
বিজ্ঞাপনে মিশে মিশে পিশে যাও তুমি;
সুজন চেয়ে থাক আগামীর পথে
জ্যোৎস্নার রাত শেষে সকালে-বিকালে।
তবু বলি হতে হবে হিসেবের শেষে।
পণ্যেরা থেকে যাবে, সাজানো তুমিও;
থেকে যাবে নিঃশ্বাসে মিথেনের ঝাঁঝ,
পণ্যের সোয়ারীঘাটে সময়-নির্যাস।
ট্যাটু
চৌধুরী
আমিই আদিরূপ,
এই দেহের বালুচর
এইসব প্রাত্যহিক জর্নাল;
আমার টোটেম মন্দির,
কালের হিমাগারে
এক জীবন্ত জমাট প্রতিকৃত…
কালো কালির প্রবাহ রেখার স্বচ্ছন্দ
যেন প্রতিটি জীনে লিখে রাখা
মৌলিক সংকেতলিপি;
প্রতিটি রেখা, প্রতিটি বাঁক যেন
অস্থির সমতলে তীব্র শোণিতধারা…
শয়নরেখায় নিঃসংশয়, দৃঢ়মুখ আমি
অবলীলায় উন্মোচন করি
অসংবৃত ইতিহাস,
সত্তার রঙে রাঙাই আত্মা, আর
মাংসের রেকাবে সাজাই
অমোচনীয় কবিতা
সূচের আঁটড়ে ডারমিসের গভীরে
আমার বিশ্বাসের টোটেম,
বুকে হাঁটে শিরশির, পৌরাণিক ঊর্ণনাভ
অনার্য সত্যের প্রতিস্থাপন;
ব্যথা আমার আরাধিত নৈবেদ্য
আমি রক্তাক্ত হই প্রেমার্ত রিচ্যুয়ালে
আমিহয়তো
সুরাইয়া ইসলাম
আমি হয়তো সারাজীবন
তোমার মিষ্টি রোদের সকাল হতে
অন্য কারও শিশির হব।
আমি হয়তো
সারাজীবন তোমার দিবসময় ক্লান্তি হতে
অন্য কারও রাত্রি হব।
আমি হয়তো সারাজীবন
তোমার ঘুমটি হয়ে থাকব বলে
অন্য কারও স্বপ্ন হব।
আমি হয়তো সারাজীবন
তোমার বকুলতলা হব বলে
অন্য কারও গোলাপ হব।
আমি হয়তো সারাজীবন
তোমার মনের ঘরের গিন্নী হতে
অন্য কারও বউটি হব।
আমি হয়তো সারাজীবন
তোমার বুকে কাঁদব বলে
অন্য বুকে উষ্ণ হব।
আমি হয়তো সারাজীবন
তোমার দিব্য দৃষ্টি হব বলে
অন্য কারোর চোখে হারাবো।
আমি হয়তো সারাজীবন
তোমার মাফলার হয়ে ঝুলবো বলে
অন্য কারও চাদর হব।
আমি হয়তো সারাজীবন
তোমার দুঃখ হয়ে থাকব
বলে অন্য কারও সুখ কুড়াবো।
আমি হয়তো সারাজীবন
তোমার বাবুই হয়ে থাকব বলে
অন্য কারও ময়না হব।
আমি হয়তো সারাজীবন
তোমার আপন গানটি হতে
অন্য কারও কথা হব।
আমি হয়তো সারাজীবন
তোমার হৃদয় বাড়ির কান্না হতে
অন্য মুখের হাসি হব।
অকস্মাৎ অরণ্যে
আলম শামস
দিগন্ত পেরিয়ে গহীন অরণ্যে
পাহাড়ের পাশে ঝর্ণার শীতল বাতাস
নাম না জানা পাখির উড়ে যাওয়া শব্দ
আমার নিস্তব্ধতা ভেদ করল,
মুহূর্তে আমি অন্য এক জগতে।
সূর্যের লাল আভা মিশে গেল আকাশের সাথে
চাঁদ এসে দখল করলো তার পৃথিবী;
আবার আমি কল্পনার রাজ্যে-
স্বপ্ন জুড়ে দু’হারা তন্বী তরুণী
আদরে সোহাগে জেগে ওঠে শিহরণ
পুষ্পের পাঁপড়ি ছড়িয়ে ভরে ওঠলো সজীব মন।
রাতের গভীরতা দু’হাতে মাড়িয়ে
আচমকা-ফুঁসে ওঠে নতুন ভোর।
মানুষই অনন্য এলিয়েন
শাহরিয়ার সোহেল
বিবর্তনের ফলে বানর প্রজাতি থেকে
উৎপন্ন হয়েছে মানুষ
এ সত্য নয়
মানুষের মস্তিষ্কের ক্রিয়া অধিক উন্নত ও আশ্চর্যজনক
পৃথিবীতে যত প্রজাতির জীব রয়েছে
তাদের ভেতরে রয়েছে এক অনবদ্য সাদৃশ্য
মানুষ ভিন্ন; সৃজনশীল চিন্তায় ও কাজে
মানুষই একমাত্র জীব
যারা পোশাক পরে
রান্না করে খাবার খায়
গৃহ নির্মাণ করে বিভিন্নভাবে
ইচ্ছে মতো ঘুরে বেড়ায়
জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে
জাহাজে, ট্রেনে-বাসে, প্লেনে…
মানুষ এসেছে ভিন্ন জগৎ থেকে
মানুষের চিন্তা ও বৈশিষ্ট্য; স্বতন্ত্র ও সৃজনশীল
মানুষের কল্পনা সুদূর প্রসারী
এর বাস্তব প্রয়োগ অন্তহীন
মানুষই শ্রেষ্ঠ কর্মে ও চিন্তায়
মানুষই অনন্য এলিয়েন…
পাখি কাহিনী
জাবেরীআল
এক যে পাখি জারুল গাছে
এক যে পাখি সাজনাতে
এক যে পাখি টুনটুনিয়ে
ব্যস্ত আছে বাজনাতে ।
এক যে পাখি সাঁঝ-সকালে
মিষ্টি মধুর সুর তুলে ।
পাখির মত ডানার খোঁজে
যাই আমি যে পথ ভুলে।
বিজয় হারালে
লিয়াকত বখতিয়ার
কোনো কিছু হারিয়ে গিয়েও
কিছু কিছু থাকে
তোমায় হারালে কিছুই থাকে না।
চন্দ্র হারালে সূর্য হারালে
তবু আলো থাকে
তোমায় হারালে কিছুই থাকে না।
ধন হারালে, জন হারালে,
জ্ঞান হারালে, ধ্যান হারালে
তবু কিছু থাকে
তোমায় হারালে কিছুই থাকে না।
প্রীতি হারালে, স্মৃতি হারালে
তবু কিছু থাকে
তোমায় হারালে কিছুই থাকে না।
তন্ত্র হারালে, যন্ত্র হারালে,
অস্ত্র হারালে, বস্ত্র হারালে
তবু কিছু থাকে
তোমায় হারালে কিছুই থাকে না।
ঘর হারালে, বর হারালে,
ভাই হারালে, বোন হারালে
তবু কিছু থাকে
তোমায় হারালে কিছুই থাকে না।
স্বপ্নের অরণ্যগাথা
রাবেয়া সুলতানা
আড্ডা শেষে এইতো আমি একলা হলাম
যে যার পথে চলতে গিয়ে পা বাড়ালাম
ছোঁয়ার ছায়া সঙ্গে শুধু প্রাণের প্রতাপ
আনছে মনে, মনের কোণে অতীত বাজে
হারায় প্রভাত, অনেক দুপুর, রাত্রি হাজার
পড়বে মনে আমরা কেবল পথের পথিক
গাল ফুলিয়ে ফুঁ দিয়ে মন বৃথাই ধূলি-
সরাচ্ছি ঢেউ আছড়ে পড়া কূল উপকূল
ও কিছু নয় ভাঙন প্রবণ তবুও ব্যাকুল হাতদুখানি
পোড়ায় আগুন মাঠের খাঁ খাঁ নির্জনতা একলা দুপুর
এইতো আমি হৃদয় মেলে জগৎ দেখার নীল কাসিদা
পথ হারিয়ে পথের বাঁকে দুইফোঁটা জল
এইতো দেখো অরণ্যকে কেমন করে ঝাঁকড়া ঝুটি
আফ্রিকা আর আমাজনের বৃডালে জড়িয়ে ধরি
এইতো সাধের রঙিন ঘোড়া চলনবিলের সরষে ক্ষেতে
হাওয়ায় বেঁধে হলুদ ফিতে তপ্ত চোখের খানিকটা জল।
রক্তে লেখা বিজয়
এনাম রেজা
বিজয় শব্দটা আমার হৃদপিণ্ডে
ঝড় তুলে যায় খুব সহজেই
কাঁপিয়ে তোলে অস্তিমজ্জা।
পৃথিবীর সবার কাছে এর অর্থ এক হলেও
বাঙালির অনুভূতি ভিন্ন।
এ বিজয় অর্জনে
আমার মা-বোন এবং
দস্যি প্রেমিকা, যার দেহের
ভাঁজ খাঁজ ও ডেউ নেশা ধরায় চোখে
অথচ সম্ভ্রম বিসর্জন দিলো কতো সহজে-
পেলাম বিজয়।
আমার বাবা ভাই এবং প্রিয় সন্তান
যার চঞ্চলতায় উল্লসিত মন
অথচ বুকের রক্ত ঢেলে দিলো কতো সহজে।
কালিতে নয়, আমি লিখলাম রক্তে-
অনন্ত বিজয়।
সুনামিতে বিজয়-বিবেক
ইসরাত জাহান
আমাদের পথে ভাসে বিবেকের ঢেউ;
কল্কের গ্যাসে ওড়ে ওষুধি ফানুস,
দেখে বুঝে শিখে নেয় রঙয়ের মানুষ,
পথে পথে কথা বলে অচেনার কেউ।
বিজয়ের নাওয়ে ওঠে চেতনার ঝড়
নদীরেখা বয়ে যায় সিডরের মতো
সুনামিতে মুছে যায় নীতিকথা যতো
পকেট ভাসিয়ে নেয় টাকা-কড়কড়।
কল্কের সুনামিতে বিবেকও উধাও
মানুষ ফানুস বুঝি রাজনীতি জুড়ে
বড়সর লোকজন নীতি থেকে দূরে
বিজয় ছুটে চলে করে নাতো রা’ও।