৫ জানুয়ারি ঘিরে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি আবারও অস্থির রাজনীতি

5-January-20-Dal_thereport24আগামী ৫ জানুয়ারি ঘিরে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়েছে প্রধান দুই জোট। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে রাজনীতির মাঠ আবারও অস্থিতিশীল হতে যাচ্ছে বলে রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন। ফলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিরাজ করছে অনিশ্চয়তা আর শঙ্কা।
কর্মসূচি ঘিরে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে দুই জোটই। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট দিনটিকে ‘গণতন্ত্রের কালো দিবস’ হিসেবে পালন করবে। সারাদেশে বিক্ষোভের পাশাপাশি ওই দিন ঢাকায় সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে জোট। এর দুইদিন আগে তিন জানুয়ারিতেও ঢাকায় সমাবেশ করার কথা ২০ দলীয় জোটের।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট ৫ জানুয়ারিকে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই দিন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশসহ সারাদেশে বিজয় মিছিল করবে তারা।
ইতোমধ্যে দুইদিনের সমাবেশের জন্য (৩ ‍ও ৫ জানুয়ারি) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, মতিঝিল শাপলা চত্বর কিংবা নয়াপল্টনে সুযোগ দিতে প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছে বিএনপি। তিন স্থানের যে কোনো একটিতে সমাবেশ করতে চায় বিএনপি।
গত বছরের ৫ জানুয়ারি ‘বিতর্কিত’ নির্বাচনের পর রাজধানীর বাইরে কয়েকটি জেলায় বিএনপি জোট জনসভা করলেও রাজধানীতে বড় কোনো কর্মসূচি ছিল না তাদের।
২০ দলীয় জোট সূত্রে জানা যায় ৩ ও ৫ জানুয়ারি রাজধানীতে বড় ধরনের জনসমাগম করতে কাজ করছে ২০ দল। কর্মসূচি বাস্তবায়নে রাজধানীর সাংগঠনিক থানাগুলোয় ‘সংগ্রাম কমিটি’ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২০ দল।
গত সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে মহানগর ২০ দলের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বড় ধরনের জনসমাগম করে সরকারকে দাবি মেনে নিয়ে দ্রুত নির্বাচনের জন্য চাপ দিয়ে একটি বার্তা পৌঁছাতে চায় বিএনপি জোট। তাদের দাবি, এ কর্মসূচি থেকেই শুরু হবে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন।
তবে, বিএনপি জোটকে ওই দিন খালি মাঠে ছেড়ে দিতে চায় না আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটও। ইতোমধ্যে তারেক রহমানের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ঘোষণা দিয়েছে আগামী ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরে খালেদা জিয়ার (২০ দল) জনসভা করতে দেওয়া হবে না। শুধু তাই নয়, তারেক রহমান ক্ষমা না চাইলে খালেদা জিয়া বা বিএনপি জোটকে কোথাও সমাবেশ করতে না দেওয়ার হুঁশিয়ারি ক্ষমতাসীন দলের এ ছাত্র সংগঠনের।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার দিবস’ অভিহিত করে ওই দিন ঢাকার রাজপথ দখলে রাখার প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছেন, ‘৫ জানুয়ারি বিএনপি-জামায়াতকে ঢাকার রাজপথে পা রাখতে দেওয়া হবে না। সে দিন কোনো প্রকার সমস্যা সৃষ্টি হলে, মানুষ হত্যা, কোরআন শরীফে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করা হলে তা শুধু প্রতিহতই করা হবে না, ওই সব ব্যক্তিকে ধরে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।’
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মঙ্গলবার শেখ রাসেল শিশু-কিশোর সংসদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি বিএনপি জোটের প্রতি এ হুঁশিয়ারি করেন।
মায়া বলেন, ‘আগামী ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার দিবসে রাজপথে থাকবে আওয়ামী লীগ। বিএনপিকে রাজপথে কোনো জায়গা দেওয়া হবে না। ৫ তারিখে দেখব কার হেডম (সাহস) কত।’
তিনি বলেন, ‘৫ তারিখে আমি নিজেই লুঙ্গি পরে রাস্তায় দাঁড়ামু। আমিও দেখতে চাই কার কতটা হেডম আছে?’
নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে মায়া বলেন, ‘পাড়া-মহল্লায় সতর্ক থাকবেন। খোঁজ-খবর রাখবেন—কোনো দুষ্কৃতকারী, কোনো ষড়যন্ত্রকারী যেন আশপাশের বাসাবাড়িতে লুকিয়ে থেকে ষড়যন্ত্র করতে না পারে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান এ বিষয়ে দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘৫ জানুয়ারি গণতন্ত্রের জন্য একটি কালো দিবস। আমরা এ দিনটিকে পালনের জন্য ঢাকায় সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছি। সেভাবেই আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। যদি সরকার এ কর্মসূচিতে বাধা দেয় তাহলে আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তো আগেই বলে রেখেছেন-তিন দিন বা ৭২ ঘণ্টার টানা হরতাল হবে।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘প্রধান দু’টি রাজনৈতিক জোটের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি রাজনীতিকে আবার অস্থিতিশীল করে তুলবে। এতে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।’
মায়ার বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক দলেরই গণতান্ত্রিক অধিকার আছে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের। এটাতে বাধা দেওয়ার ঘোষণা একটা অশনি সঙ্কেত। কোনো দল বা জোটকে কর্মসূচি পালনে বাধা দেওয়া উচিৎ হবে না। আশা করছি, রাজনৈতিক দলগুলো এটাকে গুরুত্ব দেবে।’
এ ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান দ্য রিপোর্টকে বলেন, জনগণ প্রত্যাশা করবে দেশে আর যেন কোনো সহিংসতা না ঘটে। আশা করছি সব রাজনৈতিক দলই শান্তিপূর্ণ ও সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করবে। ২০১৩ সালে যেভাবে সহিংস ঘটনা ঘটেছিল দেশের মানুষ তা আর চায় না। কারণ, রাজনৈতিক সহিংসতা ও সংঘাত দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে। রাজনীতি মুখোমুখি হলে সংঘাত বাড়বে, দেশ আবার অস্থিতিশীল হবে। এর ফলে অগণতান্ত্রিক শক্তির বিকাশ ঘটার আশঙ্কা থাকে। তাই সব দলের নেতাকর্মীদেরই এটা উপলব্ধি করা উচিত।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend