বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট : চেয়ে চেয়ে দেখছে মন্ত্রণালয়

Bangladesh-Govt-Logo-hকূটনীতিকদের (রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, কনসাল জেনারেল) একের পর এক কর্মকাণ্ডে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়গুলো দেখেও না দেখার ভান করছে। ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে বা প্রকৃত দোষীদের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার দৃষ্টান্ত চোখে পড়েনি। এতে দক্ষ, মেধাবী এবং পরিশ্রমী কূটনীতিকরা ভালো কাজের উৎসাহ পাচ্ছেন না।
সর্বশেষ, বাংলাদেশী কূটনীতিক মনিরুল ইসলাম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে করা মামলা খারিজের আবেদন বাতিল করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত। ম্যানহাটন জেলার বিচারক সিডনি স্টেইন গত মঙ্গলবার ওই রায় দেন। গত বছরের মার্চে মাসুদ পারভেজ রানা নামে এক ব্যক্তি নিউইয়র্কের সাবেক কনসাল জেনারেল মনিরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী ফাহিমা তাহসিনা প্রভার বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুত অর্থ না দেওয়া, অতিরিক্ত শ্রম এবং শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেন। বর্তমানে কূটনীতিক মনিরুল ইসলাম মরক্কোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করছেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার জন্য ঢাকা ছাড়ার আগে বলেন, ‘বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে। প্রকৃত দোষীদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো প্রকার দুর্নীতি আর অনিয়মকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ‘বিষয়টি আমিও জানতে পেরেছি।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘দেখা যাক কী হয়।’
পররাষ্ট্র সচিবের কাছে জানতে চাওয়া হয় যে, ঘটনার পর কূটনীতিক মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ খতিয়ে না দেখে তাকে নিউইয়র্ক থেকে মরক্কোতে বদলি করা হলো কেন। সচিব বলেন, ‘সবকিছুতো মিডিয়াকে বলা যাবে না। আমারও হাত-পা বাঁধা আছে।’
জানা গেছে, মনিরুল ইসলাম মরক্কোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার কিছুদিন আগে মামলাটি করেন মাসুদ পারভেজ রানা। নিউইয়র্কের দক্ষিণ জেলা ম্যানহাটনে করা ১৪-০১৯৯৩ নম্বর মামলার অভিযোগে মাসুদ পারভেজ রানা উল্লেখ করেন, তাকে প্রতিমাসে তিন হাজার মার্কিন ডলার করে বেতন দেওয়ার কথা বলে A-3 ভিসা দিয়ে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু মনিরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী তাকে এক থেকে দুই বছর কাজ করালেও কোনো বেতন দেয়নি। এ সময় তারা তাকে প্রতিদিন ১৬ থেকে ২০ ঘণ্টা করে কাজ করতে বাধ্য করেন। এ ছাড়া তাকে নিয়মিত হুমকি ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন মাসুদ পারভেজ রানা।
এর আগে, আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের (আইওএম) গ্রিস অফিসে কর্মরত এক গ্রিক-বাংলাদেশী নারীকে যৌন হয়রানি করেন রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদ। এ বিষয়ে সংস্থাটির মাধ্যমে ভুক্তভোগী ওই নারী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠন করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। কিন্তু এখনো রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে আরও উচ্চতর তদন্ত চলছে।’
ফিলিপাইনের ম্যানিলায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) জন গমেজ পিএসসি ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ম্যানাসে বরের (Menashe Bar) সম্মানে তার বাসায় গত বছরের অক্টোবরে নৈশভোজের আয়োজন করেন। বিষয়টি দ্য রিপোর্টের কাছে স্বীকার করেন জন গমেজ। ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কোনো সম্পর্ক না থাকায় ওই দেশের রাষ্ট্রদূতের সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজকে আইন বহির্ভূত কর্মকাণ্ড বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পরবর্তী সময়ে তাকে ঢাকায় ডেকে পাঠিয়ে মৌখিকভাবে সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘এমন অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কোনো কূটনীতিকের চাকরি থাকার কথা নয়।’
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও বর্তমানে ব্রাজিলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মিজারুল কায়েসের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার, পররাষ্ট্র সচিব থাকার সময় রাশিয়া থেকে চিত্রকর্ম সংগ্রহ করাসহ কয়েকটি কাজে মাত্রাতিরিক্ত অর্থ ব্যয়সহ অনেক অভিযোগ আছে। খোদ সরকারি অডিটে মিজারুল কায়েসের বিরুদ্ধে অর্থ ব্যয়ে আপত্তি এবং নিয়মের বাইরে অর্থ ব্যয় করার অভিযোগ দাখিল করা হয়।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্তে কোনো অভিযোগ প্রমাণ হয়নি।’
অপেশাদার আচরণ ও আর্থিক দুর্নীতির কারণে লেবাননের রাষ্ট্রদূত এএফএম গাওসুল আযম সরকারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনে। এরপর তার বিরুদ্ধে আর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে তদন্ত এখনো চলছে।’
সূত্র: দ্য রিপোর্ট

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend