জিডির প্রতিদানে অবরুদ্ধ খালেদা
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। প্রথমজন বর্তমান আর পরেরজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। দু’জনই একাধিক সময়ে বাংলাদেশ শাসন করেছেন এবং করছেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, এই দু’জন নেতা বিভিন্ন সময়ে বা সব সময়েই বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে একে অপরকে ঘায়েল করে থাকেন। তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় ‘সহিংসতা’ একটি বড় স্থান দখল করে আছে। এই দুই নেতার ব্যক্তিগত আক্রোশের মূল্য সব সময়েই সাধারণ জনগণের জীবনের ওপর দিয়ে যাচ্ছে।
বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার অংশ হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া তার নিরাপত্তা চেয়ে গত ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীর চকবাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিন্তু বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জিডি দায়েরের কাউন্টার দিয়েছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার পরিচয় দিয়েছেন। নিরাপত্তা চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়। প্রথমে নিরাপত্তার অজুহাতে বেগম খালেদা জিয়াকে তার বাসভবন থেকে দলীয় কার্যালয় (গুলশান) পর্যন্ত চলাচল করতে দেওয়া হয়। বর্তমানে বেগম খালেদা জিয়াকে তার কার্যালয়ের বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না, তিনি অবরুদ্ধ। কারণ, নিরাপত্তা।
নিরাপত্তার অজুহাতে বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ রাখা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘এটি একটি নাটক। বিএনপি চেয়ারপারসন অতীতেও অনেকবার এ ধরনের নাটক করেছেন। খালেদা জিয়াকে তার গুলশান অফিসে আটক করা হয়নি। কে তাকে আটক করবে? তিনি যে কোনো সময় তার বাসায় চলে যেতে পারেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী তার গুলশান অফিসে অবস্থান করছেন। আগে থেকেই সেখানে বিছানা এবং অন্য ফার্নিচার সজ্জিত রাখা হয়েছিল। অথচ এখন তিনি দাবি করছেন যে, তাকে সেখানে আটক করা হয়েছে। এ ধরনের নাটক তার জন্য নতুন নয়। তিনি অতীতেও এ ধরনের অনেক নাটক করেছেন। পুলিশ তার অনুরোধে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে। তার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সাড়া দেওয়ায় তিনি (বেগম খালেদা জিয়া) এখন দাবি করছেন, তাকে আটক করা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া ১৯৮৬ সালে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময়েও এ ধরনের নাটক করেছেন। দেশবাসীকে বিদ্রোহ করার আহ্বান জানিয়ে সে সময় তিনি আত্মগোপন করেন। অথচ পরে পুলিশ তাকে হোটেল পূর্বাণীতে খুঁজে পায় এবং হোটেল কক্ষের দরজা ভেঙ্গে তাকে বের করে আনে। একইভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহের সময় দুই ঘন্টা আত্মগোপন করে থাকেন। বিএনপিপ্রধান দেশ ও জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলার জন্য এ ধরনের লুকোচুরি খেলেন। আপনার (বেগম খালেদা জিয়া) নাটকের কথা সবাই জানেন। সুতরাং আমি আপনাকে (বেগম খালেদা জিয়া) বলতে চাই যে, এ ধরনের নাটক ও মানুষ হত্যা বন্ধ করুন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের পর বেগম খালেদ জিয়া রবিবার রাতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ‘বিবিসি’তে তার জবাব দেন।
বেগম খালেদ জিয়া বিবিসিকে বলেন, ‘আমাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তবে কর্মীরা মাঠে রয়েছেন। সোমবারের কর্মসূচি চলবে। আমি ওই কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করব। শনিবার রাত থেকে আমাকে পুরোপুরি অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। কোনো কর্মসূচির আগে কোনো দলের নেতাকে এভাবে অন্তরীণ করে রাখার নজির বাংলাদেশে নেই। নির্বাচনের আগেও গত বছরের (২০১৩ সাল) ২৯ ডিসেম্বর আমি কর্মীদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু সরকার যেতে দেয়নি। এবার আরও বেশি পুলিশ দিয়ে আমাকে বাধা দেওয়া হচ্ছে।’
সর্বশেষ সোমবার বিকেলে গুলশান কার্যালয় থেকে গাড়িতে চড়ে বের হওয়ার চেষ্টা করেন খালেদা জিয়া। কিন্তু পুলিশি বাধায় তা সম্ভব না হওয়ায় তিনি সেখানেই গাড়ি থেকে বের হয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত সারাদেশে অবরোধ চলবে।
তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র নির্বাসিত। অবৈধ সরকারের কারণে দেশের গণতন্ত্র বিপন্ন। আমাকে কার্যালয় থেকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না।
বুদ্ধিবৃত্তির খেলায় বেগম খালেদা জিয়ার ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জবাবে শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন উপহার দেন। ১৫ ফেব্রুয়ারির পর মাত্র দেড় মাস ক্ষমতায় ছিলেন খালেদা জিয়া, তবে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ৩৬৫ দিন পার করলেন শেখ হাসিনা।