আন্তর্জাতিক ১০ সংগঠনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ
গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংগঠনে বাংলাদেশের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। চলতি বছরে কমপক্ষে ১০টি শীর্ষ আন্তর্জাতিক ফোরামে নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণের মাধ্যমে গড়ে ওঠা সংগঠনে বাংলাদেশীদের নেতৃত্বের কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি উজ্বল হচ্ছে। এর আগে একই সময়ে এতগুলো আন্তর্জাতিক সংগঠনে বাংলাদেশের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুটি আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংসদ সদস্যদের ফোরামে বাংলাদেশের দুই রাজনীতিক শীর্ষপদে নির্বাচিত হওয়ার কারণে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংসদ সদস্যদের সংগঠন ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ)-এর সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি। ১২৫ বছরের বনেদী এই রাজনৈতিক সংগঠনটি বিশ্বের সংসদীয় রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। প্রথমবারের কোনো বাংলাদেশী সংগঠনটির সভাপতি হলেন।
কমনওয়েলথভূক্ত দেশগুলোর এমপিদের সংগঠন কনওয়েলথ পার্লামেন্টরি এ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
১৯৭৩ সালে কমনওয়েলথে যোগদানকারী এই প্রথম সংগঠনটির নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। ৫৩ সদস্যবিশিষ্ট সংগঠনটি গুরুত্বপূর্ণ একটি আন্তর্জাতিক ফোরাম। শিরীন শারমিনই প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে এই সংগঠনের সভাপতি হলেন। একই সঙ্গে একজন নারী হিসেবে বিশ্ব রাজনীতির এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হওয়া বাংলাদেশের সামগ্রিক এগিয়ে চলার একটি দৃষ্টান্ত হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।
এ সব অর্জন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের জন্য কী ধরনের ভাবমূর্তি তৈরি করছে? জানতে চাইলে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে আবদুল মোমেন নিউইর্য়ক থেকে টেলিফোনে দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘বৈশ্বিক সংগঠনগুলোতে বাংলাদেশী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা হওয়া নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে সিপিইউ, আইপিওয়ের মতো সংগঠন এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিটিতে বাংলাদেশ নির্বাচিত হওয়া খুবই গৌরবের বিষয়।’
সম্প্রতি জাতিসংঘের ৪৭ সদস্যের মর্যাদপূর্ণ মানবাধিকার কাউন্সিল নির্বাচনেও উত্তীর্ণ হয়েছে বাংলাদেশ। এশিয়া অঞ্চলের প্রতিনিধি হিসেবে অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়াকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে ২০১৫-২০১৭ মেয়াদে নির্বাচিত হয় বাংলাদেশ।
ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের (আইটিআই) সভাপতি হিসেবে টানা দ্বিতীয়বারের মতো দায়িত্বপালন করছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাট্যব্যাক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। নিজে থেকেই আগামীবার নির্বাচন করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) সভাপতি বাংলাদেশের পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সৈয়দ আশরাফুল হক। এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশের এককালের ম্যারাডোনাখ্যাত স্টাইলিশ ফুটবলার ও মুক্তিযোদ্ধা সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনেরও সভাপতি।
গত ২৭ নভেম্বর ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল স্যাটেলাইট অর্গানাইজেশনের (আইএমএসও) মহাপরিচালক পদে নির্বাচিত হন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী ক্যাপ্টেন মঈন উদ্দিন আহমেদ। ফ্রান্স, জামার্নি, ইতালি ও রোমানিয়ার প্রার্থীদের পরাজিত করে নির্বাচিত হন। সংগঠনটি আন্তর্জাতিক স্যাটেলাইট যোগাযোগের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কাজ করে। ১৫ এপ্রিল ২০১৪ থেকে দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন তিনি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সংগঠনটির উপদেষ্টা কমিটির সদস্যও নির্বাচিত হয়েছে।
বিশ্ব শান্তি রক্ষায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বরাবরের মতো নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। বর্তমানে জাতিসংঘে মিশনে প্রায় ১০ হাজার সেনা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য রয়েছেন।
গত ২৭ অক্টোবর দক্ষিণ কোরিয়ার বুশানে ইন্টারন্যাশনাল টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) নির্বাহী সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয় বাংলাদেশ।
বেলজিয়ামে নিযুক্ত বাংলাদেশর রাষ্ট্রদূত ইসমত জাহান চলতি বছরের ২৬ জুন নারীর বিরুদ্ধে বৈষম্য বিলুপ্ত কমিটির (সিডো) সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
এ ছাড়াও, ১৪ আগস্ট এশিয়া-প্যাসিফিক ইনস্টিটিউট ফর ব্রডকাস্টিং ডেভেলপমেন্টের (এআইবিডি) নির্বাচনে দুই বছরের জন্য সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয় বাংলাদেশ। কম্বোডিয়ায় সংগঠনটির ১৩তম সাধারণ অধিবেশনে গোপন ব্যালটে এ নির্বাচন হয়। এটি টেলিভিশন ও রেডিওর সক্ষমতা ও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত বিশটি দেশের সংগঠন।
আইপিইউয়ের সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীর কাছে মন্তব্য জানতে চাইলে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এ সব অর্জন নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক। একই সঙ্গে অনেক দায়িত্বও এসেছে। সঠিকভাবে তা পালন করতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচিত হওয়া নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। তবে, দেশের অর্জন নির্ভর করবে দায়িত্বশীলদের কাজের ওপর।’
মিয়ানমারের এম উথান দীর্ঘ সময় জাতিসংঘের মহাসচিব ছিলেন উল্লেখ করে ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘ওই সময়ে মিয়ানমারের ভাবমূর্তির বিশেষ কোনো উন্নতি হয়নি। কারণ, ব্যক্তির পদ পাওয়ার পর তার কাজই নির্ধারক হয়। আমাদেরকে সেই কাজের মূল্যায়ণের জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে।’