জানুয়ারিতেই মাঠ দখলের পরিকল্পনা আ’লীগের
জানুয়ারি থেকেই ঢাকার রাজপথ দখলে রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ লক্ষে জানুয়ারির শুরু থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসব্যাপী দলটির সহযোগী, অঙ্গ ও ১৪ দলের ধারাবাহিক কর্মসূচি নির্ধারণের কাজ চলছে।
ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার সকালে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় উপস্থিত একাধিক নেতা এ তথ্য জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগরের প্রচার সম্পাদক আব্দুল হক সবুজ এমন কর্মসূচি প্রণয়নের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমরা জানুয়ারি থেকেই রাজপথে থাকব। বিএনপি-জামায়াতকে বুধবারের মতো সংগঠিত হওয়ার আর সুযোগ দেওয়া হবে না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘বুধবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা দেওয়ার সময় বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিকে আমরা দলটির আন্দোলনের প্রস্তুতিপর্ব হিসেবে দেখছি। আওয়ামী লীগ মনে করছে, বিএনপিকে জানুয়ারিতে মাঠে নামার সুযোগ দিলেই তারা সহিংসতা করবে। সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করবে। এ জন্য দলটিকে জানুয়ারি থেকে শীতের শেষ পর্যন্ত ঢাকার রাজপথে নামতে না দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি কৌশলে জামায়াতকে মাঠের রাজনীতি থেকে সরিয়ে রেখেছে। ফলে যুদ্ধাপরাধের ইস্যুটিও এখন আওয়ামী লীগ বিএনপির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারছে না। এ জন্য মামলা ও নাশকতার ইস্যু তুলেই বিএনপিকে রাজপথের বাইরে রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।’
জানা গেছে, পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও শরিক জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের ধারাবাহিক কর্মসূচি প্রণয়নের কাজ চলছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠনের কর্মসূচির বিষয়গুলোও সমন্বয় করা হচ্ছে।
আব্দুল হক সবুজ আরও বলেন, ‘২৭ তারিখ সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করা হবে। ১ জানুয়ারি মহানগর আওয়ামী লীগ যৌথসভা করবে। সেদিন রাজপথেও অবস্থান করব। ৩ জানুয়ারি আমরা ঢাকার রাজপথে থাকব। ৫ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ ও র্যালি। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে প্রতিদিনই আমাদের কর্মসূচি থাকবে।’
এ দিকে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগের ৬৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ৪ জানুয়ারি। এই দিনে সংগঠনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় ধরনের জমায়েতের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ জন্য ইতোমধ্যে পুরো ঢাকা শহরে বিলবোর্ড ও পোস্টার লাগানো হয়েছে। ৪ জানুয়ারি দুই মাসব্যাপী কর্মসূচিরও ঘোষণা দেবে সংগঠনটি যাতে ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারে।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামছুল কবির রাহাত বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষায় আমরা জানুয়ারি মাসের শুরু থেকেই ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের শরিক ও বর্তমানে বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও ১ জানুয়ারি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করবে। এই মহাসমাবেশে ১০ লাখ মানুষ জমায়েত ঘটানোর প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। সমাবেশে লোক সমাগম বাড়াতে ইতোমধ্যে ঢাকা শহরে দশ লাখ পোস্টার, হাজার হাজার ফেস্টুন ও বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো সফর করেছেন। টাঙ্গাইল, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ থেকে বিপুল সংখ্যক কর্মী আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জাপার মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ‘১ জানুয়ারি মহাসমাবেশে প্রমাণ হবে জাতীয় পার্টি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমরা চেষ্টা করব ১০ লাখ লোক সমাগমের। আমরা জনগণের যে সাড়া পাচ্ছি তাতে মনে হচ্ছে ১০ লাখের বেশি লোক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জমায়েত হবে।’
বাবলু জানান, ১ জানুয়ারি প্রমাণ হবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টিই প্রকৃত বিরোধী দল।’
মাসব্যাপী কর্মসূচির বিষয়ে আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘বিএনপি কি আন্দোলন করবে। জঙ্গিদের নিয়ে কোনো আন্দোলন হয় না। আমরা এখন থেকেই প্রস্তুত। ঢাকার রাজপথে বিএনপিকে আর কোনো নাশকতা কিংবা জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হবে না। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়ব না।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি বলেন, ‘আমরা তো মাঠে আছিই। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের দল সবসময় মাঠে ছিল এবং থাকবে। ২০১৩ সালের মতো বিএনপি-জামায়াতকে আর নাশকতা করতে দেওয়া হবে না।’
১৪ দলের অন্যতম শরিক তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব লায়ন এম এ আউয়াল বলেন, ‘১৪ দল এখন আগের চেয়ে সক্রিয়। জানুয়ারি থেকেই আমরা কর্মসূচি ঘোষণা করব। ঢাকা ও আশপাশের জেলায় ১৪ দলের পক্ষ থেকে সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’