নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ নেই বিএনপির
২০ দলের বাইরে থাকা দলগুলোকে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে পারছে না বিএনপি। এই দলগুলো ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করেছিল। নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ নেই বিএনপির।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলের বাইরে থাকা দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন বর্জন করেছিল ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম, এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বাংলাদেশ, আ স ম আব্দুর রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডি, বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য, চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনের পর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের পক্ষ থেকে আরেকটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলনে তাদের অংশগ্রহণ নিয়ে কোনো আলোচনাই করা হয়নি। বিএনপির পক্ষ থেকে যদি শুধুমাত্র অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রশ্নে যুগপৎ আন্দোলনের জন্য তাদেরকে আহ্বান জানানো হতো তাহলে তারা ভেবে দেখতেন।
আবার কয়েকজন শীর্ষ নেতা জানান, বিএনপি নেত্রী তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে তাদের অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করলে অন্তত এই দাবিতে তারা আন্দোলনে অংশ নিতেন। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে এক বছরেও যোগাযোগ করা হয়নি।
এদিকে ৩ জানুয়ারি রাত থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার গুলশানের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ থাকায় বি চৌধুরী তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশের বাধার কারণে তিনি দেখা করতে পারেননি।
এ বিষয়ে বিকল্পধারা বাংলাদেশের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বলেন, ‘বিকল্পধারার অধিকাংশ নেতাই এক সময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। বেশিরভাগ নেতাই জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী। খালেদা জিয়া বিপদে থাকলে তারা তো আর বসে থাকতে পারে না। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে নেতাদের সঙ্গে আরও আগে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ করা হলে তারা আন্দোলনে অংশ নিতেন।’
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও আরেকটি অবাধ নির্বাচন নিয়ে আন্দোলনের বিষয়ে বিএনপি আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে অনেক আলোচনাই অনেকের সঙ্গে হয় কিন্তু বিএনপি আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি।’
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম বলেন, ‘খালেদা জিয়া প্রধান বিরোধী দলের নেত্রী। তার উচিত ছিল ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর সকল বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করা। সকল দল নিয়ে আলোচনায় বসা। কিন্তু তিনি তা করেননি।’
তিনি আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়া যতো তাড়াতাড়ি তার এ ভুল বুঝতে পারবেন ততো ভাল। ততোই মঙ্গল। এখনো সময় আছে, উনার উচিত সকল বিরোধী দল নিয়ে আলোচনায় বসা।’
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল- বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর সরকার যেমন আরেকটি নির্বাচনের ব্যাপারে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে কোনো আলোচনা করে নাই, ঠিক তেমনি বিএনপিও বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে অবাধ নির্বাচন কিভাবে হতে পারে ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার আন্দোলন নিয়ে কোনো আলোচনা করেনি। এটা অবশ্যই বিএনপির ভুল।’
বামপন্থী এ প্রবীণ নেতা আরও বলেন, ‘বিএনপির উচিত ছিল সাত দফা দাবি দেওয়ার আগে অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসা কিন্তু তারা তা করেননি।’
এ বিষয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বিএনপি আমাদের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো আলোচনা করে নাই। আমরাও গণতন্ত্র চাই। বিএনপিও গণতন্ত্র চায়।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি যদি আমাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করে, টোটাল ডেমোক্রেসির একটা প্যাকেজ বিশেষ করে, বিচার বিভাগ, সুশাসন ইত্যাদি নিয়ে একটা কমিটমেন্টের জায়গায় আসে সে ক্ষেত্রে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু বিএনপির সঙ্গে তো স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতও রয়েছে। সেটাও আমাদের ভাবতে হবে।’
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘অনেকের সঙ্গেই তো আমার ব্যক্তিগতভাবে কথা হয়। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের ব্যাপারে আলোচনার আহ্বান দলীয়ভাবে দেওয়া হয়েছে কিনা, আমি জানি না। তবে আমরা আশাবাদী, অচিরেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণে আরেকটি নির্বাচনের দাবিতে বৃহত্তর প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠবে।