ইজতেমা শেষে রাজধানীতে সমাবেশের পরিকল্পনা বিএনপির
দ্বিতীয় পর্যায়ের ইজতেমা শেষে ঢাকায় জনসভা করতে চায় বিএনপি। সমাবেশের জন্য ১৮ অথবা ১৯ জানুয়ারিকে টার্গেট করেই এগোচ্ছে দলটি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেই গণমাধ্যমের মাধ্যমে তা জানিয়ে দেওয়া হবে। বিএনপির একাধিক নেতার কাছ থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
১১ জানুয়ারির প্রথম পর্যায়ের ইজতেমা শেষে ১৬, ১৭ ও ১৮ জানুয়ারিতে দ্বিতীয় পর্যায়ের ইজতেমা। দ্বিতীয় ইজতেমা শেষে সমাবেশের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানা গেছে। এ সময় পর্য্ন্ত অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে বিএনপির।
এদিকে প্রথম পর্যায়ের ইজতেমা শেষ হলে বিএনপি সমাবেশ করতে পারে এমন একটি তথ্যের ভিত্তিতে ক্ষমতাসীনরা রবিবার থেকে মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। শনিবার দলীয় একটি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। এদিকে বিএনপির সমাবেশের সম্ভাবনা নিয়ে আওয়ামী লীগ ১০ জানুয়ারির জনসভা ১২ জানুয়ারি সোমবার পিছিয়ে দিয়েছে। এ কারণেই বিএনপির সমাবেশ দ্বিতীয় পর্যায়ের ইজতেমা শেষে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে বিএনপি দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে চলমান অবরোধ কর্মসূচির কার্যকারিতা নিয়ে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট সন্তুষ্ট। এ সন্তুষ্টি ধরে রেখে তাদের কাঙ্ক্ষিত ফলাফল আদায়ের লক্ষ্যে বিশ্ব ইজতেমা শেষে সরকারবিরোধী আন্দোলনের কঠোরতা আরও বাড়াবে। বাড়বে আন্দোলনের গতি। পাল্টাবে ধরন ও কৌশল। অনির্দিষ্টকালের অবরোধ গড়াতে পারে লাগাতার হরতাল ও অসহযোগ আন্দোলনে।
সূত্র জানায়, মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি পূরণ অথবা আলোচনার জন্য সরকারকে বাধ্য করার পরিস্থিতি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। রাজধানী ঢাকাকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার পাশাপাশি আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করাই দলটির প্রাথমিক লক্ষ্য বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, অবরুদ্ধ অবস্থায় গুলশান কার্যালয় থেকে চলমান অবরোধ কর্মসূচি সরাসরি মনিটর করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিজেই। খালেদা জিয়া নিয়মিত দল ও জোটের সিনিয়র নেতা এবং তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করছেন। সিনিয়র নেতাদের তিনি সম্মিলিতভাবে নেতাকর্মীদের নিয়ে আন্দোলনের মাঠে নামতে নির্দেশনা দিচ্ছেন। তার এ নির্দেশনায় সিনিয়র নেতারা মাঠে নামার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। একই সঙ্গে ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। জোটের অন্যান্য নেতাদেরও কয়েকজন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের দিয়ে নিয়মিত নির্দেশনা পাঠাচ্ছেন। জোট প্রধানের নির্দেশনা পেয়ে শরিক নেতারাও উজ্জীবিত হয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এছাড়াও সারাদেশের দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিতে তিনি বিএনপির দুই যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ ও রিজভী আহমেদকে নির্দেশ দিয়েছেন। তারাও হাইকমান্ডের নির্দেশে প্রতিদিনই নেতাকর্মীদের উদ্দেশে চেয়ারপারসনের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে তারা ঘোষণা দিয়েছেন, সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
এদিকে, লন্ডন থেকে চলমান আন্দোলনের মনিটর করছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি নিয়মিত কমপক্ষে ৬ জন নেতার সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। দিচ্ছেন দিক-নির্দেশনা। একই সঙ্গে কোনো ক্রমেই যেন চলমান কর্মসূচিতে ঢিলেমি ভাব এসে না পরে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতেও কড়া নির্দেশ দিচ্ছেন।
বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, তাদের যতটুকু আন্দোলন প্রস্তুতি রয়েছে, ততটুকু এখনও মাঠে প্রয়োগ করা হয়নি। সরকার পতন আন্দোলনের মূল কেন্দ্র রাজধানী ঢাকার আন্দোলন এখনও শুরু হয়নি। ৫ জানুয়ারি সবেমাত্র মহানগরের নেতাকর্মীরা রাস্তায় নেমে নিজেদের কিছুটা জানান দিয়েছে মাত্র। অবরোধ শুরু হয়েছে, সামনে আছে লাগাতার অসহযোগ ও হরতাল।
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রিজভী আহমেদ শনিবার সকালে নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সর্বশক্তি দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যান। এ সরকারের বিদায় সময়ের ব্যাপার মাত্র।
রিজভী বলেন, আমাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। দলীয় নেতাকর্মীরা কর্মসূচিতে কোন জ্বালাও-পোড়াও করে না। সরকারের গুণ্ডাবাহিনী ও বিভিন্ন এজেন্সির লোকেরা বিভিন্ন জায়গায় আগুন দিয়ে বিরোধী দলের ন্যায্য আন্দোলনে কালিমা লেপন করতে চায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, আন্দোলন দেখে সরকার ইতোমধ্যেই দ্বিধা ও বিচলিত হয়ে পড়েছে। এ জন্য তারা গ্রেফতারের পথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু এতে কোনো কাজ হবে না।
কর্মসূচির বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান দ্য রিপোর্টকে বলেন, আন্দোলনের ব্যাপারে হাইকমান্ডের নির্দেশনা নিয়মিত দেয়া হচ্ছে। চলমান কর্মসূচি থেকে পিছিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সরকার পতন ৭ দিন, ১৫ দিন, ১ মাস এমনকি ৩ মাস লাগলেও আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।
আজম বলেন, শুনেছি ঢাকাতে আবারও জনসভার তারিখ ঘোষণা করবেন ম্যাডাম (খালেদা জিয়া)। তবে এটা কবে হতে পারে এখনও আমাদের জানানো হয়নি। এটা প্রথম পর্যায়ের ইজতেমা অথবা দ্বিতীয় পর্যায়ের ইজতেমার পর হতে পারে।