সভা-সমাবেশে বাধা রাজনীতির জন্য অশনিসংকেত
বিএনপিকে জনসভা করতে না দেওয়ার প্রবণতা দেশকে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের দিকে নিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিএনপি বাংলাদেশে বড় একটি রাজনৈতিক দল। তাদের স্বাভাবিকভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে না দিলে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
ইতোমধ্যে এ আলামত শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষ অবস্থান নিশ্চিত করতে না পারলে দেশে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠে ২৭ ডিসেম্বর সমাবেশের ডাক দেয়। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘রাজাকার’ বলায় তারেক রহমানকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানায়। অন্যথায় বিএনপিকে কোথাও সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষতি গাজীপুরে বিএনপির ডাকা সমাবেশস্থলে পাল্টা সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় ছাত্রলীগ। এ পরিস্থিতিতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কায় ওই স্থানসহ গাজীপুরে ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন।
অন্যদিকে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গাজীপুরে সমাবেশে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা আরও বৃদ্ধি পয়েছে। পাশাপাশি গত এক বছরের স্থিতিশীল রাজনীতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির মূল্যায়ন করে বলেন, গাজীপুরে বিএনপিকে সমাবেশ করতে না দেওয়া এবং সেখানে ১৪৪ ধারা জারি সুশাসন ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। রাজনীতির জন্য অশনিসংকেত। এভাবে চলতে থাকলে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল ও ভয়াবহ হয়ে উঠবে।
গাজীপুরে ১৪৪ ধারা জারি প্রসঙ্গে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, পৃথক রাজনৈতিক দলের কর্মসূচী কেন্দ্র করে গাজীপুর জেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে। জননিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয়, এ বিষয় মাথায় রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গাজীপুরে কাজ করে যাবে।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) হারুনুর রশীদ বলেন, জেলায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আশা করি তিনি আইন অমান্য করে এখানে আসবেন না।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তারা গাজীপুর যাবেন। এ বিষয়ে হারুনুর রশীদ বলেন, ‘যদি কেউ আইন অমান্য করে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে আসেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারি এ বিষয়ে বলেন, স্বাধীন দেশে প্রত্যেক দলেরই সভা-সমাবেশের অধিকার রয়েছে। কিন্তু সরকার সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করায় পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে। সরকারের উচিৎ ছিল বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া। এভাবে চললে দেশের পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হয়ে যাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে সবারই মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। সভা-সমাবেশের অধিকার রয়েছে। কিন্তু শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিৎ ছিল নিরপেক্ষ ভূমিকা নেওয়া।
তিনি বলেন, প্রশাসনের ১৪৪ ধারা জারি এবং বর্তমান পরিস্থিতি সামনের রাজনীতিকে আরও ঘোলাটে করে তুলবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. গোবিন্দ চক্রবর্তী বলেন, সভা-সমাবেশ করতে না দেওয়া এবং পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ঘটনা এ দেশে নতুন নয়। এরপরও বিএনপিকে গাজীপুরে সমাবেশ করতে দিলে সরকারের ক্ষতি হতো না। বিএনপি এ ঘটনা পুঁজি করে তাদের আন্দোলন আরও জোরদার করতে পারে। আর সভা-সমাবেশ করতে না দেওয়া গণতন্ত্রের জন্য সুখকর নয়।