মায়ের স্বপ্ন কেড়ে নিল ঘাতক ট্রাক
ঢাকার কাঁটাবনে ঘাতক ট্রাক কেড়ে নিয়েছে ইডেন কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী রিমা আক্তারের প্রাণ। তার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার জজিরা গ্রামে। রিমার মৃত্যুর খবরে পাড়া-প্রতিবেশীসহ আত্মীয়-স্বজনের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে।
মাত্র তিন মাস বয়সে রিমা ও তার মাকে ছেড়ে চলে যান বাবা। এরপর মা কষ্ট করে গার্মেন্টসে চাকরি করে মেয়েকে পড়াশোনা শিখিয়েছেন। হঠাৎ একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে দিশেহার মা। স্বপ্ন ছিল মেয়েকে সুশিক্ষিত করে নিজের কষ্টের জীবনের অবসান ঘটাবেন। কিন্তু তার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল।
রিমার লাশ কালকিনির সাহেবরামপুরে নানার বাড়িতে শুক্রবার দুপুর ১টায় আনা হয়। সবাই তখন কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। জুমার নামাজ শেষে রিমাকে নানা বাড়ির কবরস্থানে দাফন করা হয়।
রিমা আক্তারের বন্ধু ইমনের বড় ভাই মামুন সিপাহী জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়ী থেকে বন্ধু ইমনের জন্মদিনের দাওয়াতে অংশগ্রহণ করে রিমা। পরে ইমনের মোটরসাইকেলযোগে কারওয়ান বাজার নিজ বাসায় ফিরছিল সে। কাঁটাবন মোড়ে এলে বিপরীতে দিক থেকে আসা একটি ট্রাক তাদের ধাক্কা দেয়। গুরুতর আহত হন তারা। পরে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আহত ইমন ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন।
রিমার ছোট খালা ইয়াসমিন বেগম জানান, রিমার বয়স যখন তিন মাস তখন বাবা-মায়ের বিরোধের কারণে বাবা হাবিব সরদার চলে যান। আজও তিনি ফিরে আসেননি। এরপর নানা বাড়িতে বড় হয়ে ওঠেন রিমা। সেখানে এসএসসি পাস করে মায়ের সঙ্গে ঢাকায় চলে আসে সে। মা মনি বেগম কারওয়ান বাজারে একটি গার্মেন্টসে চাকরি করে তার পড়ালেখার খরচ জোগাতেন। মায়ের স্বপ্ন ছিল একমাত্র সন্তান রিমা পড়ালেখা শেষে চাকরি করে মায়ের দুঃখ দূর করবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে গেলে।
রিমার নানা নেছার উদ্দিন শিকদার জানান, রিমা তার মায়ের একমাত্র সন্তান। তাকে বুকে নিয়ে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ করার ইচ্ছা ছিল মায়ের। কিন্তু সে এভাবে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যাবে তা ভাবতে পারছি না।