মানবতাবিরোধী অপরাধ কায়সারের মৃত্যুদণ্ড
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মঙ্গলবার তার ফাঁসির আদেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেন।
মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে কায়সারকে আদালতের কাঠগড়ায় হাজির করা হয়। এরপর ১১টার দিকে তিনজন বিচারপতি এজলাসে প্রবেশ করেন।
আসন গ্রহণ শেষে চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, এটা ট্রাইব্যুনাল-২ এর অষ্টম রায়। সৈয়দ কায়সারের বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগে রায় ঘোষণা করা হচ্ছে। এ রায়টি মোট ৪৮৪ পৃষ্ঠা সম্বলিত মোট ১৬৬১ প্যারায় প্রণীত হয়েছে।
আদালতে রায়ের সংক্ষিপ্ত কপি চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নিজেই পাঠ করেন।
কায়সারের বিরুদ্ধে গণহত্যার একটি, হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের ১৩টি এবং ধর্ষণের দুটিসহ মোট ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে ১৪টি প্রমাণিত হয়েছে।
প্রমাণিত অভিযোগের মধ্যে ৩, ৫, ৬, ৮, ১০, ১২ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
এ ছাড়া ১, ৯, ১৩ ও ১৪ নম্বর অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং ২ নম্বর অভিযোগে ১০ বছর, ৭ নম্বরে সাত বছর ও ১১ নম্বরে পাঁচ বছর কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
কায়সারের বিরুদ্ধে আনা ৪ ও ১৫ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি মর্মে এ অভিযোগগুলোতে কোন শাস্তি দেওয়া হয়নি।
এর আগে, গত ২০ আগস্ট যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে এ মামলার রায় ঘোষণার জন্য ট্রাইব্যুনাল অপেক্ষমাণ রাখেন। একই সঙ্গে কায়সারের জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
কায়সারের বিরুদ্ধে গণহত্যার একটি, হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের ১৩টি এবং ধর্ষণের দুটিসহ মোট ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়।
কায়সারের পক্ষে এ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ ও রানা দাশগুপ্ত পাল্টা আইনি পয়েন্টে যুক্তি উপস্থাপন করেন।
গত ৭ আগস্ট থেকে কায়সারের পক্ষে এ্যাডভোকেট আব্দুস সোবহান তরফদার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। একই দিনে রাষ্ট্রপক্ষ তাদের যুক্তি উপস্থাপন শেষ করে। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ষষ্ঠ কার্যদিবস কায়সারের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে।
২৩ জুলাই প্রসিকিউশনের ৩২তম সাক্ষী ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মনোয়ারা বেগমের জেরা শেষে আদালতের নির্দেশে প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত কায়সারের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। ওই দিন থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত মোট ছয় কার্যদিবস আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত।
এর আগে এ মামলায় ৩১ জন সাক্ষী কায়সারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামি পক্ষ তাদের জেরাও করে। তবে ট্রাইব্যুনালে এই প্রথম কোনো আসামি হিসেবে কায়সারের পক্ষে কোনো সাফাই সাক্ষ্য দেওয়া হয়নি।
২ ফেব্রুয়ারি সৈয়দ কায়সারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল-২। গত বছরের ১৪ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেয় আদালত।
এ বছরের ৪ মার্চ কায়সারের বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য প্রদান করে প্রসিকিউশন।
৯ মার্চ থেকে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। গত বছরের ১৫ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কায়সারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। এর পর ২১ মে কায়সারকে রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।