নাটোর, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে মঙ্গলবার হরতাল; সারাদেশে সহিংসতায় নিহত ৪, আহত দুই শতাধিক

Violence

২০ দলীয় জোট ঘোষিত ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ কর্মসূচি সফল করতে সারাদেশে সহিংসতায় ঝরে গেল চার তাজাপ্রাণ। এর মধ্যে নাটোরে দুই ছাত্রদলকর্মী এবং রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএনপির দুই কর্মী রয়েছেন।

জোটের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সারাদেশে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের হামলায় তাদের দুই

শতাধিক নেতাকর্মী আহত এবং সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
২০ দলীয় জোট ঘোষিত কর্মসূচি পালন করতে না দেওয়ায় সারাদেশে অবরোধের পাশাপাশি নাটোর, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে দলীয় কর্মী হত্যার

প্রতিবাদে ওই তিন জেলায় হরতালের ডাক দেওয়া হয়েছে।

নাটোর : নাটোরের তেবারিয়ায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে রাকিব আলী

ও রায়হান নামে দুই ছাত্রদলকর্মী নিহত হয়েছেন। ওই ঘটনায় অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন।

ওই ঘটনার প্রতিবাদে নাটোরে মঙ্গলবার সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে জেলা বিএনপি। আহতদের নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা

হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার সকালে শহরের তেবারিয়া এলাকায় বিএনপি ও আওয়ামী

লীগের নেতাকর্মীরা সমাবেশের প্রস্তুতি নেয়। দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সংঘর্ষ ও গোলাগুলি শুরু হয়। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হন।

আহতদের মধ্যে রাকিব আলী ও রায়হানকে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। তাদের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। রাকিব তেবারিয়া এলাকার চাঁন মিয়ার ছেলে। রায়হানের বাড়ি একই এলাকায়। তার বাবার নাম জানা যায়নি।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক নিহত দুই যুবক ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী বলে দাবি করেন।

নাটোর পুলিশ সুপার বাসুদেব বণিক  জানান, এলাকায় র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। আহতদের নাটোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

Violence_Country_Inner_রাজশাহী : জেলার পুঠিয়ায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপিকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় মজির উদ্দিন (৪৫) নামে এক বিএনপিকর্মী নিহত হয়েছেন। তার বাড়ি চারঘাট উপজেলার মাড়িয়া গ্রামে। পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে সোমবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন।

ওই ঘটনায় গুরুতর আহত চারঘাটের বামনদিঘী এলাকার আজাদ আলীর ছেলে মোমেনুল ইসলাম (৩০) ও পুঠিয়া উপজেলার বালিয়া এলাকার নাজমুল হোসেনের ছেলে তুহিনকে (২৫) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুঠিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাফিজুর রহমান হাফিজ দ্য রিপোর্টকে জানান, পুলিশের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চারঘাট উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবু সাইদ চাঁদের নেতৃত্বে বানেশ্বর বাজারে সমাবেশের চেষ্টা করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। পুলিশ বাধা দিলে বিএনপিকর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও গুলি চালায়। সংঘর্ষ থেমে গেলে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মজির উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

তবে বিএনপি নেতা আবু সাইদ চাঁদ সাংবাদিকদের জানান, পুলিশের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কর্মীরা হামলা চালায়। এ সময় পুলিশের গুলিতে তাদের কর্মী মজির উদ্দিন নিহত হন।

পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরহাদ আহমেদ জানান, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে জনসভা শুরুর কিছুক্ষণ আগে অনুমতি চেয়ে একটি আবেদন পাঠানো হয়। কিন্তু গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সেখানে সহিংসতার আশঙ্কায় তাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু এরপরেও বিএনপি সেখানে সমাবেশ করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। কিন্তু পুলিশের ওপর নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে।

তিনি আরও জানান, জনগণের যানমালের নিরাপত্তা ও সরকারি সম্পদ রক্ষার স্বার্থে পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও গুলি চালায়। এতে বিএনপির এক কর্মী মারা গেছেন বলে শুনেছি।

সংঘর্ষে বিএনপির কর্মী মজির নিহত হওয়ার ঘটনায় রাজশাহী জেলা বিএনপি মঙ্গলবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করেছে। সোমবার সন্ধ্যায় রাজশাহী জেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : জেলার কানসাটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিএনপিকর্মীদের সংঘর্ষে জমসেদ আলী (৪০) নামে এক বিএনপিকর্মী নিহত হয়েছেন। ওই ঘটনায় মঙ্গলবার জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতালের আহ্বান করা হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জারি করা ১৪৪ ধারা মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

Violence_Country_Inner (2)বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সাবেক সংসদ সদস্য হারুন-উর-রশিদ হরতাল আহ্বানের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) আল-মামুন জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় শিবগঞ্জ পৌর এলাকা, কানসাট সোলেমান ডিগ্রি কলেজ মাঠ ও কানসাট এলাকায় সোমবার দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু বিকেল ৩টার দিকে কানসাট বাজার এলাকায় লাঠিসোটা নিয়ে বিএনপি-জামায়াত শিবিরের লোকজন সমাবেত হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা তাদের ধাওয়া করলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।

তিনি আরও জানান, বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে শর্টগানের গুলি ও টিয়ারশেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ইরতিজা জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় শিবগঞ্জ পৌর এলাকা, কানসাট সোলেমান ডিগ্রি কলেজ মাঠ ও কানসাট এলাকায় সোমবার দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জারি করা ১৪৪ ধারা মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে কোনো সভা-সমাবেশ করা যাবে না।

রংপুর : নগরীর সিটি বাজার এলাকায় সোমবার দুপুরে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা ৫টি যানবাহন ভাঙচুর ও নগরীর স্টেশনরোড এলাকায় বিএনপি দলীয় কার্যালয়ের সামনে সড়ক অবরোধ করে নেতাকর্মীরা লাঠি মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। সেখানে রংপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সামসুজ্জামান সামু বক্তব্য রাখেন।

অপরদিকে, রংপুরের মিঠাপুকুরে বিএনপি-জামায়াত জোট বিক্ষোভ মিছিল বের করার চেষ্টা চালালে পুলিশ দুই রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পুলিশের টিয়ারশেল নিক্ষেপে বিএনপি-জামায়াতের ১০ কর্মী আহত হন।

তবে মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম বিএনপি-জামায়াত জোটের কেউই আহত হননি বলে  জানিয়েছেন।

রংপুর জেলা পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর  জানিয়েছেন, রংপুরে যেকোনো নাশকতা কিংবা অরাজকতা এড়াতে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। এ ছাড়া নগরীতে পুলিশের চেকিং পোস্ট বসানো হয়েছে।

তিনি আরও জানান, পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।

চট্টগ্রাম : জেলার কাজীর দেউড়ি এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এরপর নগর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের নাসিমন ভবনের সামনে শুরু হওয়া বিএনপির সমাবেশ পণ্ড করে দিয়েছে পুলিশ। এ সময় ১২ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ।

বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পুলিশ গিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়ে সমাবেশ পণ্ড করে দেয়।

সমাবেশে নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম, উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক আসলাম চৌধুরী, সাবেক হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল হক, নগর বিএনপির সহ-সভাপতি শামসুল আলম ও আবু সুফিয়ান, সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল পৌনে ৩টার দিকে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা বিএনপির কার্যালয় নাসিমন ভবন থেকে ‘গণতন্ত্র’ লেখা একটি প্রতীকী কফিন নিয়ে কাজীর দেউড়ি মোড়ে এসে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়।

এ সময় বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা এলোপাতাড়ি ভাঙচুর শুরু করলে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করে। এতে উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের খবর ছড়িয়ে পড়লে পুরো এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় নাসিমন ভবনের অদূরে একটি মিনি ট্রাকে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদার জানান, বিএনপির লিখিত আশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন ঘটেছে উল্টোটা। সুতরাং তাদের এর খেসারত দিতেই হবে।

ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহের বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের ২৫ কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার ভোর ও সকালে অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাদের আটক করে।

জেলা শহরের এইসএসএস সড়কে ও শেরে বাংলা সড়ক ও পায়রা চত্বরে এবং হামদহ মোড়ে সোমবার সকাল ১১টার দিকে পৃথক মিছিল বের করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশ মিছিলে বাধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে শহরের পায়রা চত্বরে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া শৈলকুপা উপজেলার শেখপাড়া বাজারে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ। এসব সংঘর্ষে পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের ঝিনাইদহ সদরসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।

বান্দরবান : বান্দরবানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশসহ ২৫ জন আহত হয়েছেন। জেলা বিএনপির অফিসসহ বেশ কয়েকটি দোকানপাট ভাংচুর করা হয়েছে। বান্দরবান বাজারে সোমবার দুপুর ১২টায় এ ঘটনা ঘটে।

ভোলা : ভোলায় বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও ছাত্রদলের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে। এ ঘটনায় পুলিশসহ আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন। এদিকে, সংঘর্ষের স্থান থেকে ৭ জনসহ ১৭ জনকে আটক করে পুলিশ।

চাঁদপুর : জেলার বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ-বিএনপি-পুলিশ ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে চারজন গুলিবিদ্ধসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া পুলিশ বিভিন্ন স্থান থেকে ৮ জনকে আটক করেছে।

Violence_Country_Innerশহরের নতুনবাজার ও পুরানবাজারে সোমবার বিকেলে বিএনপি-আওয়ামী লীগ-পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের পিকআপভ্যানসহ বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুর করে বিএনপিকর্মীরা। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধও করেন তারা।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ সাদিদের উপস্থিতিতে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চিত্রলেখা এলাকায় ৭/৮ রাউন্ড শটগানের গুলি ছোড়ে। সন্ধ্যা পৌনে ৬টা পর্যন্ত শহরের চিত্রলেখা মোড়, বিপণিবাগ, নতুন বাজার, পুরান বাজার লোহারপুল, ছায়াবাণী মোড়ে থেমে থেমে চলে এ সংঘর্ষ চলছে। ওই সময় বিপণিবাগ থেকে তরুণ আইনজীবী মাইনুল ইসলামসহ দুজনকে আটক করেছে পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল ৩টার দিকে বিএনপিকর্মীরা চাঁদপুর সরকারি কলেজের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের একটি মিছিল দেখে চিৎকার শুরু করেন বিএনপিকর্মীরা। এক পর্যায়ে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও পুলিশ বিএনপি কর্মীদের ধাওয়া দেয়। এর পরেই চলে দফায় দফায় সংঘর্ষ।

এ সময় ১০টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান বিএনপি নেতাকর্মীরা। সংঘর্ষের সময় শহরের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১৫টি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। প্রায় সোয়া দুই ঘণ্টা শহরে এক ভুতুড়ে পরিবশে বিরাজ করে। এদিকে একই সময় জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার টোরাগড় এলাকায় বিএনপি-পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১০ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে। বিএনপির এমএ মতিন গ্রুপের নেতাকর্মীরা কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করেছে।

হাজীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম সংঘর্ষের ঘটনা নিশ্চিত করেছেন।

অপরদিকে সকালে ফরিদগঞ্জ উপজেলায় বিএনপি-আওয়ামী লীগ ও পুলিশের মধ্যকার ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়েছে। এতে এক শিশুসহ গুলিবিদ্ধ হন ৪ জন। এ ছাড়া অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে পুলিশ ১০ রাউন্ড শটগানের গুলি ছোড়ে। বিক্ষুব্ধ বিএনপিকর্মীরা ফরিদগঞ্জ-লক্ষ্মীপুর সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে রাখেন।

আহতদের মধ্যে আবু তাহের (১০), মানিক মিয়া (৩০), হুমায়ুন মোল্লা (২৭) প্রথমে চাঁদপুর সরকারি জেনালের হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় রেফার করেন চিকিৎসকরা।

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো. আমির জাফর জানান, প্রতিটি ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত করতে পুলিশকে শটগানের গুলি ও শতাধিক রাবার বুলেট ছুড়তে হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থান থেকে ৮ জনকে আটক করা হয়েছে।

কক্সবাজার : কক্সবাজার শহরের বার্মিজ মার্কেট এলাকায় জামায়াত-শিবির ও পুলিশের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। আধঘণ্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে অন্তত ৫ জন জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশ আটক করেছে তিনজনকে। সোমবার সকাল ১০টায় এ ঘটনা ঘটে।

লক্ষ্মীপুর : জেলায় বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এ সময় পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন ভুঁইয়াসহ দুজনকে আটক করা হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা শহরের দক্ষিণ তেমুহনীতে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে কমপক্ষে পাঁচজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

মেহেরপুর : জেলায় রবিবার রাতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিএনপি-জামাতের ১০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। ৫ জানুয়ারি নাশকতার আশংকায় এদের গ্রেফতার করা হয়।

শরীয়তপুর : জেলার সখিপুর থানা যুবদলের যুগ্ম-আহবায়ক শাহাদাৎ হোসেন বেপারীকে নাশকতার আশংকায় রবিবার গভীর রাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপি ও ছাত্রদলের ১০২ জনের বিরুদ্ধে মামলা ও ২৬ জনকে আটক করা হয়েছে। রবিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম জানান, রবিবারের সংঘর্ষের ঘটনায় জেলা বিএনপির সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি ও জেলা ছাত্রদল সভাপতি শামীম মোল্লাকে পৃথক দুটি মামলায় প্রধান আসামি করে ৯১ জনের নাম উল্লেখপূর্বক ১০২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় ২৬ জনকে আটক করা হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর : জেলার রায়পুরে সোমবার বিকেলে আওয়ামী লীগের মিছিলে হামলা করেছে বিএনপির কর্মীরা। এ ঘটনার জের ধরে আওয়ামী লীগ কর্মীরা রায়পুর উপজেলা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর করে। এতে উভয়পক্ষের ২০ জন আহত হয়েছেন।

আহতদের রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত দুজন হলেন কৃষক লীগ নেতা শাহিন ভূঁইয়া ও যুবলীগকর্মী নাঈম। অন্যদের তাৎক্ষণিক নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেলে রায়পুর উপজেলার বামনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতকর্মীর মিছিল নিয়ে রায়পুর শহরে আসেল বিএনপিকর্মীরা মিছিলে হামলা চালায়। এ সময় দু’পক্ষে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হযেছেন।

পরে আওয়ামী লীগকর্মীরা রায়পুর শহরের বিএনপির কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায়।

এদিকে, ঘটনার জের ধরে বিকেল ৫টার দিকে রায়পুর শহরে পৌর কৃষক লীগের সভাপতি শাহিন ভূঁইয়া ও যুবলীগকর্মী নাঈমকে কুপিয়ে আহত করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।

কৃষক লীগ নেতা শাহিন ভূঁইয়াকে আশংকাজনক অবস্থায় নোয়াখালীর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আর যুবলীগকর্মী নাঈমকে রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল হক আকন্দ জানান, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রায়পুর শহরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন বলে জানান।

নোয়াখালী : জেলা শহর মাইজদীতে সোমবার সকাল ১১টায় বিএনপির একটি বিশাল মিছিল বের হয়। মিছিলে পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। এতে বিএনপির দুই কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিছিলটি প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে মাইজদী পৌরবাজারের সামনে এলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় বিএনপিকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। এক পর্যায়ে পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। এতে বিএনপির দুই কর্মী গুলিবিদ্ধ হন।

গুলিবিদ্ধ কর্মীদের নিরাপত্তার স্বার্থে অন্যত্র চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান বিএনপির নেতাকর্মীরা। ঘটনায় আরও বিএনপির ৫ নেতাকর্মী আহত হন। সংঘর্ষ প্রায় আধাঘণ্টা চলে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে থেকে বিএনপির পাঁচ কর্মী ও রবিবার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত ৩৮ জনকে আটক করে।

সুধারাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন গুলিবর্ষণের ঘটনা অস্বীকার করে জানান, জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ ফাঁকা গুলিবর্ষণ করেছে।

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে কালো পতাকা মিছিলের সময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ শতাধিক রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে জেলা বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হাসান রঞ্জন, শহর শিবিরের সভাপতি রাশেদুল ইসলাম শহীদসহ ১২ জন আহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শহরের ইবি রোডের বিএনপি অফিস থেকে সকাল সাড়ে ১১টায় বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা বিএনপি অফিসের সামনে মিলিত হন।

পরে সমবেত নেতাকর্মীরা কালো পতাকা মিছিল বের করলে পুলিশ রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। মিছিলকারীরাও পুলিশের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ পাল্টা রাবার বুলেটে নিক্ষেপ করতে থাকলে বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরকর্মীরা পিছু হটতে থাকে। এ সময় আই আই কলেজ রোড দিয়ে আরও একটি কালো পতাকা মিছিল নিয়ে ছাত্রদল-শিবিরকর্মীরা ইবি রোডে প্রবেশ করে কিছুক্ষণের জন্য ওই রোডের দখল নিয়ে নেয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশে আসলে উভয়ের মধ্যে আবার সংঘর্ষ বাধে। এ সময় তারা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। পুলিশও মুহুর্মুহু রাবার বুলেট নিক্ষেপ করতে থাকে। একই সময় ফজলুল হক রোডেও পুলিশের সঙ্গে মিছিলকারীদের সংঘর্ষ বাধে। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে ইবি রোড, আই আই কলেজ রোড ও ফজলুল হক রোড রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

সংঘর্ষে জেলা বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হাসান রঞ্জন, শহর শিবিরের সভাপতি রাশেদুল ইসলাম শহীদ, শিবিরকর্মী শাহাদাৎ, আতিক, রমজান সেখম সাদ, ঈশান, আশিক, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক আব্দুল আলীমসহ ১২ নেতাকর্মী আহত হন বলে জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক হারুন অর রশিদ খান হাসান জানান।

সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের মিছিলকারীরা পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করায় পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে।’

মুন্সীগঞ্জ : জেলার বিভিন্ন থানায় যুবদল ও জামায়াতের ১৩ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে শ্রীনগরে যুবদলের ৪ জন, সিরজদিখানে জামায়াতের ১ জনসহ ৫ ও মুন্সীগঞ্জ সদরে ৪ জন রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ রবিবার রাতে তাদের গ্রেফতার করে।

পুলিশ জানায়, শ্রীনগরে উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-সম্পাদক মিরাজ হোসেন তামিম, মাসুদ রানা, যুবদল সদস্য শাহীন ও বিল্লালকে, সিরাজদিখানে কেয়াইন ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন, কেয়াইন ইউনিয়ন যুবদলের সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন, যুবদল নেতা রজব হোসেন, মনির খান, রমজান খান ও মুন্সীগঞ্জ সদরে যুবদলের ৪ কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মৌলভীবাজার : জেলার বড়লেখায় ২০ দল ও পুলিশের সংঘর্ষে পৌর মেয়র, সহকারী উপ-পরিদর্শকসহ (এএসআই) ১০ জন আহত হয়েছেন। উপজেলা শহরের বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে এ সংঘর্ষ হয়।

সংঘর্ষে পৌর মেয়র ও বিএনপি নেতা ফখরুল ইসলাম, বড়লেখা থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) বিনয় কুমারসহ ১০ জন আহত হন। আহতদের বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাশেম  জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend