স্বাধীনতার ৪৩ বছর- সূর্যসন্তানদের রক্তে বার বার ভিজেছে বাংলাদেশ
স্বাধীনতার ৪৩ বছরে বাংলাদেশের অনেক প্রাপ্তি থাকলেও রাজনৈতিক আনুগত্য, মতাদর্শগত লড়াই, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ব্যক্তিগত রেষারেষি ও বহির্বিশ্বের ইন্ধনে জীবন দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের সূর্যসন্তানেরা। স্বাধীনতার ঊষালগ্নে ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সালের মধ্যে মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ, কর্নেল এম আবু তাহের, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ও মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুরের মতো মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডাররা স্বগোত্রীয় সশস্ত্র প্রতিপক্ষের হাতে অথবা ফাঁসিতে প্রাণ দিয়েছেন। সামরিক ও বেসামরিক উভয় অংশের মুক্তিযোদ্ধারা এই রক্তক্ষয়ী দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন।
প্রতিটি হত্যাকাণ্ডে কোনো না কোনোভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। চার সেক্টর কমান্ডারসহ ২১ জন খেতাবধারী ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী মুক্তিযোদ্ধা নিহত (মৃত্যুদণ্ডসহ) হয়েছেন এ সব ঘটনায়।
এ ছাড়া জেনারেল জিয়াউর রহমানের শাসনামলে মোট ২২ দফার ক্যু’তে প্রায় আড়াই হাজার মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা ও সদস্য খুন এবং নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
স্বাধীনতার পর পরই মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক সংগঠন মুজিববাহিনীর একটি অংশ নিয়ে গঠিত হয় রক্ষীবাহিনী। এর অপর একটি অংশ দ্বিতীয় বিপ্লবের স্লোগানে স্বাধীনতা উত্তর সরকারের ডাকে সাড়া না দিয়ে বিরোধিতায় নামে। এদেরই একটি অংশ জাসদের গণবাহিনীতে সম্পৃক্ত হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াইয়ে লিপ্ত হয়। তাদের দমনে প্রধান ভূমিকা নেয় রক্ষিবাহিনী, যা ছিল মূলত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যেই জীবন সংহারী এক লড়াই। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সেই লড়াইয়ে রক্ষীবাহিনী ও পুলিশসহ অন্যান্য সশস্ত্র বাহিনীর হাতে ৩০ হাজার প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাকর্মী নিহত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে, যাদের একটি বড় অংশই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ও জাসদ গণবাহিনীর সদস্য। এ ছাড়াও সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বাধীন সর্বহারা পার্টির সদস্য, যারা মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন স্বাধীনতা উত্তরকালে তাদের সঙ্গেও রক্ষীবাহিনীসহ সরকারি বাহিনীর একাধিক সশস্ত্র লড়াই সংঘটিত হয়। দলীয় প্রধান মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ সিকদার রক্ষীবাহিনীর হাতে গ্রেফতার ও নিহত হন। সে সময় গণবাহিনী, সর্বহারা পার্টি, বিভিন্ন বামপন্থী সশস্ত্র বিপ্লবী ও সরকারদলীয় ক্যাডারদের মধ্যে পরস্পরবিরোধী হানাহানিতে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা খুন হন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সময়কার ঘটনাবলী পরবর্তী সময়ে উঠে আসে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও লেখকের বইয়ে।
এ সব সূত্র থেকে জানা যায়, স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সরকারের প্রধানও চরম শত্রুতে পরিণত হয় আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির। ’৭৫-পূর্ববর্তী ঘটনাপ্রবাহে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের (জাসদ নেতাকর্মী) হত্যা করার। একই সঙ্গে জাসদের বিরুদ্ধেও অনেক মুক্তিযোদ্ধা (আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী) হত্যার অভিযোগ রয়েছে। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের সূর্যসস্তানদের রক্তে লাল হয় স্বাধীন বাংলাদেশ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ইতিহাসবিদদের মতে, এ সব বিরোধে বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার ইন্ধনও কাজ করেছিল। তাদের মতে, এ সময় পাকিস্তান ফেরত অমুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসারদের বিরোধ সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সেনা অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসারদের অন্তর্দ্বন্দ্ব ও ক্ষমতার লড়াই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা সেনা সদস্য নিহত হন। সেনা অভ্যুত্থানের কয়েকটি ঘটনায় সামরিক আদালত বা কোর্ট মার্শালে বিচার হলেও তা নিয়ে রয়েছে যুক্তিসঙ্গত বিতর্ক।
তবে স্বাধীনতার ৪৩ বছরে সেনা অভ্যুত্থান বা পাল্টা অভ্যুত্থানের নামে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে কতজন সেনা কর্মকর্তা ও সদস্য নিহত বা নিখোঁজ হয়েছেন, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান ও তালিকা সরকারিভাবে এ পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি। এ সব ঘটনার নেপথ্যের কারণগুলোর সঠিক তদন্ত হওয়ার খবরও জানা যায়নি।
১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত সেনা অভ্যুত্থান ও পাল্টা অভ্যুত্থানে দু’জন রাষ্ট্রপ্রধানসহ নিহত হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের চারজন সেক্টর কমান্ডার। ১৯৭৫ সালের নভেম্বরের ৩ থেকে ৭ তারিখ সংঘটিত অভ্যুত্থান ও পাল্টা অভ্যুত্থানে নিহত হন কে ফোর্সের অধিনায়ক ও ২ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ (বীরউত্তম)।
এই ঘটনায় তার সঙ্গে নিহত হন মেজর হায়দার (বীরউত্তম) ও মেজর নাজমুল হুদাসহ (বীরবিক্রম) আরও বেশ কয়েকজন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কর্নেল ফারুক ও কর্নেল রশিদের নেতৃত্বে কিছু মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তান ফেরত সেনা অফিসার সংঘটিত এক সেনা অভ্যুত্থানে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। তাদেরই হাতে প্রথম নিহত হন বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পাকিস্তান ফেরত সেনা অফিসার জামিল আহমেদ। এটি ছিল সেনা সদস্যের হাতে সেনা সদস্যের প্রথম হত্যাকাণ্ড। ১৫ আগস্টের এই বিয়োগান্তক ঘটনায় নিহত শেখ ফজলুল হক মণি ও সেনা অফিসার বঙ্গবন্ধুপুত্র শেখ জামাল ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। এর পর ৩ নভেম্বর জেলখানায় মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতা মুজিবনগর সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, এম কামরুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
এ সব ঘটনার বিবরণসংবলিত বিভিন্ন দলিলপত্রে দেখা যায়, ’৭৫-এর নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ও জাসদ নেতা কর্নেল এম আবু তাহেরের নেতৃত্বে ‘সিপাহী-জনতা’র বিপ্লবের নামে সংঘটিত পাল্টা অভ্যুত্থানে জেনারেল খালেদ মোশাররফকে হটানো হয়। এ সময় খালেদ মোশাররফসহ আরও দু’জন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা নিহত হন। বর্তমানে ৭ নভেম্বরের এই ঘটনাকে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি’ দিবস হিসেবে পালন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ এই দিনটিকে ‘মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবস’ হিসেবে আখ্যায়িত করে।
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় প্রথম কোনো সেক্টর কমান্ডার নিহত হলেন। ৭ নভেম্বরের পাল্টা অভ্যুত্থানের পর সরকারের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় জেনারেল জিয়াউর রহমানের হাতে।
জিয়াউর রহমানের শাসনামলে দায়ের করা এক হত্যা মামলায় সামরিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার কর্নেল এম আবু তাহেরকে, যা ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই কার্যকর করা হয়।
সেনাবাহিনীতে কর্মরত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটে ১৯৮১ সালে ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি, ১ নম্বর ও পরবর্তী সময়ে ১১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার এবং জেড ফোর্সের প্রধান জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর।
সেনা অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হলে অভ্যুত্থানের দায়ে ৩৩ জন সেনা অফিসার ও সদস্যকে অভিযুক্ত করে সামরিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা হয়।
এর আগে জিয়া হত্যাকাণ্ডের প্রধান পরিকল্পনাকারী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের ৮ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুরকে (বীরউত্তম) গ্রেফতার ও পরে ক্যান্টনমেন্টে হত্যা করা হয়। এ সময় তার সঙ্গে নিহত হন তার ভাগনে কর্নেল মাহবুবুর রহমান (বীরউত্তম) ও লে. কর্নেল মতিউর রহমান (বীরপ্রতীক)।
সরকারি তালিকানুযায়ী অভিযুক্তরা হলেন— ব্রিগেডিয়ার মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন আহমদ (বীরবিক্রম), লে. কর্নেল এ ওয়াই এম মাহফুজুর রহমান (বীরবিক্রম), মেজর নওয়াজিস উদ্দিন, মেজর এম এ রশীদ (বীরপ্রতীক), মোহাম্মদ দিলওয়ার হোসেন (বীরপ্রতীক), ক্যাপ্টেন এ জেড গিয়াসউদ্দিন আহম্মদ, রওশন ইয়াজদানী ভূঁইয়া (বীরপ্রতীক), লেফটেন্যান্ট মজিবুর রহমান, মোহাম্মদ মারুফ রশিদ, ক্যাপ্টেন আব্দুল কাইয়ুম খান, শওকত আলী (বীরপ্রতীক), মোহাম্মদ লতিফুল আলম চৌধুরী, মোহাম্মদ ফজলুল হক, কাজী মোমিনুল হক, লেফটেন্যান্ট মোহাম্মদ ইলিয়াস, মোহাম্মদ রেজাউল করিম, মোহাম্মদ আব্দুস সাত্তার, গিয়াসউদ্দিন আহমদ, সৈয়দ মোহাম্মদ মুনীর, সালাহউদ্দিন আহমদ, মোহাম্মদ রফিক হাসান খান, মোসলেহ উদ্দিন আহমদ, ক্যাপ্টেন জামিল হক, সুবেদার সাজদার রহমান, ক্যাপ্টেন দোস্ত মোহাম্মদ শিকদার, মোহাম্মদ মুস্তফা, লেফটেন্যান্ট এম এম ইকবাল, মোহাম্মদ মইনুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ শামসুল আরেফিন, লেফটেন্যান্ট এ টি এম মেসবাহ উদ্দিন সেরনিয়াবত ও মতিউর রহমান।
বিচারে অভিযুক্তদের মধ্যে ১২ জনকে একসঙ্গে এবং আলাদাভাবে একজন মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসারকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে এ রায় কার্যকর করা হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সেনা অফিসাররা হলেন— ব্রিগেডিয়ার মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন আহমদ (বীরবিক্রম), লে. কর্নেল এ ওয়াই এম মাহফুজুর রহমান (বীরবিক্রম), মেজর নওয়াজিস উদ্দিন, এম এ রশীদ (বীরপ্রতীক), মোহাম্মদ দিলওয়ার হোসেন (বীরপ্রতীক), ক্যাপ্টেন এ জেড গিয়াসউদ্দিন আহম্মদ, রওশন ইয়াজদানী ভূঁইয়া (বীরপ্রতীক), লেফটেন্যান্ট মজিবুর রহমান, ক্যাপ্টেন কাজী মোমিনুল হক, লেফটেন্যান্ট মোহাম্মদ আব্দুস সাত্তার, ক্যাপ্টেন জামিল হক, লেফটেন্যান্ট মোহাম্মদ রফিক হাসান খান। এ ছাড়া সরকারি তালিকায় অভিযুক্ত নন কিন্তু সামরিক আদালতের বিচারে পরবর্তী সময়ে ফাঁসি কার্যকর করা হয় লে. কর্নেল শাহ মোহাম্মদ ফজলে হোসেনের।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসেবে সাবেক সেনা অফিসার কর্নেল শাফায়েত জামিল তার ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর’ বইয়ে লিখেছেন, ‘আজো একটি প্রশ্ন বহু লোকের মনকে আলোড়িত করে, অনেকে আমাকেও জিজ্ঞাসা করেন, ১৫ আগস্ট সামরিক অভ্যুত্থান কেন হয়েছিল? তৎকালীন আন্তর্জাতিক ও দেশীয় রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক একাধিক কারণের উল্লেখ করব না আমি। সে দায়িত্ব রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ইতিহাসবিদদের। যে পরিমণ্ডলে আমার অবস্থান ছিল, তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখব আমার বক্তব্য। আমি পেছনে ফিরে দেখি, সেনাবাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধা ও অমুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের মধ্যে একটা রেষারেষি ছিল। কিছুসংখ্যক অমুক্তিযোদ্ধা অফিসার, যারা মূলত যুদ্ধ শেষে পাকিস্তান প্রত্যাগত, তারা মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের সহ্য করতে পারতেন না। কয়েকজন সিনিয়র অমুক্তিযোদ্ধা অফিসার বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের জাল বিস্তার করতে শুরু করেন। দুঃখজনক হলেও সত্যি, বঙ্গবন্ধুর মহানুভবতায় তারা রাষ্ট্রীয় ও সেনাবাহিনীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হন। তাদের ষড়যন্ত্রের প্রধান লক্ষ্যই ছিল চরিত্র হননের মাধ্যমে সিনিয়র মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের স্বীয় পদ থেকে সরিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দখল এবং পরবর্তীকালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা করায়ত্ত করা।’
কর্নেল শাফায়াত জামিল তার বইয়ে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বগুলোকে তুলে ধরেছেন। স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যের রক্তে বাংলাদেশকে লাল করে স্বাধীনতার স্বপক্ষের আরেকটি শক্তি।
স্বাধীনতার ঊষালগ্ন থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত সময়টাকে মুক্তিযুদ্ধের সূর্যসন্তানদের হারিয়ে যাওয়ার সময় হিসেবে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এ ব্যাপারে কথা হয় মেজর মঞ্জুরের খুব কাছাকাছি থাকা সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) জীবন কানাই দাসের সঙ্গে। তিনি বিতর্কিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে কোনো মন্তব্য করেননি।
সামরিক বাহিনীর বাইরে বীরউত্তম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কাদেরীয়া বাহিনীর প্রধান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই আমেরিকার তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরী কিসিঞ্জারের একটি বক্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হেনরী কিসিঞ্জার সে সময়ে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে কিংবা ভারত বা পাকিস্তানের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধে পাকিস্তান পরাজিত হয়েছে, সেটা আমার কাছে বড় বিষয় নয়। বড় বিষয় হল, ব্যক্তিগতভাবে আমার কূটনৈতিক পরাজয় ঘটেছে।’’’ কাদের সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘হেনরী কিসিঞ্জাররা যখন কোনো বিষয় ব্যক্তিভাবে নেন, তখন তার জের থাকে দীর্ঘমেয়াদী। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব তারই কোনো জের কি-না, কে জানে।’