খালেদা ইতিহাসের ফল ভোগ করছেন : এরশাদ
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থাকে ইতিহাসের ফল ভোগ বলে অবহিত করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দেশের সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে বসে আলোচনারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বৃহস্পতিবার বিকেলে এক মহাসমাবেশে তিনি এ আহ্বান জানান।
খালেদা জিয়ার উদ্দেশে তিনি বলেন, ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। ইতিহাসের বিচার বড় নির্মম। আমাকে জেলে পাঠিয়েছিলেন, আমার স্ত্রী-পুত্রকে বন্দী করেছিলেন। আমিতো তবু জেলে থেকে সপ্তাহে একদিন স্ত্রী-পুত্রের সঙ্গে দেখা করতে পারতাম। আপনি কবে আপনার দুই ছেলের দেখা পাবেন, তা আল্লাহই জানেন।
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে এরশাদ আরও বলেন, ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি আপনি শুরু করেছেন। বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ আপনি শুরু করেছেন। স্পেশাল কোর্ট গঠন করেছেন। সমাবেশে ১৪৪ ধারার রীতি আপনি শুরু করেছিলেন। আমার ১৪২টি জনসভায় ১৪৪ ধারা জারি করেছিলেন। ইতিহাসের পরিক্রমায় সেই স্পেশাল কোর্টেই এখন আপনার বিচার হচ্ছে। আপনার জনসভায় ১৪৪ ধারা জারি হয়। প্রতিহিংসার রাজনীতির যে ইতিহাস আপনি সৃষ্টি করেছিলেন, এখন তারই ফল আপনাকে ভোগ করতে হচ্ছে।’
দেশের সব রাজনৈতিক দলকে আলোচনার আহ্বান জানিয়ে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি দেশের সবচেয়ে বর্ষীয়ান রাজনীতিক হিসেবে সব দলের প্রতি আহ্বান জানাই— আসুন আমরা একসঙ্গে বসি, সমাবেশ করি, আলোচনা করি কীভাবে সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গঠন করা যায়, একটি সুন্দর ভবিষ্যত গঠন করা যায়।’
রাজনৈতিক অঙ্গনে সহমর্মিতা-শ্রদ্ধাবোধের অভাবে হতাশাও প্রকাশ করেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, ‘আমরা কী একসঙ্গে বসতে পারি না?’
সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পাশাপাশি সরকারের নানা পদক্ষেপেও অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এরশাদ। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে সংসদ থেকে ওয়াকআউট করারও হুমকি দেন তিনি।
সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘সরকারকে আহ্বান জানাই— এই কাজ করবেন না। বিদেশে যে ১৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে তা উদ্ধার করার ব্যবস্থা করুন। যদি ওই টাকা দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আনা যায় তাহলে এই দাম বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে না।’
ক্ষমতায় থাকাকালে গণঅভ্যুত্থানের সময় ১৯৮৭ সালে যুবলীগকর্মী নূর হোসেনের মৃত্যুর জন্য নিজের দায় অস্বীকার করেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন, ‘নূর হোসেনের মৃত্যুতে আমাকে দায়ী করা হয়। নূর হোসেনকে কে খুন করেছিল? পুলিশ গুলি করলেতো সামনে থেকে করত, তাকে (নূর হোসেন) গুলি করা হয়েছিল পেছন থেকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নূর হোসেনকে প্ল্যান করে হত্যা করা হয়েছিল। কারণ তখন যারা আন্দোলন করছিল, তাদের একটা লাশের প্রয়োজন ছিল। নূর হোসেন লাশের রাজনীতির শিকার।’
সমাবেশে বক্তব্যে জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ দল ছেড়ে যাওয়া নেতাদের বিভেদ ভুলে দলে ফিরে আসার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন এলে প্রতিটি দল নিজেদের গোছায়, সংগঠিত করে। কিন্তু দেশে যতবার নির্বাচন হয়েছে, ততবারই আমাদের দল বিভক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত চারটি নির্বাচন হয়েছে। প্রতিটি নির্বাচনেই আমরা আমাদের অনেক নেতাকর্মীদের হারিয়েছি।’
দল ছেড়ে যাওয়া নেতাদেও উদ্দেশে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ‘অনেকেই আমাদের ওপর অভিমানবশত দূরে সরে গেছেন। আমি আশা করব, তারা বিভেদ ভুলে আবার জাতীয় পার্টিতে ফিরে আসবেন।’
সমাবেশে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সংসদ সদস্য সালমা ইসলাম, এম এ হান্নান, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, এস এম ফয়সল চিশতী উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন।