লাগবে ছবি ও প্রয়োজনীয় কাগজ ‘অবরোধে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণ’
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘অবরোধে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবহন মালিককে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’
রাজধানীর গাবতলী মাজার রোডের জমিদার বাড়িতে গাবতলীভিত্তিক পরিবহন মালিকদের সঙ্গে শুক্রবার বিকেলে বৈঠক করেন প্রতিমন্ত্রী। এ সময় তিনি এ মন্তব্য করেন।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি বা ব্যক্তির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ছবিসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে জমা দিতে হবে।’
পরিবহন মালিকদের উদ্দেশ্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি আপনাদের জানিয়ে দিতে বলেছেন।’ অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ ঠিক মতো চলছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আমি বুঝতে পারি না যাত্রীবাহী বাসগুলো কি দোষ করেছে যে সেগুলো জ্বালিয়ে দিতে হবে।
বিএনপির উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা রাস্তায় আসুন। রাস্তায় অবরোধ করুন। ভাঙচুর করবেন না, বাসে আগুন দেবেন না। বেগম জিয়া আর তার নেতারা ঘরে বসে কর্মীদের জ্বালাও-পোড়াওয়ের নির্দেশ দেবেন, এটা হতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘হজের পর আমাদের ইসলাম ধর্মের বড় আয়োজন বিশ্ব ইজতেমা। হাজার হাজার মানুষ এসেছে। আরো অনেক বিদেশী মানুষ আসবে। অথচ তাদের গাড়ি আটকাবেন। ধর্মীয় কাজ করতে দেবেন না। মানুষ শান্তি চায়। জনগণের অংশগ্রহণ না থাকলে গাড়ি ভেঙে ক্ষমতায় যাওয়া যায় না।’
বৈঠকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘২০১৩ সালে আমাদের দেড় হাজার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। আমাদের সম্পদ আমাদেরই রক্ষা করতে হবে। অবরোধের কথা বলে পরিবহন বন্ধ রাখলে টিকিট কাউন্টার বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকার বাইরে জেলাগুলোর বাস কাউন্টারগুলো এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে। যারা বাস চালাবেন না তাদের কাউন্টারগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অবরোধে যানবাহন বন্ধ রেখে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা যাবে না। দেশব্যাপী যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হেলিকপ্টারে টহল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ করি বা সরকারের মন্ত্রী হিসেবে বলছি না, পরিবহন সেক্টরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ক্ষমতায় যাবেন বিএনপি, আওয়ামী লীগ বা জাতীয় পার্টি; কিন্তু পরিবহন শ্রমিক মরবে কেন? পরিবহন পোড়ানো হবে কেন?’
তিনি বলেন, ‘২০ দলীয় জোটের আন্দোলন কোনো পেশাজীবী সংগঠন সমর্থন করেনি। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা যে আন্দোলন করেছিল সেখানে গণমঞ্চ তৈরি হয়েছিল। আজ লড়াইটা আদর্শিক লড়াই। একদিকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি, অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের। মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল, হত্যা করেছিল, তারাই আজ হত্যা করছে, ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে।’
বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের উদ্দেশ্যে সরকারের এ মন্ত্রী বলেন, ‘ধ্বংস বন্ধ করুন, না হলে পরিণতি ভয়াবহ হবে। ক্ষমতা থাকলে জনগণের কাছে আসুন। জনগণকে নিয়ে কথা বলুন।’
পরিবহন মালিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা নির্ভয়ে গাড়ি চালান। গাড়ীর ক্ষতিপূরণের বিষয়টি দেখবে সরকার। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তথাকথিত অবরোধকারীদের প্রতিহত করুন। ২০ দলীয় জোট সাত দফা দিয়ে ক্ষমতায় যাবার স্বপ্ন দেখছে। এ দফার মধ্যে শ্রমিকদের কোনো দাবি নেই। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে ক্ষমতায় যাওয়া যায় না।
বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজবন্দীদের মুক্তির দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজবন্দী ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। রাজনীতি করে যারা জেলে যান মানুষ তাদের রাজবন্দী বলে থাকেন। আর যারা গাড়ি পুড়িয়ে, মানুষ হত্যা করে জেলে যান তারা সন্ত্রাসী। বিএনপি-জামায়াতের কোনো রাজবন্দী নেই।
তিনি বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে যে নাবালক সন্তান তারেক জিয়া বিরূপ মন্তব্য করেছে সে দেশের কুলাঙ্গার। এই কুলাঙ্গার সন্তানের বাংলাদেশে ঠাঁই হবে না।’
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য আসলামুল হক, সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী, পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, শ্যামলী পরিবহনের মালিক রমেশ চন্দ্র ঘোষ, বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স এসোসিয়শনের সভাপতি ফারুক তালুকদার সোহেল, শ্রমিক নেতা মফিজুল হক বেবু প্রমুখ।