অবরোধের দ্বিতীয় দিন; নোয়াখালী ও সিরাজগঞ্জে নিহত ৩
২০ দলীয় জোটের ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধের দ্বিতীয় দিন বুধবার নোয়াখালীতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে দু’জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় পিকেটারের ইটের আঘাতে সিএনজিচালিত অটোরিকশার এক যাত্রী নিহত হয়েছেন।
দ্য রিপোর্টের নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে দুই যুবদলকর্মী নিহত হয়েছেন। পুলিশসহ আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫০ জন।
নিহতরা হলেন- মিজানুর রহমান রুবেল (৩০) ও মইন উদ্দিন (৩০)। জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক বাবু কামাখ্যা চন্দ্র তাদের যুবদলকর্মী বলে দাবি করেছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার জেলায় সাকল-সন্ধ্যা হরতালেরও ডাক দেন তিনি।
উপজেলার চৌমুহনী বাজারের রেলস্টেশন এলাকায় বুধবার বিকেল ৫টার দিকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। থেমে থেমে তা রাত ৭টা পর্যন্ত চলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেলে চৌমুহনী পূর্ববাজার থেকে বিএনপির চার-পাঁচ হাজার নেতাকর্মী একত্রিত হয়ে মিছিল বের করেন। মিছিলটি রেলস্টেশন এলাকায় পৌঁছলে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশ সংখ্যায় কম থাকায় তারা পিছু হটে। এ সময় বাজারের ৩০-৩৫ দোকান ভাঙচুর, তিনটি মোটরসাইকেল ও দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় আগুন দেয় অবরোধকারীরা।
একপর্যায়ে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও শটগানের গুলি ছোড়ে।
সংঘর্ষে যুবদলকর্মী মিজানুর রহমান রুবেল (৩০) নিহত হন। আহত হন পুলিশসহ কমপক্ষে ৫০ জন। আহত সাহাব উদ্দিন (২০) ও জাহাঙ্গীরের (২৫) অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের নোয়াখালী আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে অন্য আহতদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
আব্দুল মালেক উকিল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. ফরিদ উদ্দিন জানান, রুবেলকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তার শরীরে গুলির চিহ্ন আছে।
অন্যদিকে, আহত মইন উদ্দিনকে (৩০) চৌমুহনীর লাইফ কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৮টা ৫ মিনিটে তিনি মারা যান। হাসপাতালের মালিক ডা. আবু তাহের তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মইনের শরীরেও গুলির চিহ্ন আছে।
জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক বাবু কামাখ্যা চন্দ্র দাস নিহত রুবেল ও মইন উদ্দিনকে যুবদলের কর্মী বলে দাবি করেছেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করা হয়েছে।
বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আইনুল হক দু’জন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন কীনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তারা সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন।
পুলিশ সুপার (এসপি) ইলিয়াছ শরীফ রাত সাড়ে ৮টায় জানান, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, রণক্ষেত্রের পর চৌমুহনী বাজার একেবারে জনমানবশূন্য হয়ে পড়েছে।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জেলার উল্লাপাড়ায় ২০ দলের অবরোধ চলাকালে পিকেটারের ইটের আঘাতে সিএনজিচালিত অটোরিকশার এক যাত্রী নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হন আরও দুইযাত্রী। তাদের উল্লাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ইসমাইল হোসেন (৩৭) উপজেলার জুংলীপুর গ্রামের বাসিন্দা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপজেলার হাটিকুমরুল (সিরাজগঞ্জ রোড) থেকে একটি অটোরিকশা যাত্রী নিয়ে উল্লাপাড়ায় আসার পথে পিকেটাররা হামলা চালায়। পিকেটাররা অটোরিকশা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে ইটের আঘাতে যাত্রী ইসমাইল মারাত্মক আহত হন। এ সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অটোরিকশাটি গর্তে পড়ে গেলে আরও দুই যাত্রী আহত হন। মারাত্মক আহত অবস্থায় ইসমাইলকে বগুড়ায় নেওয়ার পথে দুপুরে তিনি নিহত হন।
উল্লাপাড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল হুদা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।