মাঠে নেই ২০ দলের নেতাকর্মীরা , অবরোধের প্রভাব নেই ঢাকায়
২০ দলীয় জোটনেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ কর্মসূচিতে স্বাভাবিক রয়েছে রাজধানী ঢাকা। অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিন মঙ্গলবার বিএনপি ও জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা ঢাকার রাজপথে নামলেও দ্বিতীয় দিন বুধবার তাদের তেমন কোনো অবস্থান চোখে পড়েনি। ঢাকা থেকে দূরপাল্লার বাস না ছাড়লেও রেল ও লঞ্চ যাতায়াত রয়েছে স্বাভাবিক। অবরোধের প্রথম দিন রাজধানীতে অভ্যন্তরীণ যাত্রীবাহী বাস চলাচল কম থাকলেও দ্বিতীয় দিন বুধবার তা ছিল উল্লেখ করার মতো। তবে প্রাইভেটকার চলাচল আগের দিনের মতোই কম ছিল।
৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’-এর কর্মসূচির দিন বিএনপি-জামায়াতসহ ২০ দলের নেতাকর্মীদের পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে ঢাকার রাস্তায় বেশ কিছু স্থানে পিকেটিং করতে দেখা গেলেও বুধবার অবরোধের দ্বিতীয় দিনে তা ছিল না বললেই চলে। বুধবার সকাল ৯টার দিকে পুরান ঢাকার ধোলাইখালে জবি ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল থেকে কয়েকটি বাস ভাঙচুর করে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা রাজধানীর কাঠেরপুল এলাকায় মিছিল বের করে কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এছাড়া রাজধানীর কয়েকটি জায়গায় বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিল বের করলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই স্থান ত্যাগ করে।
তবে বুধবার সন্ধ্যার পর রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের সামনে, আজিমপুর, ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে ও মিরপুর-১১ নম্বরে মোট চারটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
এদিকে ঢাকায় বিএনপি-জামায়াতকে রাজপথে নামতে দেখা না গেলেও বরাবরের মতোই ঢাকার বাইরে নেতাকর্মীরা মাঠে থেকে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন বলে স্থানীয় প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। অবরোধের দ্বিতীয় দিন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমহনীতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে স্থানীয় ২ যুবদল কর্মী নিহত হন। আহত হন পুলিশসহ কমপক্ষে ৫০ জন। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার নোয়াখালীতে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি। একইভাবে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় অবরোধকারীদের ইটের আঘাতে এক সিএনজিচালক নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া দেশের অন্যান্য জেলাতেও বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা অবরোধের সমর্থনে পিকেটিং করেছে বলে দ্য রিপোর্টের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।
জোট সূত্র জানায়, মঙ্গলবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গ্রেফতার হওযার পর থেকেই বিএনপির নেতারা আত্মগোপনে চলে যান। সঙ্গে জোটের শরিক দলের নেতারাও সাবধানে চলাফেরা করছেন।
অন্য যেকোনো সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে.(অব.) মাহবুবুর রহমান সরাসরি ফোন রিসিভ করেন। কিন্তু বুধবার রাতে তার ব্যক্তিগত মোবাইলে ফোন দিলে অজ্ঞাতপরিচয় একজন তার মোবাইল রিসিভ করে প্রথমে বলেন, একটু পরে করেন। আবার একটু পরে বলেন ‘স্যার নেই।’
ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক মনির আহমেদ বলেন, ২০ দলের অবরোধ কর্মসূচিতে জনগণের সমর্থন আছে। ঢাকার বাইরে জোটের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমেছে। ঢাকার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হবে না। এ কয়েক দিনে ঢাকা থেকে কোনো দূরপাল্লার গাড়ি কিন্তু ছেড়ে যায়নি কিংবা ঢাকায় আসেনি। আন্দোলনের গতি আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পাবে।
তিনি বলেন, আমরা কোনো সহিংসতায় না গিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জনগণকে সাথে নিয়ে স্বৈরাচারী সরকারবিরোধী আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। এ অনৈতিক সরকারের পতন না হওযা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
২০ দলের শরিক বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে কর্মসূচি পালনে কোনো ঢিলেঢালা নেই। আন্দোলন চলছে-আন্দোলন চলবে। কিন্তু সরকার তা উপলব্ধি করতে পারছে না। বেগম খালেদা জিয়ার উপরেও তারা পিপার স্প্রে নিক্ষেপ করেছে। অনৈতিক সরকার দিনের পর দিন জনগণের ঘৃণার পাত্রে পরিণত হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, ৫ জানুয়ারি গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ‘অবরুদ্ধ’ অবস্থায় সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর আগের দিন থেকে খালেদা জিয়া গুলশানে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন। দুই দফায় তিনি কার্যালয় থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে বের হতে দেয়নি। বালু, পাথর ও ইটবোঝাই ট্রাক দিয়ে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের দুইটি গেটে প্রতিরোধক তৈরি করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন।