বছরজুড়ে হুঙ্কার, রাজপথে নামতে পারেনি বিএনপি

5221fca83d127-khaleda-zia৫ জানুয়ারি ‘একতরফা’ নির্বাচনের পর বিভিন্ন সময় সরকারবিরোধী আন্দোলনের হুঙ্কার দিয়েও রাজপথে নামতে পারেননি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দলের পক্ষ থেকেও রাজপথে কোনো ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি।
তবে পুরনো কথা ভুলে সামনের দিনগুলোতে এগিয়ে যেতে চায় দলটি।
এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘বিগত দিনে কী করেছি, সেটা বলে লাভ নেই। ভবিষ্যতে কী করব—এটাই হচ্ছে বড় কথা। তবে জনগণ আমাদের মুখের কথা শুনবে না। আমাদের কিছু করে দেখাতে হবে। সেভাবেই সামনে এগোনোর চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
বিগত দিনে আন্দোলনের হুঙ্কার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দিনক্ষণ ঠিক করে তো আর আন্দোলন হয় না। আমরা যতটুকু পেরেছি, ততটুকু করেছি। তবে অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হয়—এটা যেমন দলের ক্ষেত্রে জরুরী, তেমনি ব্যক্তি জীবনেও প্রযোজ্য।’
খালেদা জিয়া ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর ১৫ জানুয়ারি প্রথম সংবাদ সম্মেলন করেন। ওই দিন তিনি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সবার অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সংলাপের আহ্বান জানান।
এর পর ২০ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে আবারও সরকারকে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করার আহ্বান জানান তিনি।
ক্ষমতাসীনরা খালেদার আহ্বানে সাড়া না দিলে ৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের ঘোষণা দেন তিনি। সেখানে তিনি বলেন, ‘কর্মসূচি চলছে। আমরা গুছিয়ে নিয়ে শিগগিরই নতুন কর্মসূচি দেব। আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য সংলাপ-সমঝোতার জন্য আহ্বান জানিয়ে বসে থাকব না।’
এর পর ১৬ জুলাই ঢাকা মহানগর বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে ঈদুল ফিতরের পর শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ঘোষণা দেন খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, ‘ঈদের পরে বিএনপির আন্দোলন হবে শান্তিপূর্ণ। পুলিশ ও অস্ত্র দিয়ে সে আন্দোলনে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হলে পাল্টা জবাব দেওয়া হবে।’
এ ছাড়া ওই রমজানে বেশ কয়েকটি ইফতার মাহফিল থেকেও ঈদের পরে আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
তবে ঈদুল ফিতরের পরও মাঠে দেখা যায়নি বিএনপিকে।
এর পর ২৭ সেপ্টেম্বর জামালপুরে ২০ দলীয় জোটের সমাবেশে ঈদুল আজহার পর আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে হটিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘যত টালবাহানা হোক, বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসতেই হবে। হাসিনাকে বিদায় নিতে হবে।’
তবে এবারও শুধু ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে বিএনপির আন্দোলন। খালেদা জিয়ার ঘোষণার পরও ঈদুল আজহার পর রাজপথে কোনো ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি দলটি।
৯ অক্টোবর ঈদুল আজহার দিন সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পবিত্র ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন খালেদা জিয়া। ওই সময় তিনি বলেন, ‘দিনক্ষণ ঘোষণা দিয়ে আন্দোলন হয় না। আমরা আন্দোলনে ছিলাম, আছি এবং থাকব। সময়মতো কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
১ নভেম্বর নাটোরে ২০ দলের জনসভায় খালেদা জিয়া বলেন, ‘আন্দোলন করতে হবে। সময়মতো যখন আন্দোলনের ডাক দেব, তখন যে কর্মসূচি দেব, তা পালনের প্রস্তুতি নিন।’
ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাবেশগুলো জনগণে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। আমাদের মিছিল-মিটিং কর্মসূচিতে গুলি করা থামান। দেখিয়ে দেব আন্দোলন কাকে বলে। এরশাদকে হটিয়েছি, এদেরও হটাব।’
সর্বশেষ ১২ নভেম্বর কিশোরগঞ্জে ২০ দলীয় জোট আয়োজিত এক সমাবেশে সরকারকে ঢাল-তলোয়ার নিয়ে মোকাবেলার কথা বলেন খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, ‘ঈশা খাঁর কথা আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে। বেশী অত্যাচার হলে ঢাল-তলোয়ার আছে, এটা নিয়েই মোকাবেলা করব।’
তবে বার বার ঘোষণার পরও দৃশ্যমান কোনো আন্দোলন না হওয়ায় দলের নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দশম সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই সরকার পতনের হুঙ্কার দিয়ে আসছে বিএনপি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে রাজপথে নামার মতো কোনো ধরনের প্রস্তুতি নেই। কখনো শোনা যায় রমজানের ঈদের পর আবার কখনো কোরবানির ঈদের পর আন্দোলন হবে। তবে শেষ পর্যন্ত আন্দোলনে মাঠে নামা হল না।’
এদিকে বিগত ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে আন্দোলনে নামার আগে দল পুনর্গঠনের কাজ শুরু করে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে গত ১৮ জুলাই ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে নির্দিষ্ট সময় পার হলেও দৃশ্যমান কোনো উন্নতি নেই ঢাকা মহানগর বিএনপির। ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হলেও ‘বিদ্রোহ’ লেগে আছে কমিটি ঘোষণার পর থেকে।
এ ছাড়া দলীয় সূত্রে জানা যায়, যুবদল, কৃষকদলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নতুন কমিটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও বিভিন্ন জটিলতার কারণে আটকে আছে বিষয়টি।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend