সারা দেশে অবরোধ : খালেদা জিয়া
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত সারা দেশে অবরোধ চলবে।
তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র নির্বাসিত। অবৈধ সরকারের কারণে দেশের গণতন্ত্র বিপন্ন। আমাকে কার্যালয় থেকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না।
সোমবার বিকেলে অবরুদ্ধ খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয়ের ভেতরে গাড়ি থেকে নেমে গণমাধ্যমের সামনে বক্তৃতায় এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, শুধু আমি একা অবরুদ্ধ নই, দেশ আজ কারাগারে পরিণত হয়েছে। নিরাপত্তা দিলে পুলিশ নয়াপল্টনে নিয়ে যেতে পারত আমাকে।
এর আগে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’-এর কর্মসূচিতে অংশ নিতে বের হওয়ার চেষ্টা করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
সোমবার বিকেল পৌনে ৪টায় তিনি তার গুলশান কার্যালয়ের প্রধান ফটকের ভেতরে গাড়িতে চড়ে বসেন। এরপর দীর্ঘসময় তিনি গাড়িতে থাকলেও গাড়ি বের হতে দেয়নি পুলিশ। ফটকের বাইরে পুলিশসহ নিরাপত্তাবাহিনীর কড়া অবস্থান রয়েছে।
এ সময় তার গাড়ির সামনে মহিলা দলের বেশ কয়েকজন কর্মী কালোপতাকা হাতে মিছিল করেন। একপর্যায়ে পুলিশ পিপার স্প্রে নিক্ষেপ করলে আহত হন বিএনপির গুলশান কার্যালয়ের কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামছুদ্দিন দিদার, শায়রুল কবির খান, সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া ও নিলুফার চৌধুরী মনি।
সাংবাদিকদের মধ্যে আহত হন ডেইলি স্টারের রাশেদুল হাসান, বিডিনিউজের সুমন মাহমুদ প্রমুখ।
এরই মধ্যে প্রধান ফটকের বাইরে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। তিনি নেতাকর্মীদের আন্দোলন চালিয়ে চাওয়ার আহ্বান জানান। খালেদা জিয়া প্রধান ফটক খুলে দিতে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বলেও তিনি জানান।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এমএ কাইয়ুম সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়ি বের হতে দেওয়া হচ্ছে না।
এর আগে গুলশান কার্যালয়ের মূল গেটে সোমবার দুপুর ১২টার দিকে তালা লাগিয়ে দেয় পুলিশ। এরপর দুপুর পৌনে ১টার দিকে গুলশান কার্যালয়ের অপর একটি গেটেও পুলিশ তালা লাগিয়ে দেয়।
এদিকে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীরাও প্রস্তুত রয়েছেন যাতে খালেদা জিয়া বের হলে নিরাপত্তার কোনো বিঘ্ন না ঘটে।
প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবসে সারা দেশের পাশাপাশি রাজধানী ঢাকায় জনসভা কর্মসূচি পালন করা হবে। সাধারণত জনসভা হয় বিকেলে। সে অনুযায়ী দুপুরের পর যে কোনো সময়ই বেগম খালেদা জিয়া কার্যালয় থেকে বের হবেন।’
খালেদা জিয়ার গন্তব্য কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেখানে লোকসমাগম হবে, সেখানেই তিনি যাবেন। তবে এই মুহূর্তে তা বলা যাচ্ছে না।’
এদিকে সোমবার সকাল ১০টার দিকে গুলশানের বাসা থেকে খালেদা জিয়ার সকালের নাস্তা পাউরুটি, কলা-ডিম-জুস প্রভৃতি খাবার আনা হয়। খালেদা জিয়া সকাল সাড়ে ৯টায় ঘুম থেকে উঠেছেন বলে মহিলা দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
সকালেও খালেদা জিয়া কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে আজকের কর্মসূচির বিষয়ে কথা বলেছেন। সারা দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতিও তাকে জানানো হয়েছে।
এদিকে গুলশান কার্যালয়ের ৮৬ নম্বর সড়কে মোট ১৩টি বালু ও ইটভর্তি ট্রাক রাখা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের দুটি লরি, একটি পিকআপ ভ্যান রয়েছে। সড়ক মোড়ে জলকামান ও সাঁজোয়া যান রয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শনিবার রাত থেকে গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন। তার সঙ্গে কার্যালয়ে রয়েছেন— দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুল কাইয়ুম, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মহিলা দলের সভানেত্রী নুরে আরা সাফা, সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সাবেক সংসদ সদস্য রেহানা আখতার রানু, নীলুফার চৌধুরী মনি, রাশেদা বেগম হীরা, সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া, সুলতানা আহমেদ, ফরিদা ইয়াসমীন প্রমুখ।