প্রিন্ট পাইপ ঘিরে মানুষের ভিড়, ক্ষোভ-আক্ষেপ শিশু জিহাদকে বাঁচানো যেত
রাজধানীর শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির শিশু জিহাদকে উদ্ধারের পরও ওয়াসার পরিত্যক্ত পাইপটি ঘিরে মানুষের আগ্রহ কমছে না। দিনভর পাইপটি দেখতে ভিড় করা অসংখ্য মানুষের মুখে কেবল একটাই আক্ষেপ- ‘শিশু জিহাদকে বাঁচানো যেত।’
শিশু জিহাদকে উদ্ধার নিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের ভূমিকা নিয়েও তীব্র সমালোচনা করেন তারা। শাহাজাহানপুরের রেলওয়ে কলোনি এলাকা ঘুরে রবিবার এ চিত্র দেখা গেছে।
জিহাদের নিথর দেহ উদ্ধারের পরই স্থানীয়রা উত্তেজিত হয়ে ওয়াসার নতুন পাম্প নির্মাণ কাজের স্থাপনা ভাঙচুর করেন। পরে স্থানটির নিরাপত্তায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কিন্তু এরপরও রবিবার দিনভর বিভিন্ন এলাকা থেকে সহস্রাধিক মানুষ অভিশপ্ত পাইপটি দেখতে ভিড় করেন। পাইপটি দেখতে আসা কয়েকজন এ প্রতিবেদকের কাছে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
দোকানদার আক্তার মিয়া বলেন, মূল পাইপটির ভেতর আরও পাইপ ছিল। এটা নিশ্চিত ফায়ার সার্ভিস যত গভীরে জিহাদ রয়েছে বলে জানিয়েছিল, তা ছিল ভুল। জিহাদ আরও অনেক উপরে ছিল। কিন্তু পাইপ তুলে আনায় জিহাদ আরও নিচে পড়ে যায়। ফলে তাকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
আজাদ হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পাইপ তুলে আনায় নিচের জালিতে পেঁচিয়েই জিহাদের মৃত্যু হয়েছে। জিহাদকে উদ্ধারের জন্য কি করা উচিত ছিল তাই তারা জানত না। জুস খাওয়ানোর কথা বলে তারা সময়ক্ষেপণ করেছে। রশি দিয়ে তারা শিশুটিকে তুলে আনার চেষ্টা করেছে। কিন্তু একটি রশি ধরে কীভাবে এ ছোট শিশু উঠে আসবে?
ব্যবসায়ী সোহরাব খান বলেন, ফায়ার সার্ভিস চায়নি শিশুটি বাঁচুক। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে তারা মিথ্যা বলেছে।
মৃত জিহাদ পরিবারকে বাঁচিয়েছে
মৃত জিহাদ তার পরিবারকে বাঁচিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। জিহাদ নিখোঁজ হওয়ার পর পুলিশের আচরণের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে এ ধরনের মন্তব্য করেছেন তারা।
আলোচিত পাইপটি দেখতে আসা কমলাপুরের বাসিন্দা অজয় দাস বলেন, জিহাদ নিখোঁজের ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখেই এখানে আসি। কিন্তু ওই ঘটনা মিথ্যা প্রমাণ করতে পুলিশ জিহাদের বাবাকে ভয় দেখিয়েছে বলে শুনেছি। যাক শেষ পর্যন্ত জিহাদের নিথর দেহ পাওয়া গেছে। অন্যথায় তার পরিবারের অবস্থা কি হত তা বিধাতা জানেন। কারণ উল্টো তার বাবার নামেই মামলা হয়ে যেত। একটা শিশু পাইপের মধ্যে পড়ে গেছে, এটা জানার পরও প্রশাসনের এমন আচরণ অপ্রত্যাশিত।
ভয় ছিল পুলিশ আসবে
জিহাদকে উদ্ধারের আগ পর্যন্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমে মন্তব্য করা অনেকেই পুলিশের হয়রানির ভয়ে ছিলেন। জিহাদের বাবাকে পুলিশ আটক করেছে- শাহজাহানপুরে এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর তাদের মধ্যে এ ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
গণমাধ্যমে মন্তব্য করা রেলওয়ে কলোনির মাঠ সংলগ্ন বাসার আরিফ হোসেন বলেন, রাতে ভয়েই ছিলাম, কখন পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যায়। কারণ ফায়ার সার্ভিস ঘোষণা করেছিল জিহাদ পাইপের ভেতরে নেই। অন্যদিকে তার বাবাকে আটক করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত এটা প্রমাণ হয়েছে যে, আমরা মিথ্যা বলিনি। গত বুধবারও ওই পাইপের ভেতর একটি শিশু পড়েছিল। তাকে আমি উদ্ধার করেছিলাম। বিষয়টি পাশে যারা কাজ করছিল তাদেরও জানিয়েছিলাম। তখন ব্যবস্থা নিলে এ ঘটনা ঘটতো না।
ওয়াসার লোকেরা মুচকি হেসেছিল
জিহাদকে উদ্ধারে সাহায্য চাইলে ওয়াসার লোকজন মুচকি হেসেছিল বলে অভিযোগ করেছেন প্রথম জিহাদের চিৎকার শোনা পুষ্পিতা ও ফাতেমা। শাহজাহানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী জায়েদা ইয়াসমীন পুষ্পিতা বলেন, আমি ও আমাদের ভবনের (ঘটনাস্থল সংলগ্ন ভবন) ফাতেমা আপু পাশেই ব্যাডমিন্টন খেলতেছিলাম। কিন্তু উনি জোরে মারায় কর্ক পাইপের পাশেই পড়ে। কর্ক আনতে গিয়ে শব্দ শুনতে পাই। তখন পাইপের ভেতরে মাথা ঢুকিয়ে শুনি, এক শিশু চিৎকার করছে, ‘মা, মা বাঁচাও’।
তখন ফাতেমা আপুকে ডাকি।
শাহাজাহানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফাতেমা বলেন, পুষ্পিতার ডাক শুনে গিয়ে আমিও একই চিৎকার শুনি। এর কিছুক্ষণ আগে আরও দুই শিশুর সঙ্গে জিহাদকে ঘুরতে দেখেছি।
ফাতেমা বলেন, বিষয়টি পাশে থাকা ওয়াসার দুই লোককে (পাম্পের নির্মাণকাজ করা) জানাই। কিন্তু তারা মুচকি হেসে চলে যায়। পরে অন্যরা এগিয়ে আসে।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির ওয়াসার পুরান পাম্পের পরিত্যক্ত পাইপের ভেতর পড়ে যায় সাড়ে তিন বছরের শিশু জিহাদ। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে পাইপের ভেতরে শিশু নেই বলে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় ফায়ার সার্ভিস। ওই ঘোষণার মধ্যেই পাঁচ যুবক স্থানীয়ভাবে তৈরি ক্যাচার দিয়ে জিহাদের নিথর দেহ উদ্ধার করেন।