পুলিশের ছত্রছায়ায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে : রিজভী
২০ দলীয় জোটের অনির্দিষ্ট অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে বুধবার সারাদেশে জোটের নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ ও পুলিশি ছত্রছায়ায় আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। বুধবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি হামলা ও নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের ঘটনায় নিন্দা ও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সারাদেশে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও অবরোধ পালনকালে তাদের ওপর হামলার ঘটনাকে বর্তমান অবৈধ সরকারের দখলকৃত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার শেষ কৌশল হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
রিজভী বলেন, ‘জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া অবৈধ সরকারের আস্ফালন ও জনগণের ওপর সীমাহীন নির্যাতন নিপীড়নের কারণে তাদের জনসমর্থন এখন শূন্যের কোটায় গিয়ে ঠেকেছে। এ কারণেই তাদের পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে অবৈধ সরকারের সকল অপকৌশলই ব্যর্থ হবে।’
রুহুল কবির রিজভী বুধবার পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের চৌমুহনী বাজারে যুবদল নেতা মিজানুর রহমান রুবেল নিহত হওয়ায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন। গুলিতে গুরুতর আহত মহসীনসহ বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী ও পুলিশি হামলায় আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করেন রিজভী।
পাশাপাশি তিনি সারাদেশে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বর্বরোচিত হামলার নিন্দা এবং অবিলম্বে গ্রেফতার হওয়া নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার অবরুদ্ধ অবস্থা তুলে নিয়ে গুলশান কার্যালয়সহ দলের সদর দফতর খুলে দিয়ে সেখানে নেতাকর্মীদের অবাধ যাতায়াত নিশ্চিত করার মাধ্যমে দাফতরিক কর্মকাণ্ড সঠিকভাবে পরিচালনায় সকল বাধা দূর করারও জোর দাবি জানান বিএনপির এই যুগ্ম-মহাসচিব।
বিবৃতিতে রিজভী আহমেদ বুধবার সারাদেশে আহত ও গ্রেফতার হওয়া বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের তালিকা দেন।
গাজীপুর : রিজভী জানান, গাজীপুর জেলা বিএনপি নেতাদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ গ্রেফতারের নামে বর্বরতা প্রদর্শন করেছে। বাবাকে না পেয়ে ছেলেকে গ্রেফতার করে আবার ছেলেকে না পেয়ে বাবাকে গ্রেফতার করে কিংবা বড় ভাইকে না পেয়ে ছোট ভাইকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিএনপি নেতা আলী চৌধুরীকে না পেয়ে তার সন্তানকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ছাত্রদল নেতা সুমনকে না পেয়ে তার বৃদ্ধ বাবাকে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। বড় ভাই জয়নালকে না পেয়ে ছোট ভাইকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
ঢাকা মহানগর : মতিঝিলি থানার ৩২নং ওয়ার্ডে অবরোধের সমর্থনে শান্তিপূর্ণ মিছিল করতে গেলে পুলিশ মিছিল থেকে বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর তারকা, এমরান, আকাশসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করে।
পল্লবী থানা : পল্লবী থানা ১৩নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা আব্দুস সালামকে মঙ্গলবার রাতে পুলিশ বাসা থেকে গ্রেফতার করে।
গুলশান থানা : অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের হলে শ্রমিক দল নেতা জুয়েল ও আলমসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
তেজগাঁও থানা : মিছিল চলাকালে বিএনপি নেতা ইসকান্দার, আলী আবদুর ও হামিদসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
লক্ষীপুর : অবরোধের সমর্থনে শান্তিপূর্ণ মিছিল করার সময় পুলিশ মিছিলে হামলা করে পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাউন্সিলর লোকমান, ছাত্রদল নেতা আছাদ, শ্রমিক দল নেতা জাহাঙ্গীরসহ সাতজনকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
চাঁদপুর : চাঁদপুর জেলা বিএনপি অবরোধের সমর্থনে শান্তিপূর্ণ মিছিল করার সময় পুলিশ মিছিলে গুলি করলে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান দেলোয়ার মাস্টার যুবদল নেতা বাদলসহ ৫০ জন গুলিবিদ্ধ হয়। এ সময় পুলিশ মিছিলে শত শত রাউন্ড গুলি করে।
নোয়াখালী : নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের চৌমুহনী বাজারে অবরোধের সমর্থনে একটি মিছিল বের হলে পলিশ অতর্কিতে গুলিবর্ষণ শুরু করলে জেলা যুবদল নেতা মিজানুর রহমান রুবেল নিহত হন এবং গুলিতে গুরুতর আহত মহসীনসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে জাহাঙ্গীরের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ছাড়া নোয়াখালী সদর পৌরসভায় বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন অবরোধের সমর্থনে শান্তিপূর্ণ মিছিল করার সময় পুলিশ মিছিলে হামলা করলে বিএনপি নেতা রিয়াজ, হৃদয়, মাছুম, হিরুসহ ১০ জন আহত হয়। পুলিশ মিছিল থেকে ছাত্রদল নেতা শুভ যুবদল নেতা আব্দুল আজিজসহ ১১ জনকে গ্রেফতার করে।
নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি শান্তিপূর্ণ মিছিল করলে পুলিশ মিছিল থেকে বিএনপির ২১ ও ২২নং ওয়ার্ড কমিশনারকে গ্রেফতার করে।
খুলনা : অবরোধের সমর্থনে শান্তিপূর্ণ মিছিল করার সময় পুলিশ মিছিল থেকে বিএনপি নেতা সাব্বির মীরসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করে।
সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি অবরোধের সমর্থনে শান্তিপূর্ণ মিছিল করার সময় পুলিশ মিছিলে হামলা চালিয়ে বিএনপি নেতা আব্দুল্লাহ, মেহেদীসহ আটজনকে গ্রেফতার করেছে।
ঠাকুরগাঁও : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গ্রেফতারের প্রতিবাদে হরতালের সমর্থনে মিছিল করার সময় পুলিশ মিছিলে হামলা করে যুবদল নেতা হেলাল, মুক্তা, ছাত্রদল নেতা ডলারসহ আটজনকে গ্রেফতার করে।
নড়াইল : শান্তিপূর্ণ মিছিল করার সময় পুলিশ মিছিল থেকে কৃষক দল নেতা রফিকুল ইসলাম, বিএনপি নেতা মাহফুজ, আলহাজ, ইফতেখার, সাইদুলসহ ১৮ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
লালমনিরহাট : অবরোধের সমর্থনে শান্তিপূর্ণ মিছিল করার সময় পুলিশ মিছিল থেকে বিএনপির ৬ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে।
শেরপুর : শেরপুর জেলা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
নেত্রকোনা : অবরোধের সমর্থনে মদন উপজেলায় একটি মিছিল বের হলে পুলিশ হামলা চালিয়ে বিএনপি নেতা মজিবুর রহমান, মানিক, উজ্জ্বল, বুলবুল, সোহেলসহ ১০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে।