মুক্তিযোদ্ধা দলের আলোচনা সভায় রাজপথে থাকার ঘোষণা বিএনপির
সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি। সে জন্য আগামী দিনে রাজপথে আন্দোলনে মুক্তিযোদ্ধাসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ মিলনায়তনে রবিবার বিকেলে এক আলোচনা সভায় বিএনপি নেতৃত্ব ২০ দলের নেতারা এ সব কথা বলেন।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ‘স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস : দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল।
আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এ দলটি মুক্তিযোদ্ধের চেতনা ভূলুণ্ঠিত করছে। এর আগে আরেক বার করেছিল ১৯৭১ সালে। সে সময় খুন, গুম করে গণতান্ত্রিক অবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। আজকে আবারও গুম, খুন করে গণতন্ত্রকে পদদলিত করছে।’
আওয়ামী লীগ দেশকে দেউলিয়া করে ফেলেছে— এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘দেশ রক্ষায় দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার ডাকে সাড়া দিয়ে ঝাঁপিয়ে পরে আন্দোলন সফল করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, রাস্তায় নামলে গায়ের চামরা থাকেব না, রাস্তায় বের হলে পা ভেঙে ফেলবে, এভাবে তারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চান। আমি বলতে চাই, গুম, খুনের প্রতিবাদে জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে তারা কার গায়ের চামরা তুলে নেবেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সময় নেই, তরুণ, যুবকদের জেগে উঠতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের আরেকবার মুক্তিযুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করতে হবে।’
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বীর বিক্রম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান আমরা অস্বীকার করছি না। বঙ্গবন্ধু মুক্তিযোদ্ধের জন্য জাতিকে তৈরি করেছিলেন। শহীদ জিয়াউর রহমান মুক্তিযোগ করেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘দেশে বর্তমানে চার কোটি বেকার যুবক। এরাই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে আওয়ামী লীগের বিদায় নিশ্চিত করবে।’
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘রাজনীতি এত নিচে নেমে যাবে তা কখনো ভাবিনি। খালেদা জিয়াকে রাজনীতি উন্নয়ের জন্য দায়িত্ব নিতে হবে। গণতন্ত্রের মৃত্যুর ওপর বসে সরকার পরিচালনা করছে। গণতন্ত্র হারিয়ে ফেলেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আন্দোলন করছি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষার জন্য। এখন আন্দোলন ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই।’
মওদুদ আহমদ বলেন, ‘খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের এগিয়ে আসতে হবে। দেশের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করতে হবে, যাতে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘একাত্তরের ন্যায় আরেক বার আন্দোলন করতে হবে। যতদিন না পর্যন্ত আন্দোলন সফল হবে ততদিন আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।’
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, ‘আপনারা প্রতিনিয়তই ইটটি মেরে যাচ্ছেন সাত বছর একজন পাটকেলটি দিয়েছেন। তাতেই আপনারা অস্থিত হয়ে গেছেন। এ রকম ইটটি মারলে একজন নয়, আরও লোক পাটকেলটি মারতে পারে।’ মূলত শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে তারকে রহমানের বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের উদ্দেশে এ সব কথা বলেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের অবদান তুলে ধরে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘ক্ষমতাসীনরা আতঙ্কিত হয়ে প্রলাপ বকছেন।’
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে যেমনিভাবে হেলায় জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, ঠিক তেমনি দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার ডাকে রাজপথে নেমে আসব।’
শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন উল্লেখ করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে বসে শেখ মুজিবকে পাক বন্ধু বলেছেন অন্যায় কী বলেছেন।’
তিনি বলেন, ‘তাকে (শেখ মুজিব) পাক বন্ধু বলা হয় রাজনৈতিক কারণে। তারেক রহমান যেহেতু বলেই ফেলেছেন এটা চলবেই। এটা কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়। এটা রাজনৈতিক বক্তব্য।’
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরে বর্তমান সংগঠক মোকাবিলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধাসহ সকল নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার ডাকে সবাই রাজপথে নামুন।’
ক্ষমতাসীনদের প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে বিএনপির নিবার্হী কমিটির সদস্য ইসমাঈল হোসেন বেঙ্গল বলেন, ‘বাঁশের লাঠি আছে, অস্ত্র চাই না। অস্ত্রের দিন শেষ। প্রতিদিনই যখন আমাদের আক্রমণ করা হচ্ছে। তখন আত্মরক্ষার জন্য বাঁশের লাঠির প্রয়োজন আছে।’
দলের আরেক নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর বলেন, ‘দেশের চলমান সংকট উত্তরণে মুক্তিযোদ্ধাদের খালেদা জিয়ার ডাকে সাড়া দিয়ে রাজপথে নামতে হবে।’
আলোচনা সভায় ১০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নগদ ২০ হাজার টাকা ও সম্পাদনা ক্রেস্ট দেওয়া হয়।
এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজীজ উরফাত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন।
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপিত্বে বক্তব্য রাখেন— বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, আব্দুল্লাহ আল নেমান, শমসের মবিন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম বীরপ্রতিক, বিএনপির প্রচার বিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক, অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইসমাঈল হোসেন বেঙ্গল, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক শফিউজ্জামান খোকন, মুক্তিযোদ্ধা সাদেক খান প্রমুখ।
এ ছাড়া আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন— ঝালকাঠি থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সিদ্দিক, ঢাকা থেকে আব্দুর রজ্জাক, নারায়ণগঞ্জ থেকে নূর হোসেন, ফরিদপুর থেকে শাহজাদা মিয়া, কুষ্টিয়া থেকে বাবুল আহমেদ, মাদারীপুর থেকে জাহাঙ্গীর হোসেন, বগুড়া থেকে আব্দুল কাদের, রংপুর থেকে মোজাফ্ফর হোসেন, চট্টগ্রাম থেকে কামাল উদ্দীন, টাঙ্গাইল থেকে শরিফুল ইসলাম শাজাহান, গাজীপুর থেকে আলী আকবর, রাজশাহী থেকে নূর হামিদ রিজভী বীর প্রতীক, মুঞ্চিগঞ্জ থেকে মীর মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম মহানগর থেকে শাহাবুদ্দিন আহমেদ, দিনাজপুর থেকে সৈয়দ শাহাদাৎ হোসেন মানিক, শরিয়তপুর থেকে শহীদ পারভেজ ও শেরপুর থেকে ফরিদুর রহমান ফরিদ, ঢাকার চৌধুরী আবু তালেব, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুর রহমান প্রমুখ।
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন— বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এএস এম আব্দুল হালিম, আব্দুল মান্নান, এ্যাডভোকেট আহমদ আযম খান, যুগ্ম-মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, সালাহ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।