২০ বাড়িঘর ভাঙচুর, তিন শতাধিক রাউন্ড গুলি; আ’লীগের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, এএসপিসহ আহত ৪০

Songgorsho_3শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিকন্দি আবুড়া গ্রামে আওয়ামী লীগ সমর্থক দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ ঠেকাতে গিয়ে জেলার সহকারী পুলিশ সুপারসহ (এএসপি) ১২ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ তিন শতাধিক শর্টগানের গুলি ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।
বিক্ষুব্ধ জনতা এ সময় ২০টি বাড়িঘর ভাঙচুর করে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিষদে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন ২৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী আলমগীর হোসেন হাওলাদার (তালা) ও সিদ্দিকুর রহমান পাহাড় (বই) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে আলমগীর হোসেন হাওলাদার বিজয়ী হন।
আলমগীর হোসেন হাওলাদারের সমর্থক সুজনদোয়াল গ্রামের খলিল মাদবরের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার সকালে বিনোদপুর, চন্দ্রপুর, ডোমসার ও চিকন্দি ইউনিয়নের হাজার খানেক লোক ঢাল, সড়কি, রামদা, ছেনদা, টেটা, বল্লম ও ককটেলসহ সিদ্দিকুর রহমান পাহাড়ের সমর্থক শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিকন্দি আবুড়া এলাকার রমিজ খার বাড়িতে হামলা চালাতে আসে। এ সময় পুলিশ ও সিদ্দিকুর রহমান পাহাড়ের সমর্থকরা তাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশের উপস্থিতিতে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ তিন শতাধিক রাউন্ড শর্টগানের গুলি ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে শওকত সিকদার, জলিল পেদা, রবিন ফরাজি, দেলোয়ার ফরাজি ও রাজিব খান গুলিবিদ্ধ হন।
প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে সিদ্দিকুর রহমান পাহাড়ের সমর্থক আ. আজিজ মাদবর, জলিল মাদবর, আনিছ উদ্দিন মাদবর, দেলোয়ার মাদবর, হালেম মাদবর, মালেক মাদবর, মজিবর মাদবর, শওকত সিকদারসহ ২০টি বাড়িঘর ভাঙচুর ও তছনছ করা হয়।

সংঘর্ষে সহকারী পুলিশ সুপার (নড়িয়া সার্কেল) তানভির হায়দার শাওন ও পালং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম খানসহ ১২ পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ছাড়া সোলায়মান মাদবর, ইউসুফ মাদবরসহ ৪০ জন আহত হন। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সিদ্দিকুর রহমান পাহাড়ের সমর্থক আবুড়া গ্রামের দেলোয়ার মাদবর বলেন, আলমগীর হোসেনের সমর্থকরা আমাদের বাড়িঘরে হামলা করে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে।
আবুড়া গ্রামের ইউপি সদস্য খলিল মাদবর বলেন, চিকন্দি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রমিজ খার অত্যাচার ও নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে বৃহস্পতিবার সকালে কয়েকটি ইউনিয়নের হাজার হাজার লোক প্রতিবাদ করতে আসে। এ সময় পুলিশ বাধা দেয় এবং জনতার ওপর গুলি বর্ষণ করে। এতে প্রায় ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ প্রায় ৩০ জন আহত হন।
পালং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম খান বলেন, চিকন্দি ইউনিয়নের আবুড়া গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান পাহাড়ের সমর্থক রমিজ খার বাড়িতে হামলা করার জন্য আলমগীর হোসেনের হাজার হাজার সমর্থক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলার প্রস্তুতি নেয়। খবর পেয়ে পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ বাধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তিন শতাধিক রাউন্ড গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়।
সহকারী পুলিশ সুপার (নড়িয়া সার্কেল) তানভীর হায়দার শাওন বলেন, শরীয়তপুর সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকরা পরাজিত প্রাথীর সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলার জন্য দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ গিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। এ সময় আমি ও পালং মডেল থানার ওসিসহ ১২ পুলিশ সদস্য আহত হন। পরিস্থিতি সামাল দিতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend