‘খালেদাকে দুই কম্বলেই থাকতে হবে’
গ্রেফতার হতে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কবে, কখন এমন দিনক্ষণ ঠিক না করা হলেও তাকে গ্রেফতার করার ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে- এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা।
তাদের মতে, অবরোধের নামে সারাদেশে নাশকতার ঘটনা অব্যাহত থাকলে এবং শিগগিরই গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয় ত্যাগ করে বাসায় না ফিরলে শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার। অবরোধ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সারাদেশে ঘটে যাওয়া নাশকতার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বড় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের আভাস পাওয়া গেছে।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। কর্মসূচির নামে নাশকতা বন্ধে সরকার সর্বোচ্চ কঠোর হবে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক মন্ত্রী ও শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতা সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে সরকারের ও দলের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে খালেদাকে জেলে নেওয়ার মতো সিদ্ধান্তের কথা আলোচনা হয়েছে। দুইজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ও তিনজন নেতা বৈঠকে নেওয়া এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
বৈঠকে উপস্থিত ওই সব নেতাদের কাছ থেকে এমন তথ্যও পাওয়া গেছে- বিএনপি চেয়ারপারসনকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেছেন, উনি (বেগম জিয়া) ভাল থাকতে চাচ্ছেন না। সরকারকে কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য করছেন—তবে তাই হবে। উনাকে (বেগম জিয়া) দুই কম্বলেই থাকতে হবে (সাধারণত জেলখানায় কয়েদিকে দুটি কম্বল সরবরাহ করা হয়ে থাকে)।
নেতারা জানান, এ ধরনের বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে শেখ হাসিনা পিছপা হবেন না বলে তাদের জানিয়েছেন। কবে নাগাদ এ সিদ্ধান্ত আসতে পারে- জানতে চাইলে সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা বলেন, আরও কিছু সময় দেওয়া হবে বিএনপিকে। অবরোধ কর্মসূচি কতটা দীর্ঘায়িত হয় সেটা পর্যবেক্ষণ করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
খালেদাকে গ্রেফতার করা হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব হবে কিনা- জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মন্ত্রী বলেন, গত কয়েক দিনের পরিস্থিতিতে বিএনপি কর্মীদের মধ্যে, এমনকি সাধারণ মানুষের ভেতরেও খালেদা জিয়া গ্রেফতার হতে পারেন এমন একটি আশঙ্কার কথা ঘুরেফিরে আলোচনায় আসছে। ফলে বিষয়টি অতি সাধারণ একটি ঘটনাই মনে করতে শুরু করছে সকলেই। সুতরাং খালেদা জিয়া গ্রেফতার হলেও এমন কোনো বৈরী পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ নেই। পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে পারে এমন কোনো শঙ্কা সরকারের নেই।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তার গুলশান কার্যালয়ে থাকার সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে এবং দল ঘোষিত অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখলে তাকে গ্রেফতার করা ছাড়া সরকারের হাতে কোনো উপায় থাকবে না। শেষ পর্যন্ত বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বাধ্য হবে সরকার। সরকারের উচ্চপর্যায়ে এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে সরকারের নীতি-নির্ধারণী সূত্রগুলো বলছে সরকার কত কঠোর হবে, সেই বিষয়টি বিএনপির ওপরই নির্ভর করছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ বলেন, অবরোধের নামে বিএনপির চলমান কর্মসূচিতে যে নাশকতার ঘটনা ঘটছে এগুলো বন্ধ করতে সরকারকে যত কঠোর হওয়া লাগে, ততই কঠোর হবে।
‘প্রয়োজনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হবে’- সরকারের শীর্ষ মহল থেকে এমন হুমকির বিষয়ে তার উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) তো আটকেই রাখা হয়েছে। তিনি কার্যত বন্দী। সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করা হয়নি। কিন্তু বাস্তবতা তো ভিন্ন। তিনি কার্যালয় থেকে বের হতে পারেন না। তাকে বের হতে দেওয়া হয় না। কাউকে সেখানে যেতেও দেওয়া হয় না।
দুদু বলেন, ‘দেশে আইনের শাসন নেই। এক ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারিতা চলছে। তাই তারা (ক্ষমতাসীনরা) যা ইচ্ছা তাই করছে। আন্দোলন চলছে। আন্দোলনের মাধ্যমেই গণতন্ত্রের দাবিসহ সবকিছু ফয়সালা করবে দেশের জনগণ।’