‘ভোটারবিহীন’ নির্বাচন করেও কূটনীতিতে সফল আ’লীগ
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি `ভোটারবিহীন’ নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এলেও কূটনীতিতে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতা নেওয়ার এক বছরের মাথায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে জাপান, পরে চীন, ভারত, জাতিসংঘের সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, সার্ক সম্মেলনে নেপাল, মালয়েশিয়াসহ একাধিক দেশ সফর করেছেন। আর এর মধ্যে বাংলাদেশও সফর করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিন জে আবে।
তবে সরকারের সবচেয়ে বড় সফলতা হচ্ছে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) ও কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির পদ লাভ। ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সাবের হোসেন চৌধুরী ও কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রক্রিয়াধীন ছিটমহল বিনিময় চুক্তিটি হলে এ সাফল্যের পাল্লা আরও বেশী ভারী হবে বলে দাবি আওয়ামী লীগ নেতাদের।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী বলেন, ‘বর্তমান সরকারের নীতিই হচ্ছে সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। আমরা আমাদের প্রতিবেশী সকল দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। আশা করি,ভারতের সঙ্গে খুব শিগগিরই ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর গত ২৪ অক্টোবর চার দিনের সরকারি সফরে জাপান যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের আমন্ত্রণেই ছিল এই সফর। ১০৯ সফরসঙ্গীর মধ্যে ৪৪ জনের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল নিজ খরচে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী ছিলেন। গঙ্গা বাঁধ প্রকল্প, যমুনা নদীর নীচে একটি মাল্টি-মোডাল ও বহু লেনবিশিষ্ট টানেল নির্মাণ, দেশের দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (এনপিপি), যমুনা নদীর উপরে বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরাল একটি রেলসেতু, পূর্বাঞ্চলীয় বাইপাস সড়ক, ঢাকার আশপাশের দখল করা নদীগুলো পুনরুদ্ধার ও কালনায় একটি সেতু নির্মাণের মাধ্যমে মাওয়া-কালনা-নড়াইল-যশোর সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, চট্টগ্রামে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এই সফরে জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের আলোচনা হয়।
এর পর ৭ সেপ্টেম্বর দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজে আবে। সফরে ঢাকায় দুই প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মোবাইল ও অটোমোবাইল সংযোজন খাতে জাপানী বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা হয়। পাশাপাশি অবকাঠামো খাতের বৃহৎ প্রকল্প, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ রফতানি বৃদ্ধি, প্রাথমিক জ্বালানী নিরাপত্তা ও বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে জাপানী সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা হয়। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন তিনি।
এ ছাড়া চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াঙের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী গত ৬ জুন চীনে ৬ দিনের সরকারি সফর করেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অন্যদের মধ্যে ছিলেন- বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ও তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এ কে এম শামীম চৌধুরী।
এ ছাড়াও এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে ৭০ সদস্যের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চীন সফরে ছিলেন।
এ ছাড়া ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠনের পর প্রথমবারের মতো জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে ২১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক যান প্রধানমন্ত্রী। ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে শেখ হাসিনা ২৬ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ও রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামের সঙ্গে কো-চেয়ার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া ২১ নভেম্বর সাউথ সাউথ পুরস্কারও লাভ করেন প্রধানমন্ত্রী।
পরে ২৬ নভেম্বর নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্ক সম্মেলনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী।
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী ১ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সে দেশ সফর করেন। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন। দুই নেতা জনশক্তি রফতানি, ভিসা প্রক্রিয়া শিথিল, পর্যটন ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে একটি চুক্তি, দুটি সমঝোতা স্মারক ও একটি প্রটোকল স্বাক্ষর করেন। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার বিষয়েও ঐকমত্য হয়। মালয়েশিয়ার সঙ্গে স্বাক্ষরিত প্রটোকলের আওতায় দেশটির সারাওয়াক প্রদেশে ১২ হাজার বাংলাদেশীর কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা পর্যায়ক্রমে বেড়ে ৬০ হাজারে উন্নীত হবে। যারা অবৈধভাবে সেখানে রয়েছেন, তাদের বিষয়টি ‘দেখার’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী।
এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত্র সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. দীপু মনি বলেন, ‘আমাদের নীতি হচ্ছে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব রক্ষা করে দেশকে এগিয়ে নেওয়া। অনেকেই বলেছিলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে বিদেশীরা সমর্থন দেননি। কিন্তু আইপিইউ, সিপিএ তে বাংলাদেশের বিজয় প্রমাণ করেছে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে। কেননা, নির্বাচিত সভাপতি দু’জনই ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য।’