ইজতেমার পর নাশকতা ঠেকাতে আ’লীগের প্রস্তুতি
বিশ্ব ইজতেমার পর বিএনপি-জামায়াত ঢাকায় প্রবেশ করে নাশকতা চালাতে পারে— এমন আশঙ্কায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে ঢাকার আশপাশের জেলা, সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদেরও প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন দলটির শীর্ষনেতারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে দলটির যৌথসভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ শনিবার দুপুরে উপস্থিত নেতাদের এমন নির্দেশনা দেন।
এ ছাড়া ১২ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসমাবেশে ব্যাপক লোকসমাগমের মাধ্যমে সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শনের জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সমর্থন হারাচ্ছে। দলটি ধীরে ধীরে অন্তঃসারশূন্য সংগঠনে পরিণত হচ্ছে। এ জন্য দলটি নাশকতার পথ বেছে নিয়েছে। এদের প্রতিরোধ করতে হবে।’
আওয়ামী লীগ দলীয় সূত্র জানিয়েছে, রবিবার দুপুরে বিশ্ব ইজতেমার আখেরী মোনাজাতের পর বিএনপি-জামায়াত ঢাকায় নাশকতা চালাতে পারে— এমন আশঙ্কা থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এ জন্য ১২ জানুয়ারির সমাবেশকে ঘিরে ১১ জানুয়ারি থেকেই রাজপথে থাকবে দলটির নেতাকর্মীরা। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওই সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, রবিবার সকালে ইজতেমার আখেরী মোনাজাতের পর বিএনপি-জামায়াত ঢাকায় মুসল্লীদের স্রোতের সঙ্গে প্রবেশ করে ব্যাপক নাশকতা চালাতে পারে— এমন প্রতিবেদন সরকারের শীর্ষমহলে দাখিল করেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। এ আশঙ্কার কারণেই রবিবার দুপুর থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি ঢাকায় সতর্ক প্রহরীর ভূমিকায় থাকবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য রিপোর্টকে জানান, ১১ জানুয়ারি কিংবা ১২ জানুয়ারি ঢাকায় বিএনপি-জামায়াত সমাবেশ বা জমায়েতের চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগ প্রয়োজনে নিজেদের সমাবেশ স্থগিত করে প্রশাসনের পাশে থেকে সারা ঢাকায় সতর্ক অবস্থান নেবে। প্রশাসনও সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমণ্ডির কার্যালয়ে শনিবার সকালে যৌথসভায় এমন আলোচনা হয়েছে নেতারা জানান।
তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ঢাকায় ব্যাপক লোকসমাগমের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এ লক্ষ্যে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশে ব্যাপক ফেস্টুন ও পোস্টার লাগানোর কাজও চলছে পুরোদমে। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে ১১ জানুয়ারিতে বিএনপির কর্মকাণ্ডের ওপর।
আওয়ামী লীগের সমাবেশ ঘিরে শনিবার যৌথসভা হলেও বৈঠক শেষে দলটির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে কোনো কিছুই আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।
যৌথ সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগ নেতারা এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও ভেতরে ভেতরে বিএনপি-জামায়াতের কর্মসূচি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের কথা স্বীকার করেছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়ে শনিবার বিকেলে সভা করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন— আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ছাত্রলীগ সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম প্রমুখ।
সভায় জাহাঙ্গীর কবির নানক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ১২ জানুয়ারির জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনা দেন। এ ছাড়া ছাত্রলীগকে সদা জাগ্রত থাকারও পরামর্শ দেন নানক। যেকোনো সময় যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় ছাত্রলীগকে প্রস্তুত থাকতে বলেন তিনি।
জানা গেছে, বিএনপি যাতে ইজতেমার পর পরই ১১ জানুয়ারি ঢাকায় প্রবেশ করে কোনো ধরনের নাশকতা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্যই এমন প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।
বিএনপি-জামায়াতের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগ উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক।
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ইজতেমা এলাকা থেকে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন।’
নানক বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার বিরুদ্ধে দলীয় নেতাকর্মীদের জনগণের পাশে দাঁড়াতে বলেছি। বিএনপি-জামায়াত দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আমরা ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় প্রস্তুত আছি। পাশাপাশি ১২ তারিখের সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করার কথা ছিল। বিশ্ব ইজতেমার কারণে বৃহস্পতিবার রাতে তা পিছিয়ে ১২ জানুয়ারি পুনর্নির্ধারণ করা হয়।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, ঢাকায় ১১ কিংবা ১২ জানুয়ারি বিএনপিকে কোনোভাবেই জমায়েত বা নাশকতা করতে দেওয়া হবে না। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও সর্বোচ্চ সতর্কতার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকার নির্দেশনার বিষয়টি স্বীকার করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দলীয় কর্মসূচি নিয়ে ভাবছি। বিএনপি-জামায়াত নাশকতা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের প্রতিরোধ করবে— এমন নির্দেশনা তাদের দেওয়া হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির সমর্থকরা যাতে গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও অন্যান্য এলাকা থেকে ঢাকায় প্রবেশ করতে না পারে এ জন্য ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলার শীর্ষনেতা ও সংসদ সদস্যদেরও শনিবারের বৈঠক থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।