কল্পনার চেয়েও মারাত্মক আইএসআইএস, চলছে ইউরোপ দখলের পরিকল্পনা!
জার্গেন টোডেনহফার। তিনি অপর এক লেখক, যিনি আইএসআইএস অধিকৃত এলাকা- রাক্কা, সিরিয়ার ডিয়ের এযোর এবং ইরাকের মসুল ভ্রমণ করেছেন। এই এলাকা সেই এলাকা, যাকে আইএসআইএস নিজেদের ‘খেলাফত’ বলে দাবি করে। মসুল ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর, যা গত জুনে আইএসআইএস দখল করে নেয়।
টোডেনহফার মসুলের সেই মসজিদেও ভ্রমণ করেছেন, যাকে আইএসআইএস নেতা আবু বকর আল বাগদাদি নিজের একমাত্র ঠিকানা বলে দাবি করেন এবং যেখান থেকে তিনি দেখেন আইএসআইএস এর শাসনাধীন এলাকায় কীভাবে নামাজের সময় প্রতিদিনই সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এক এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে টোডেনহফার সিএনএনকে বলেছেন, মসুলে এক ভয়াবহ অবস্থা বিরাজমান।
তিনি বলেন, ১ লক্ষ ৩০ হাজার খ্রিষ্টানকে উৎখাত করা হয়েছে, শিয়ারা প্রানভয়ে পালিয়ে গেছে। অনেক মানুষ খুন হয়েছে। তথাপি এই শহর চলছে এবং এখানকার মানুষ এমন স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করছে, যেন ইসলামিক স্টেট তাদের এখানে নিয়ে এসেছে।
তবু তিনি বলেন, এখানের বাতাসেও ভয় উড়ে বেড়ায়। অবশ্যই এখান থেকে অনেক মানুষ পালিয়ে গেছে, কারণ ইসলামিক স্টেটের আইন অমান্য করার পরিণাম খুবই অমানবিক। আইএসআইএস-এর নেতৃত্ব দাবি করে, মাত্র তিনশ’ যোদ্ধা এই মসুল শহর দখল করেছিলো, যেখানে বিশ হাজারের বেশি ইরাকি সেনা অবস্থান করছিলো।
টোডেনহফার বেশ কয়েকজন আইএসআইএস যোদ্ধার সাথে কথা বলেছেন, যারা গত জুনের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো। এক অল্প বয়সী যোদ্ধা বলেন, মসুল দখল করতে আমাদের চারদিন সময় লেগেছিলো।
টোডেনহফার তাকে জিজ্ঞেস করেন, তার মানে তোমরা আসলেই তিনশ’ যোদ্ধা ছিলে আর বিশ হাজার ইরাকি সেনাকে পরাস্ত করেছো?
যোদ্ধা উত্তর করলো, আমরা তাদের সকলকে একই সময়ে আক্রমণ করিনি। আমরা তাদের ফ্রণ্টলাইনে খুব শক্তভাবে আক্রমণ করেছিলাম। এই আক্রমণে আত্মঘাতী হামলাও ছিলো। বাকিরা খুব দ্রুত পালিয়ে যায়।
যোদ্ধা আরো জানায়, আমরা আল্লাহর জন্য যুদ্ধ করি। আর ওরা টাকা এবং অন্যকিছুর জন্য যুদ্ধ করে, যা তারা আসলে বিশ্বাসই করে না।
টোডেনহফার সিএনএনকে বলেন, আমি যখন আইএসআইএস-এর নিয়োগ ঘরের কাছে গেলাম, দেখলাম আরো নতুন ৫০জন যোদ্ধা এসেছে যোগ দিতে। এবং আমি তাদের চোখের উজ্জ্বলতাকে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। তাদের অনুভূতি এমন ছিলো, যেন তারা এক পবিত্র ভূমিতে এসেছে, যেন তারা ন্যায়ের পক্ষেই যুদ্ধ করছে।
তিনি বলেন, এরা মোটেই বোকা লোক নয়। সেখানে এমন একজনকে দেখেছি আমি, যে কিছুদিন আগেই আইনে স্নাতক শেষ করেছে। তার ছিলো বড় চাকরির সুযোগ। কিন্তু সে সব প্রত্যাখ্যান করে আইএসআইএস-এর হয়ে যুদ্ধ করতে মনঃস্থির করেছে। সেখানে আমরা ইউরোপ-আমেরিকা থেকে আসা যোদ্ধাও দেখেছি। এদের একজন নিউ জার্সি থেকে গিয়েছে। তুমি কল্পনা করতে পারো, নিউ জার্সি থেকে একজন সেখানে গেছে ইসলামিক স্টেটের হয়ে যুদ্ধ করতে?
টোডেনহফার বলেন, আমি নিশ্চিত, ইসলামিক স্টেটের সবচেয়ে বড় শক্তি তার যোদ্ধাদের ইচ্ছাশক্তিতে। এই যোদ্ধারা এমনকি যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতেও প্রস্তুত।
তিনি বলেন, আমি এমন একজনের সাথে দেখা করেছি, যে যুদ্ধক্ষেত্রে সবসময়ই সুইসাইড বেল্ট পরিধাণ করে। তার বক্তব্য- আমি ধরা পড়ার চেয়ে মরে যাওয়াটাই বেশি উপযোগী মনে করি।
যুদ্ধবন্দিদের সাথে অপব্যবহার, নির্যাতন এবং হত্যার ক্ষেত্রেও আইএসআইএস-এর কোনো জুড়ি নেই। টোডেনহফার মসুলে এক কুর্দিশ বন্দির সাথেও সাক্ষাৎ করেছেন। তার সম্পর্কে টোডেনহফার বলেন, সে একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে। সে অত্যন্ত দূর্বল এবং ভীত হয়ে পড়েছে।
টোডেনহফার ওই বন্দিকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমার সাথে সামনে কি হতে পারে বলে মনে করছো?
এই প্রশ্নের সময় আইএসআইএস-এর বেশ ক’জন যোদ্ধা তাদের ঘিরে পাহারা দিচ্ছিলো। বন্দি অত্যন্ত ভীতসন্ত্রস্তভাবে ওই প্রশ্নের উত্তরে বলে, আমি জানি না। এমনকি আমার পরিবার জানেও না, আমি এখনো বেঁচে আছি। আমি আশা করছি, হয়তো সামনে বন্দিবিনিময়ের মতো কোনো কিছু হবে এবং আমি মুক্তি পাবো।
টোডেনহফার সেখানে শিশু আইএসআইএস যোদ্ধাও দেখেছেন। তাদের হাতে একে-৪৭ রোদে চমকাচ্ছিলো। এদের মাঝে একটা ছেলে খুবই ছোট কিন্তু দাবি করছিলো ইতোমধ্যে সে যুদ্ধে অংশ নিয়েছে।
টোডেনহফার তাকে জিজ্ঞেস করেছিলো, তোমার বয়স কত?
সে উত্তরে জানিয়েছিলো, তার বয়স ১৩ বছর। কিন্তু তাকে আরো ছোট দেখাচ্ছিলো।
টোডেনহফার তার ভ্রমণে আইএসআইএস অধিকৃত একজনের সাক্ষাৎকার নিতে সক্ষম হন, যে জার্মানি থেকে আগত এবং নিজেকে আইএসআইএস নেতৃস্থানীয় বলে দাবি করেছে। সে ইউরোপ এবং আমেরিকার প্রতি হুশিয়ারি দিয়েছে তার সাক্ষাৎকারে।
টোডেনহফার তাকে জিজ্ঞেস করেছিলো, তুমি ইউরোপ আসতে চাও?
সে বলেছিলো, না, আমরা একদিন ইউরোপ জয় করবো। ইউরোপ জয় আমাদের জন্য প্রশ্ন নয়, এটা অবশ্যম্ভাবী। একদিন অবশ্যই হবে।
সে আরো বলে, আমাদের এলাকা বাড়তেই থাকবে। এবং ইউরোপিয়ানদের জানা থাকা ভালো, আমরা যেদিন আসবো, সেদিন কিছুতেই সুন্দর দিন হবে না। আমাদের হাতে থাকবে অস্ত্র। এবং যারা ইসলাম গ্রহণ করবে না বা ইসলামিক ট্যাক্স দেবে না, তাদের সবাইকে হত্যা করা হবে।
টোডেনহফার জিজ্ঞেস করেছিলো, ১শ’ ৫০ মিলিয়ন শিয়ার ব্যাপারে কি ঘটবে, যদি তারা ইসলামিক স্টেটের সাথে একাত্বতায় রাজি না হয়?
জার্মান যোদ্ধার সাফ জবাব, ১৫০ মিলিয়ন, ২শ’ মিলিয়ন বা ৫শ’ মিলিয়ন আমাদের কাছে কিছুই না। আমরা তাদের সবাইকে হত্যা করবো।
টোডেনহফারের এরপরের প্রশ্ন, শিরোশ্ছেদ এবং দাসত্ববন্ধন কি আসলেই মানবিক বলে মনে করো?
যোদ্ধার উত্তর, দাসত্ব অবশ্যই মানবিক। খ্রিষ্টান এবং ইহুদিরাই শুধু দাসত্বকে অস্বীকার করে।
সে আরো বলে, আমি অবশ্যই বলবো, দাসত্ব এবং শিরোশ্চেদ আমাদের ধর্মেরই অংশ। অনেক দাস ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং তাদের মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
এসময় সে পশ্চিমা সাংবাদিক এবং স্বেচ্ছাসেবকের শিরোশ্ছেদের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলে, মানুষের অবশ্যই জেমস ফলের ব্যাপারে চিন্তা করা উচিত। আমরা যুদ্ধ শুরু করেছি বলে তাকে হত্যা করা হয়নি, সে মারা গেছে কারণ তার সরকার তাকে কোনো সহায়তা করেনি।
টোডেনহফার সবশেষে সিএনএন-এর সাথে সাক্ষাৎকারে জানান, আমার বিশ্বাস, পশ্চিমা নেতৃত্ব যতোখানি মারাত্মক মনে করে, তার চেয়েও বেশি মারাত্মক এই ইসলামিক স্টেট। নিজেদের নীতিতে তাদের প্রচণ্ড বিশ্বাস এবং তারা আরো বড় ধর্মযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, যা পৃথিবী এর আগে কখনো দেখেনি।
অনুবাদ: সিএনএন এক্সক্লুসিভ